ইংরেজি ভাষা শিক্ষা খাতে আরও নম্বর বরাদ্দ করা যেতে পারে। কিন্তু করা হয়েছে উল্টো, অর্থাৎ ২০০ নম্বরের স্থলে ১৫০ করা হয়েছে। এখন আপনি কী করবেন? বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ইংরেজি আপনাকে শিখতেই হবে। আনুষ্ঠানিক শিক্ষা আপনাকে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার মতো ইংরেজি শেখাতে পারেনি। তাই বলে কি বসে থাকবেন? অবশ্যই না। আপনার চারপাশে প্রসারিত হয়ে আছে ইংরেজি শেখার ম্যাটেরিয়ালস, আপনি সেগুলো ব্যবহার করুন, ইংরেজি শিখুন। আপনি পড়ুন ইংরেজি পত্রিকা, সুযোগ পেলেই বন্ধু-বান্ধবদের সাথে ইংরেজি বলার চেষ্টা করুন। শিক্ষকগণ ক্লাসে ইংরেজি পড়ানোর সময় পাঠ্যবইকে ভিত্তি ধরে ব্যবহারিক ইংরেজি ক্লাস ব্যবহার করুন। তাতে আপনার ও আপনার শিক্ষার্থীদের দক্ষতা ও আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাবে।
আরও পড়ুন: ইংরেজি কেন শিখব কীভাবে শিখব ।। প্রথম পর্ব
শোনা-বলা-পড়া ও লেখা ভাষা শিক্ষার এ চার ধাপেই প্রশিক্ষণের বাড়তি বন্দোবস্ত ১২ বছর ধরেই বিভিন্ন মাত্রায় হতে পারে। দরকার যোগ্য প্রশিক্ষক গড়ার জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ। স্কুল ও কলেজের বিদ্যমান কাঠামোর মধ্যেই এ উদ্যোগ সুচারুরূপে বাস্তবায়ন করা সম্ভব। স্নাতক পর্যায়েই বাড়তি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা সম্ভব।
শ্রেণিকক্ষে ইংরেজি শেখানো যদি বাস্তবের মতো না হয়; তা হলে পরীক্ষায় পাস করাই হবে, সার্টিফিকেট অর্জিত হবে, ইংরেজি শেখা হবে না। শিক্ষার্থীরা ইংরেজি বাইরেই শিখবে, ইংরেজি শেখানোর কোচিং সেন্টারে ভর্তি হবে, আর আগ্রহ হারাবে শ্রেণিকক্ষের ইংরেজি পড়ানোতে। শ্রেণিকক্ষে যেদিন বাস্তবের মতো ইংরেজি পড়ানো শুরু হবে, সেদিন হয়তো শিক্ষার্থীরা শরীর ও মন নিয়ে শ্রেণিকক্ষে ফিরে আসবে, এখন আসে শুধু শরীর নিয়ে, মন থাকে অন্যত্র। কাজেই বাধ্যতামূলক বিষয় হিসেবে ইংরেজি পড়ছে শুধু পাস নম্বর পাওয়ার জন্য, ইংরেজি শিখে নিজে জীবনে কাজে লাগানোর জন্য নয়।
তুমি যদি একজন শিক্ষার্থী হয়ে থাক তাহলে তোমার ইংরেজি পাঠ্যবইটি ধীরে ধীরে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বহুবার পড়ে ফেলো। বইয়ে যে ধরনের অনুশীলনী আছে, সেগুলো করতে থাক। তোমার শ্রেণির বইটি বিশেষজ্ঞগণ তোমার উপযোগী করে শব্দভাণ্ডার, গ্রামার, তোমার বয়সের সাথে তাল মিলিয়ে বয়স উপযোগী বাক্যগঠন ও ধারণসমূহ দিয়ে বইয়ের বিভিন্ন চ্যাপ্টার ও লেসন গুলো তৈরি করেছেন। ইংরেজি তোমার জানতেই হবে এই মানসিকতা নিয়ে আগালে বই পড়ে মজা পাবে।
আরও পড়ুন: ইংরেজি কেন শিখব কীভাবে শিখব ।। দ্বিতীয় পর্ব
তোমরা যেটি কর; তা হচ্ছে পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য শুধু বেছে বেছে লেসন গুলো পড় এবং সেগুলোর ওপরই প্রশ্নোত্তর তৈরি কর। ফলে অস্পূর্ণ থেকে যায় তোমার ইংরেজি শেখার বিভিন্ন পদ্ধতি। কিন্তু পুরো বইটি যদি তুমি বেশ কয়েকবার পড়ে ফেলতে পার তাহলে ওখানকার সবকিছুই তোমার ইংরেজি শেখার জন্য কাজে লাগবে। আলাদা এক ধরনের আনন্দ পাবে, মজা পাবে যা অন্য অনেক কিছুতেই পাবে না। তুমি কি এই মজা পেতে চাও না? যে শিক্ষক ইংরেজি বই পড়াচ্ছেন তাকেও এই বিষয়গুলো চিন্তায় রাখতে হবে, অর্থাৎ নিজে মজা পাওয়ার জন্য, শিক্ষার্থীদের জীবনে প্রকৃতভাবে কাজে লাগানোর জন্য ইংরেজি পড়ালে, সেই ভাবে ক্লাসে লেসন দিলে শিক্ষার্থী ইংরেজি ঠিকই শিখবে এবং সাথে সাথে ভালো পাসও করবে। শুধু পরীক্ষায় পাসের জন্য ইংরেজি পড়লে বা পড়ালে, শিখলে এবং শেখালে পরীক্ষায় পাস করা যায়। কিন্তু ইংরেজি শেখা যায় না।
বিভিন্ন Tense অনুযায়ী বাক্য কীভাবে তৈরি করা হয়, কীভাবে প্রশ্নবোধক বাক্য তৈরি করতে হয়, কীভাবে সেগুলোর উত্তর দিতে হয় তা তোমার পাঠ্যবই থেকেই ভালোভাবে জেনে যাবে। পুরো বইয়ের এক্সারসাইজ গুলো করতে গিয়ে তুমি হয়তো অনেকগুলো এক্সারসাইজ একা করতে পারবে না, অনেকগুলো এক্সারসাইজ করার পর সন্দেহ থাকবে, হলো কী হলো না। তারপরেও একটি বা দুটো এক্সারসাইজ নিয়ে বসে থাকবে না। আগাতে থাকবে। একসময় দেখা যাবে যেসব বিষয়ে সন্দেহ ছিল তার অনেক উত্তর (সবগুলো না হলেও) তুমি পরবর্তী কোনো এক্সারসাইজ কিংবা লেসনে পেয়ে যাবে। এই ধরনের পাওয়া বা কষ্ট করে জানাটাই হচ্ছে আসল জানা। তুমি যে বহুকষ্ট, বহু পরিশ্রম করে একটি বিষয় জেনেছ, ঐটিই আসল জানা। আর এই বিষয়গুলো যদি তুমি তোমার গৃহশিক্ষক, প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে কর তার অর্থ হচ্ছে তুমি বিষয়গুলো জানার জন্য খুব কষ্ট করছ না অর্থাৎ নিজে এনগেজড হচ্ছ না।
মনে রাখবে- নিজে এনগেজড না হলে, নিজে ব্যস্ত না থাকলে কোনো বিষয় বা ভাষাকে আয়ত্তে আনা যায় না। ভাষা শিক্ষা তোমার নিজের বিষয়। শিক্ষকের বিষয় নয়। অনেকেই বলে থাকে যে, অমুক শিক্ষক গ্রামার ভালোভাবে বুঝিয়ে দেন, কিন্তু তুমি নিজের ইংরেজিতে সেই গ্রামার ব্যবহার করতে পারছ কিনা সেটিই হচ্ছে আসল বিষয়। তুমি নিজে যদি ব্যবহার করতে না পার তাহলে যত ভালোভাবেই বাংলায় বুঝিয়ে দেওয়া হোক না কেন ইংরেজি শেখার বিষয়টি তাতে খুব একটা আগায় না।
যেসব বিষয পড়ছ এবং পড়ার ওপর এক্সারসাইজ করছ সেগুলো সম্ভব হলে দুজন বন্ধু মিলে মুখে মুখে আলোচনা কর। সহপাঠী পাওয়া না গেলে নিজেই মুখে মুখে বলার অভ্যাস কর। এতে তোমার স্পিকিং পাওয়ার বেড়ে যাবে অনেক। তোমার আত্মবিশ্বাস হবে আকাশসম।
চলবে....
লেখক: শিক্ষা বিশেষজ্ঞ ও গবেষক, ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচিতে কর্মরত