বাংলাদেশে বাংলা শিক্ষাক্রমে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হয় জানুয়ারি মাসে কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে হয় সেপ্টেম্বরে। করোনার মহামারীতে অন্যান্য দেশের মতোই যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাব্যবস্থাও ভীষণ হুমকির মধ্যে পড়েছে। আমার অবস্থান নিউইয়র্কে। এই সিটিতে ১০ মার্চ থেকেই পর্যায়ক্রমে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। নিউইয়র্ক শিক্ষা বিভাগের হিসাব মতে, ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষে প্রি-কে থেকে ১২ গ্রেড এ মোট ১১ লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে। যাদের জন্য মোট ৭৫ হাজার শিক্ষক রয়েছেন। করোনা এদের সবার সার্বিক জীবন যাত্রা একেবারে ঘরবন্ধি করে ফেলেছে। এবং কবে নাগাদ স্বাভাবিক হবে এখনও তার কোনো আভাস নেই। যার কারণে এ বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা ভীষণ শঙ্কার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
করোনায় কি সংখ্যক শিক্ষাথীর আক্রান্ত ও প্রাণহানী হয়েছে তার কোন হিসাব না থাকলেও নিউইয়ার্ক শিক্ষা বিভাগের হিসাব মতে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত তাদের ৬৩ জন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এদিকে নিউইয়ার্ক সিটি গভর্ণর লকডাউন এর মেয়াদ ১৫ মে পর্যন্ত বর্ধিত করেছেন। তাছাড়া জুনের মাঝামাঝি সময়ে এখানে মৌসুমী ছুটি শুরু হয়ে যায় যায়, সেপ্টেম্বরে গিয়ে শেষ হয়। তার মানে ১৫ মে যদি স্কুল আবার শুরু হয় তবে তা আবার ১ মাসের মধ্যেই ছুটি হয়ে যাবে। এদিকে চলতি শিক্ষাবর্ষে আর স্কুল খোলা বা না খোলা নিয়ে সিটি মেয়র এবং গর্ভনর এর মধ্যে দোটানা শুরু হয়েছে।
এছাড়াও, করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতা দেখে, সরকারিভাবে স্কুল বন্ধের আগেই অনেক অভিভাবক তাদের ছেলে- মেয়েদের স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দেয়। যেমন আমার ছেলে এ বছরই প্রি-কে ক্লাসে যাওয়া শুরু করেছে। পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে বুঝতে পেরে নিজেই ছেলেকে স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দেই এবং তার এক সপ্তাহ পর নিউইর্য়কের সিটি মেয়র সব পাবলিক স্কুল বন্ধ ঘোষণা করে। তার মানে শিক্ষাবর্ষের প্রায় অর্ধেকটা সময় স্কুলে না গিয়েই পার করে দিতে হবে। যদিও বেশীর ভাগ স্কুল ও কলেজ আন-লাইনের মাধ্যমে তাদের ক্লাশ চালিয়ে যাচ্ছে। প্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের সহজ লভ্যতার কারণে ঘরে বসেই ছেলে-মেয়েরা তাদের লেখা-পড়া চালিয়ে গেলেও তার মান কতোটা যথাযথ হবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। কারণ, আন-লাইনে পাঠদানের জন্য কোন সমন্বিত মাধ্যম না থাকায়, Zoom, Sïpe, team viewer এর মত বিভিন্ন অনিরাপদ অ্যাপ এর মাধ্যমে বিভিন্ন স্কুল ও কলেজ পাঠদান করে যাচ্ছে।
ইতিমধ্যে জানা গেছে যে, হ্যাকাররা এই অ্যাপ হ্যাক করে বিভিন্ন আপত্তিকর ভিডিও ও ছবি পাঠিয়ে থাকে এবং কল দিয়ে নানা রকম বিরক্ত করে থাকে। নিরাপত্তাজনিত কারণে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও রাজনীতিবিদদের এই সকল অ্যাপ ব্যবহারে নিষেধ করা হলেও ছেলে-মেয়েদের শিক্ষার ক্ষেত্রে তা ব্যবহৃত হচ্ছে। আবার এসকল অ্যাপ ব্যাবহারেও শিক্ষকদের মধ্যে সীমাব্ধতা রয়েছে। নবম গ্রেডের ছাত্রী ফাইয়েজা রোজা জুম এ্যাপ এর মাধ্যমে ক্লাস করে।
ফাইজার মতে, ’টিচার নিজেই এ্যাপ ব্যবহার করতে পারে না। অনেক সময় আমরাই বলে দেই কি করতে হবে,। আর এ হলো চলমান শিক্ষা ব্যবস্থা।
বিশেষ ঘোষণা: যুক্তরাষ্ট্রের পড়াশোনা নিয়ে ধারাবাহিকভাবে লিখবেন দৈনিক শিক্ষার যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি মোকলেচুর রহমান। আজ প্রথম পর্ব।