দারুল ইহসানের সব গ্রুপের সনদ বৈধতা পাচ্ছে! - দৈনিকশিক্ষা

দারুল ইহসানের সব গ্রুপের সনদ বৈধতা পাচ্ছে!

রাকিব উদ্দিন |

আদালতের রায়ে বন্ধ হওয়া বহুল বিতর্কিত ‘দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়’র ২০১৬ সালের ১৩ এপ্রিলের আগে নেয়া সব সনদের বৈধতা দিতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পাঁচ গ্রুপে বিভক্ত দারুলের সনদের বৈধতা দেয়ার লক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সোমবার সকাল ১১টায় এক সভা আহ্বান করা হয়েছে। সভায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি), মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) ছাড়াও বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দারুণ ইহসানের সব পক্ষের সনদের আনুষ্ঠানিক বৈধতা দেয়ার আগেই কিছু সনদের স্কীকৃতি দেয়া হয়েছে। খোদ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশি’র এক শ্রেণীর কর্মকর্তা এই অপকর্ম করে যাচ্ছেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মাউশি অধিদফতরের উপপরিচালক (মাধ্যমিক) একেএম মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আদালতের রায়ে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন গ্রুপের সনদ বাতিল করা হয়নি। এজন্য রায়ের আগে যারা সনদ নিয়েছেন, তাদের সনদের বৈধতার বিষয়টি সরকারের এখতিয়ার। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্যই মন্ত্রণালয়ে সভা আহ্বান করা হয়েছে।’

দারুলের কতটি সনদ বৈধতা পেতে পারে জানতে চাইলে উপপরিচালক বলেন, ‘এর কোনো হিসাব নেই। তারা হাজার হাজার সনদ দিয়েছে। দারুলের সনদ সম্পর্কে আমাদের কাছে সঠিক তথ্য নেই। বিভিন্ন পক্ষ যে যেভাবে পারে সনদ দিয়েছে।’ গত ১ নভেম্বর মাউশি মহাপরিচালক বরাবর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুসরাত জাহান বানু স্বাক্ষরিত এক আদেশে বলা হয়, ‘পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলাধীন নওমালা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে আদালতের (২০১৬ সালের ১৩ এপ্রিল) তারিখের আদেশের আগে যোগদানকারী এবং ২০০৮ সালের বিএড সনদ অর্জনকারী কেএম নাসির উদ্দীনকে এমপিওভুক্ত করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’

এই নির্দেশনার পর মাউশি অধিদফতরের কর্মকর্তারাও দারুলের সনদের বৈধতা দেয়ার কাজ শুরু করেছে। যদিও মন্ত্রণালয়ের একাধিক পরিপত্রে বলা হয়েছে, ‘এমপিওভুক্ত ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের অবশ্যই সরকারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএড কোর্স করতে হবে।’ এখন শিক্ষা মন্ত্রণালয় নিজেই এই শর্ত লঙ্ঘন করছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবর পাঠানো মাউশির একটি চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলাধীন উত্তর রমজানপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে ২০১৫ সালের ২৫ মে যোগদান করেন। তিনি দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক শাখা (ঢাকা) থেকে ২০০৮ সালে বিএড সনদ অর্জন করেছেন। হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক দারুল ইহুসান সনদ সংক্রান্ত (২০১৬ সালের ১৩ এপ্রিল) চূড়ান্ত আদেশের পূর্বেই তিনি সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এমতাবস্থায়, উল্লিখিত বিষয়ের আলোকে নিয়োগকৃত সহকারী প্রধান শিক্ষক সিরাজুল হকের এমপিওভুক্তির বিষয়ে পরবর্তী সদয় নির্দেশনা কামনা করে তথ্যাদি প্রেরণা করা হলো।’

মন্ত্রণালয় ও মাউশির এমপিও শাখার কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, ঢালাওভাবে দারুল ইহসানের সব পক্ষের সনদের বৈধা দেয়া হলে এমপিওভুক্তি এবং সরকারি বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে। কারণ কাগজ-কলমে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম গুটিয়ে গেলেও পুরনো তারিখে এখনও সনদ বিক্রি করছেন কয়েকটি গ্রুপ। এই ধরনের সনদধারী ব্যক্তিরা নানাভাবে সরকারি সুবিধা পাওয়ার তৎপরতায় লিপ্ত রয়েছেন।

এদিকে রাজধানীর ধানমন্ডির ৯/এ সড়কের ২১ নম্বর বাড়িতে অবস্থিত ‘দারুল ইহসান ট্রাস্ট’র সচিব মাহবুব উল আলম তাদের ক্যাম্পাস থেকে প্রদান করা সব সনদের বৈধতা চেয়ে প্রজ্ঞাপন জারির জন্য গত ২৭ সেপ্টেম্বর আবেদন করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। এতে তিনি প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০১৬ সালের এপ্রিল পর্যন্ত পাসকৃত শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেটের (সনদ) বৈধতা প্রদানের দাবি জানান।
জোনা গেছে, দারুলের পাঁচটি গ্রুপের মধ্যে ২০১৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি দারুল ইহসানের তিনটি পক্ষের ১০৪টি ক্যাম্পাসকে অবৈধ ঘোষণা করে এগুলো বন্ধ করতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের চিঠি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। অথচ এর আগে ৩৬ জেলার ১৩৫টি অবৈধ ক্যাম্পাস গুঁড়িয়ে দিতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।

‘দারুল ইহসান ট্রাস্ট’র সচিব মাহবুব উল আলম চিঠিতে আরও বলেন, ‘দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের ধানমন্ডির আবাসিক এলাকার ৯/এ সড়কের ২১ নং বাড়ির ক্যাম্পাসটি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কর্তৃক অনুমোদনপ্রাপ্ত এবং এই বিশ্ববিদ্যালয় হতে পাসকৃত শিক্ষার্থীরা ১৯৯৭, ২০০২ ও ২০০৩ সালে সমাবর্তনের মাধ্যমে মূল সার্টিফিকেট গ্রহণ করে সরকারি/বেসরকারি বহু প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত অবস্থায় আছে।’ অন্য পক্ষ এভাবে নিজেদের বৈধ দাবি করে বিভিন্ন সময়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন।

মাউশির তথ্যানুযায়ী, সারাদেশে মোট ৩২ হাজার নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসায় একটি করে লাইব্রেরিয়ানের পদ রয়েছে। এসব পদে প্রায় ১৩ হাজার নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিই দারুল ইহসানের সনদধারী।
১৯৮৯ সালে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৩ সালের ১৯ আগস্ট প্রতিষ্ঠানটি সরকারের অনুমোদন পায়। এরপর সোসাইটি রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট-১৯৬০ অধীনে প্রতিষ্ঠানটিকে রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেয়া হয়। এরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টিদের মধ্যে দুটি গ্রুপ সৃষ্টি হয়। তাদের মধ্যে শুরু হয় নানা ধরনের বিবাদ। এ সুযোগে অন্য আরও দু/তিনটি অংশের আত্মপ্রকাশ ঘটে। তারা নিজেদের পছন্দমতো উপাচার্য বসিয়ে সনদ বাণিজ্যে লিপ্ত হয়। বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে তারা নিজেদের বৈধ দাবি করে অন্য ট্রাস্টিদের বিরুদ্ধে অবৈধ ক্যাম্পাস ও সনদ বাণিজ্যের অভিযোগ করতে থাকেন। একপক্ষ অন্য গ্রুপের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ইউজিসিকে আহ্বান জানান।

সৌজন্যে: দৈনিক সংবাদ

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0069489479064941