নুসরাত জাহান রাফির জবানবন্দির ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়ানোর মামলায় গ্রেফতার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে ঢাকার শাহবাগ থানায় ফেনীর সোনাগাজী থানা পুলিশের প্রতিনিধিদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
সোমবার দুপুরের আগেই তাকে বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হবে বলে শাহবাগ থানার পরিদর্শক অপারেশনস মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন। সাইবার ট্রাইব্যুনাল পরোয়ানা জারির ২০ দিন পর রোববার বিকালে ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেমকে ঢাকার হাইকোর্ট এলাকা থেকে গ্রেফতার করার কথা জানায় শাহবাগ থানা পুলিশ। আদালত থেকে ওই গ্রেফতারি পরোয়ানা যেহেতু সোনাগাজী থানায় পাঠানো হয়েছিল, সেহেতু সোমবার সকালে তাদের হাতেই তুলে দেয়া হয় পরিদর্শক মোয়াজ্জেমকে।
পরিদর্শক মাহবুবুর রহমান বলেন, “সোনাগাজী থানা পুলিশের একটি দল গতরাতেই ঢাকা এসেছে। আজ সকালে আমরা তাদের কাছে হস্তান্তর করে দিয়েছি। তারাই মোয়াজ্জেম হোসেনকে আদালতে হাজির করবে।”
ফেনীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত গত মার্চ মাসে তার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ করলে ওসি মোয়াজ্জেম তাকে থানায় ডেকে জবানবন্দি নিয়েছিলেন। তার কয়েক দিনের মাথায় নুসরাতের গায়ে অগ্নিসংযোগ করা হলে সারাদেশে আলোচনা শুরু হয়। তখন ওই জবানবন্দির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুসরাতের মৃত্যু হলে গত ১৫ এপ্রিল ওসি মোয়াজ্জেমকে আসামি করে ঢাকায় বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা ওই মামলায় অভিযোগ করা হয়, মোয়াজ্জেম বেআইনিভাবে মোবাইল ফোনে নুসরাতের জবানবন্দির ভিডিও করেছেন এবং তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়েছেন।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ওই অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার কথা জানালে বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মাদ আস সামছ জগলুল হোসেন গত ২৭ মে মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন।
এদিকে নুসরাতের মৃত্যুর পর ওসি মোয়াজ্জেমকে প্রথমে সোনাগাজী থানা থেকে প্রত্যাহার করে রংপুর রেঞ্জে পাঠানো হয়। পরে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় পুলিশ বাহিনী থেকে। কিন্তু আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা দিলে তা তামিল করা নিয়ে ফেনী ও রংপুর পুলিশের মধ্যে বেশ কয়েক দিন ঠেলাঠেলি চলে। এই পরিস্থিতিতে সংবাদমাধ্যমে পরিদর্শক মোয়াজ্জেমের লাপাত্তা হয়ে যাওয়ার খবর আসে। ফলে পুলিশ বাহিনী তাদের কর্মকর্তা মোয়াজ্জেমকে গ্রেফতারে আদৌ আন্তরিক কি না- সেই প্রশ্ন তোলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ।
ঈদের আগে মোয়াজ্জেম হোসেনের একটি আগাম জামিনের আবেদন হাইকোর্টে জমা পড়লেও সেই শুনানি তখন হয়নি। ফলে আদালতেও তাকে দেখা যায়নি।
সুপ্রিমকোর্টের অবকাশ শেষে রোববার আদালত খুললে হাইকোর্টের নিয়মিত বেঞ্চে নতুন করে আবেদন করেন এই পুলিশ পরিদর্শক। সেখান থেকে ফেরার সময়ই পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
মোয়াজ্জেমের আইনজীবী সালমা সুলতানা জানান, আগাম জামিনের ওই আবেদনের শুনানি হওয়ার কথা ছিল সোমবার। কিন্তু তার আগেই যেহেতু পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে, তাকে নিম্ন আদালতের কাছেই জামিন চাইতে হবে।
সোনাগাজী সার্কেলের এএসপি সাইকুল আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, “আমাদের অফিসার শাহবাগ থানায় আছেন। তারাই মোয়াজ্জেম হোসেনকে সাইবার ট্রাইব্যুনালে নিয়ে যাবেন।”