মুক্তিযোদ্ধার ভুয়া সনদ দেখিয়ে তিনি সরকারি চাকরিতে সুবিধা নিয়েছিলেন। বিএনপি-জামাত জমানায় বান্দরবানের জেলা প্রশাসকসহ সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরি করেছেন। কিন্তু ভুয়া সনদের বিষয়টি ধরা পড়ে যায় এক সময়। বলছিলাম দাপুটে ডিসি শেখ আলাউদ্দিনের কথা। সেই শেখ আলাউদ্দিনই এখন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক। ইংরেজি বিভাগের প্রধানও! দৈনিক শিক্ষার অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে। আর নৈতিক স্খলনে অভিযুক্ত এক ব্যক্তিকে শিক্ষকতার মহান পেশায় নিযুক্ত হওয়ার সুযোগ দেয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বাংলাদেশে ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা।শিক্ষার্থীরা ভয়ে নাম প্রকাশ করতে চান না, কিন্তু দৈনিক শিক্ষার সাথে একান্তে বলেছেন অনেক কথা। আর প্রবীণ শিক্ষকদের মতে, জাতির সাথে প্রতারণাকারীকে শিক্ষকতার সুযোগ দিয়ে এ মহান পেশাকে কলুষিত করেছে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি। এর অবসান হওয়া জরুরি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবরে বাংলাদেশ সরকারের উপসচিব থাকা অবস্থায় খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটিতে ক্লাস নিতেন শেখ আলাউদ্দিন। তিনি ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে খণ্ডকালীন শিক্ষক থাকা অবস্থায় সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি বাগান। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে তাকে ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব দেয়া হয় যা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) র্নিধারিত শর্তের পরিপন্থি।
শেখ আলাউদ্দিন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটিতে যোগদান করার আগে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে ছিলেন। সর্বশেষ উপসচিব ছিলেন তিনি। মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে সনদ দেখানোর অভিযোগে তাকে ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে ওএসডি করা হয়। ওই বছরের ২০ জুলাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে সনদ নেয়ার অভিযোগে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয় এবং তার মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল করা হয়। তবে, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বরং পদোন্নতি দিয়ে যাচ্ছেন।
মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে সনদ নেয়া একজন সাবেক সরকারি কর্মকর্তা কোনোভাবেই শিক্ষকতার মতো একটি মহান পেশায় থাকতে পারেন না বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির একজন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, সনদ জাল করা অন্যতম জঘন্য অপরাধ। তিনি জাল সনদ জোগাড় করে একজন মুক্তিযোদ্ধা সেজেছিলেন। যা শহীদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে রাজাকারী। আর এ ধরনের ছদ্মবেশী প্রতারক এখন আমাদের শিক্ষক! বিষয়টি আগে জানতাম না। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় কি শিক্ষার্থীদের প্রতারণা শেখাতে চাচ্ছে?! প্রশ্ন তোলেন এ শিক্ষার্থী।
জানা যায়, ফৌজদারি আইনের ৪১৬ ধারা অনুযায়ী, মুক্তিযোদ্ধা না হয়ে মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় দিলে তা অপরাধ। এ ছাড়া মিথ্যা তথ্য দেওয়ার জন্য তিন বছর জেল এবং মুক্তিযোদ্ধার ভুয়া সনদ দেখিয়ে ভাতাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিলে সাত বছর পর্যন্ত জেল হওয়ার কথা।
অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধা না হওয়া সত্ত্বেও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সনদ নেওয়ায় কর্মকর্তাদের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ১৯৮৫ অনুযায়ী, অসদাচরণের অভিযোগে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির ২৪ নভেম্বর একটি জাতীয় দৈনিককে বলেন, সনদ বাতিল কোনো শাস্তি নয়। আর মিথ্যা তথ্য দিয়ে সনদ নেওয়া তো আরও বড় অপরাধ। যাঁরা জালিয়াতি করে সনদ নিয়েছেন, যাঁরা মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও ভাতা নিয়েছেন, সুবিধা নিয়েছেন তাঁদের প্রত্যেককে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। যে মুক্তিযুদ্ধ কমান্ডার সুপারিশ করেছেন, যে কর্মকর্তা গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শেখ আলাউদ্দিন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে টেলিফোনে জানান, প্রায় দশ বছর ধরে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করছেন তিনি। জাল মুক্তিযোদ্ধা সনদের দায়ে ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে তাকে শোকজ করার বিষয়টিও নিশ্চিত করেন তিনি। তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে সরকারি চাকরিতে থাকা অবস্থা থেকেই বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়টির জনসংযোগ বিভাগের প্রধান সোহেল আহসান নিপুর কাছে মতামত জানতে চেয়েও পাওয়া যায়নি।