সরকার জাতির বৃহত্তর স্বার্থ মাথায় রেখে কোনো মহামারি করোনা বা তীব্র দাবদাহ বা অতিবৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিদ্যালয়ে বন্ধ বা খোলা রাখবেন, সেটা সরকারের এখতিয়ার। এ ব্যাপারে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত একজন কর্মচারী হিসেবে সরকারের তথা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মানতে আমরা বাধ্য।
তবে প্রজাতন্ত্রের অন্যান্য কর্মচারীদের ন্যায় শিক্ষা বিভাগে কর্মরত কর্মচারী হিসেবে আমরাও সমান তথা একই রকম সুবিধা লাভের অধিকার সংরক্ষণ করি। অর্থাৎ অন্যরা যেমন সপ্তাহে দুই দিন, শুক্র ও শনিবার, ছুটি ভোগ করেন আমাদেরও একইভাবে দুই দিন ছুটি ভোগের অধিকার রয়েছে।
বাংলাদেশের বিচার বিভাগ এবং শিক্ষা বিভাগ যেহেতু ভ্যাকেশন ডিপার্টমেন্ট হিসেবে বিবেচিত সেহেতু বিচার বিভাগের ন্যায় শিক্ষা বিভাগের গেজেটভুক্ত সব ছুটিও যথা নিয়মে ভোগ করার সুযোগ ও যথারীতি থাকতে হবে। আর যদি সেটা না করা হয় অর্থাৎ ভ্যাকেশন ডিপার্টমেন্ট হিসেবে আমাদের নির্ধারিত গেজেটভুক্ত ছুটি, যেমন-গ্রীষ্মকালীন অবকাশ, শীতকালীন অবকাশ, মাহে রমজান ও দুই ঈদের এবং দুর্গাপূজার ছুটি ইত্যাদি বাতিল করে ক্লাস পরিচালনাসহ অন্যান্য দায়িত্ব পালনে বাধ্য করা হয়; তবে অবশ্যই আমাদেরকে (শিক্ষা বিভাগ) নন ভ্যাকেশন ডিপার্টমেন্ট হিসেবে ঘোষণা করতে হবে!
উল্লেখ্য, ভ্যাকেশন ডিপার্টমেন্ট এর অন্তর্ভুক্ত থাকায় শিক্ষা বিভাগে কর্মরত শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা পেনশনার হিসেবে আর্থিক সুবিধা অনেক কম পেয়ে থাকেন। বিশেষ করে শ্রান্তি বিনোদন ছুটি ভোগ ও অন্যান্য কয়েকটি ক্ষেত্রে আর্থিক সুবিধা আশ্চর্যজনকভাবে কম হয়ে থাকে। এটা একজন শিক্ষক-কর্মকর্তা বা কর্মচারী অবসরে যাওয়ার সময়েই সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারেন।
প্রকৃত অর্থে রাষ্ট্রের পলিসির বাইরে আমরা কোনো কিছু দাবি যেমন করতে পারি না, করছি না এবং করবোও না। কিন্তু আমাদের বিদ্যমান অধিকার সংরক্ষণের বিষয়টি তো আমাদের দেখতে হবে, তাই না?
আমাদেরকে ভ্যাকেশন ডিপার্টমেন্টের তকমাটা দিয়ে রাখবেন আবার ভ্যাকেশন ভোগ করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করবেন বারবার। দেশের জনগণের একটি অংশ প্রকৃত তথ্য না জেনে বা আমাদেরকে নিয়ে ট্রল করবেন, আমাদের সম্মান হানি হয় এমন কথাবার্তা বলে আমাদের সামাজিকভাবে হেয় করতে থাকবেন, অবসরের সময় আমরা আর্থিক সুবিধা কম পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবো-এটা তো হতে পারে না।
সুতরাং সাপ্তাহিক ছুটির ব্যাপারে অন্য বিভাগের ন্যায় শিক্ষা বিভাগের ছুটির সমতা নিশ্চিত করতে হবে অর্থাৎ শুক্র ও শনিবারের ছুটি নিরবচ্ছিন্নভাবে নিশ্চিত করতে হবে। ভ্যাকেশন ডিপার্টমেন্ট হিসেবে আমাদের প্রাপ্য গেজেটভুক্ত ছুটি বাতিল করলে ভ্যাকেশন ডিপার্টমেন্টের তকমা তুলে দিয়ে নন-ভ্যাকেশন ডিপার্টমেন্ট ঘোষণা করতে হবে।
লেখক: সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি (বাসমাশিস), খুলনা