ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় দেবগ্রাম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসি ফরম পূরণে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। জানা যায় নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীদের ফরম পূরণে আদায় করা হয় দ্বিগুণ টাকা। পাশাপাশি মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে অকৃতকার্য ছাত্রছাত্রীদের ফরম পূরণের সুযোগ দেয়া হয়। এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে অতিরিক্ত টাকা ফেরত দেয়ার নির্দেশ দিয়ে চিঠি দেয়।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৬৮ জন ছাত্রছাত্রী নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশ নেয়। এরমধ্যে ৭০ জন সকল বিষয়ে উত্তীর্ণ হয়। কিন্তু ফরম পূরণ করা হয় ১৩৭ ছাত্রছাত্রীর। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিশেষ বিবেচনার নামে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে একাধিক বিষয়ে ফেল করা ৬৭ জন ছাত্রছাত্রীর ফরম পূরণ করে। আর যে সকল ছাত্রছাত্রী নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় তাদের কাছ থেকেও নেয়া বোর্ড নির্ধারিত ফি’র দ্বিগুণ টাকা। অভিভবাকদের অভিযোগ, অতিরিক্ত টাকা আদায় করতে নির্বাচনী পরীক্ষায় কম পাশ দেখানো হয়। তবে এসব ফি আদায়ের কোন রশিদ দেয়নি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
দেবগ্রাম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী সীমান্তা আক্তার তিথি জানায়, নির্বাচনী পরীক্ষার পর শ্রেণি শিক্ষক জানায় সে (তিথি) ৪ বিষয়ে ফেল করেছে। পরে তার কাছ থেকে ৪ হাজার ৫শ টাকা নিয়ে ফরম পূরণ করেছে। একই অভিযোগ শাম্মি আক্তারের। সে মানবিক বিভাগের ছাত্রী। তাকেও জানানো হয় সে ৪ বিষয়ে ফেল করেছে। পরে সেও ৪শ হাজার ৫শ টাকা দিয়ে ফরম পূরণ করে।
শাম্মি আক্তার জানায়, আমার ৪ বিষয়ে ফেল করার কথা নয়। আমার পরীক্ষা ভাল হয়েছে। আমি বার বার বলা সত্ত্বেও আমি কোন বিষয়ে ফেল করেছি তা জানানো হয়নি। আরেক ছাত্র মাহবাবুব খন্দকার জানায় সে নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। ফরম পূরণের জন্য তার কাছ থেকে ৩ হাজার ৫শ টাকা নেয়া হয়। বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র শারিফ শাহরিয়ার জানায় নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া সত্ত্বেও ফরম পূরণ করতে ৩ হাজার ৫শ টাকা দিতে হয়েছে। তবে তাকে টাকা নেয়ার কোন রশিদ দেয়নি বলে সে জানায়।
দেবগ্রাম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের এক পরীক্ষার্থীর অভিভাবক নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করার জন্য কৌশলে পাশ ছাত্রকে ফেল দেখায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরে তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে ফরম পূরণ করে। তিনি বলেন, তার মেয়ে নির্বাচনী পরীক্ষায় ভাল পরীক্ষা দিয়েছে। কিন্তু বিদ্যালয় থেকে জানানো হয় ১ বিষয়ে ফেল করেছে। পরে ৪শ ৫শ টাকা দিয়ে তিনি মেয়ের ফরম পূরণ করেছেন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী একজন নিয়মিত পরীক্ষার্থীর ফরম পূরণে সর্বোচ্চ ১৮ শ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে শিক্ষা বোর্ড। বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী পরীক্ষার ফরম পূরণ ফি প্রত্যেক বিষয়ে ৮০ টাকা, ব্যবহারিক পরীক্ষার ফি ৩০, একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট ফি ৩৫, মূল সনদ ফি ১শ, বয়েজ স্কাউট ও গার্ল গাইড ফি ১৫, জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ফি ৫ টাকা এবং কেন্দ্র ফি ৩শ টাকা। সব মিলিয়ে ১৭ টাকার বেশি হবে না।
এব্যাপারে জানাতে চাইলে দেবগ্রাম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহফুজুর রহমান অতিরিক্ত টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, সবার কাছ থেকে বেশি টাকা নেয়া হয়নি। অনেক ছাত্রছাত্রীকে কম টাকা নিয়েও ফরম পূরণ করা হয়েছে। এলাকার চাপে কিছু অকৃতকার্য ছাত্রছাত্রীদের ফরম পূরণ করেছেন বলেন তিনি জানান।
ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক অলক চক্রবর্তী জানান, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্তে ফরম পূরণের জন্য ৩ হাজার ৫শ টাকা ধার্য্য করা হয়। তবে সবার কাছ থেকে ৩ হাজার ৫শ টাকা নেয়া হয়নি।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য পৌর কাউন্সিলর বাবুল মিয়া জানান, তিনি শুনেছেন ৮৫ জন নির্বাচনী পরীক্ষায় পাশ করেছে। পরে অভিভাবকদের চাপে ২ থেকে ৩ বিষয়ে ফেল করা কয়েকজনের ফরম পূরণ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দেবগ্রাম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব সফি উদ্দিন বলেন, প্রধান শিক্ষককে বলেছিলাম বোর্ডের নির্ধারিত ফি-তে ফরম পূরণ করার জন্য। কিন্তু প্রধান শিক্ষক আমার কথা শোনেননি। প্রধান শিক্ষকের অনিয়মের জন্য আমি বহু আগেই পদত্যাগ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বিদ্যালয়ের ক্ষতির চিন্তা করে করিনি। নির্বাচনী পরীক্ষায় ৭০ জন উত্তীর্ণ হয়েছিল বলে তিনি জানান।
আখাউড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, বোর্ড নির্ধারিত ফি-তে ফরম পূরণ না করে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করায় উপজেলার ১৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৫টি মাদ্রাসা প্রধানকে আদায়কৃত অতিরিক্ত অর্থ ফেরত দিতে চিঠি দেয়া হয়েছে। আগামী ২৮ নভেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে সভা ডাকা হয়েছে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের এসএসপি পরীক্ষার্থীদের তালিকা ও ফি গ্রহণের কাগজপত্র নিয়ে ওই সভায় উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।