‘আগামী দিনে কোচিং সেন্টার থাকবে না। গাইড বইও থাকবে না। সেই দিন খুব কাছে- যেদিন শিক্ষা নিয়ে বাণিজ্য করা অবৈধ কোচিং সেন্টারগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। শ্রদ্ধেয় শিক্ষকরাই শিক্ষার্থীদের গাইড হবেন।’ ঢাকা মহানগরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গঠিত ‘সততা সংঘের’ ছাত্র-ছাত্রীদের এক সমাবেশে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে তিনি দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য শিক্ষার্থীদের শপথ পড়ানোর পর নিজেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেন।
দুদক চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে ‘দুর্নীতি প্রতিরোধ সপ্তাহ-২০১৭’ পালনের অংশ হিসেবে গতকাল সোমবার (২৭ মার্চ) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এ সমাবেশ হয়। সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ, কমিশনার (তদন্ত) এএফএম আমিনুল ইসলাম, দুদক সচিব আবু মো. মোস্তফা কামাল, মহাপরিচালক ড. মো. শামসুল আরেফিন। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বক্তব্য রাখেন।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রতি বছর ২৬ মার্চ থেকে ১ প্রপ্রিল পর্যন্ত দুর্নীতি প্রতিরোধ সপ্তাহ পালন করে আসছে দুদক। ২০১১ সালে এ কর্মসূচি প্রথম পালিত হয়। এবারের দুর্নীতি সপ্তাহের প্রতিপাদ্য, ‘দুর্নীতি হলে শেষ, নিজে বাঁচব , বাঁচবে দেশ’।
সমাবেশে কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা আমাদের সন্তানদের (শিক্ষার্থী) আপনাদের নিকট আমানত রেখেছি। আমানতের খেয়ানত করবেন না। তাদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলুন।’ অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের জিপিও ৫ ও কোচিং সেন্টারের দিকে ঠেলে দেবেন না।’
দুদক চেয়ারম্যান শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও মাদক- এই তিন সমস্যা থেকে আমরা তোমাদের মুক্ত করতে চাই। যারা সন্ত্রাস করছে, মাদক ব্যবসা করছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। সমাজের এই ব্যাধি দূর করতে আমরা নিরন্তর যুদ্ধ করে যাব।’ তিনি বলেন, ‘আজকের শিক্ষার্থীরাই আগামী দিনে রাষ্ট্র চালাবে। এরাই একদিন বিশ্বে নেতৃত্ব দিবে। এ যুগের শিক্ষার্থীদের তাই জ্ঞান অর্জন করতে হবে।’ এখন থেকেই দুর্নীতি-অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে তাদের পরামর্শ দেন তিনি।
সততা সংঘের সমাবেশে দুদক কমিশনার ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘দুর্নীতি দমনে সম্মিলিত প্রয়াস জরুরি। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জন করতে হলে মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। সাত শতাংশের উপরে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হবে।’
কমিশনার এএফএম আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ভালো মানুষ, ভালো দেশ গড়ে তুলতে হলে এখন থেকেই শিক্ষার্থীদের সততা চর্চা করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ মাদকে ও জঙ্গিবাদে ব্যবহার করা হচ্ছে।’
সমাবেশে উদয়ন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র দেবাশীষ বিশ্বাস বলেন, ‘দুর্নীতি একটি দেশের অগ্রযাত্রায় প্রাণঘাতী রোগ হিসেবে কাজ করে।’ শিক্ষার্থী মুনিহা রহমান বলেন, ‘দুর্নীতিবাজদের সামজিকভাবে বয়কট করতে হবে।’