রাজধানীর কলাবাগানের পান্থপথে আবাসিক হোটেলে মঙ্গলবার (১৫ই আগস্ট) সকালে আত্মঘাতি বোমা বিস্ফোরণে নিহত জঙ্গি সাইফুল ইসলাম খুলনার সরকারি বিএল কলেজের অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্র। সাইফুল গত শুক্রবার ৪ আগস্ট জুমার নামাজ আদায় করে চাকরি খোঁজার কথা বলে বাড়ি থেকে চলে যায়।
খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার সাহস ইউনিয়নের নোয়াকাটি গ্রামের হাফেজ ইমাম আবুল খায়েরের একমাত্র ছেলে সাইফুল ইসলাম।
২০১১ খ্রিস্টাব্দে সাইফুল উলা দাখিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করে এবং ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে খুলনা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে আলিম পাস করে খুলনা বিএল কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়ে শেষ বর্ষে পড়াশুনা করতো।
সাইফুলের পিতা হাফেজ আবুল খায়ের মোল্যা জামায়াত ইসলামীর সাহস ইউনিয়ন শাখার কোষাধ্যক্ষ বলে এলাকাসূত্রে জানা যায়।
আবুল খায়ের প্রাথমিকভাবে নোয়াকাটি মোল্যা বাড়ি জামে মসজিদে ইমামতি করতো কিন্তু জামায়াতে ইসলামী কর্মকান্ডের কারণে তাকে অব্যহতি দেন স্থানীয়রা। পরে তিনি নোয়াকাটি বাড়ির পাশে মাঠের হাট জামে মসজিদে ইমামতি করেন।
আবুল খায়েরের ৩ সন্তানের মধ্যে সাইফুল ইসলাম একমাত্র পুত্র। তার সাবিয়া খাতুন ইরানী (১৬) ও তামান্না খাতুন নামে ২ মেয়ে রয়েছে। সাইফুলের মা আসমা বেগম একজন প্রতিবন্ধি। অভাব অনটনের মধ্যে চলে তাদের সংসার।
সাবিয়া খাতুন ইরানী জানায়; তার ভাই সাইফুল দৌলতপুর বিএল কলেজে পড়াকালীন একটি মেসে থাকতো এবং মাঝে মধ্যে বাড়ি আসতো। তবে সে কারো সাথে মিশতোনা। তার ভাই সাইফুল ৪ আগস্ট গত শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করে চাকরি খোঁজার কথা বলে বাড়ি থেকে চলে যায়। তবে এলাকায় সে কোন রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল না।
ডুমুরিয়া থানার ওসি হাবিল হোসেন জানান; সাইফুলের বাবা আবুল খায়ের মোল্লা নোয়াকাটি মোল্লা বাড়ি জামে মসজিদের ইমাম। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।
ঢাকার পান্থপথে জঙ্গি আস্তনা সন্দেহে হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালে আজ মঙ্গলবার সকালে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও সোয়াট সদস্যদের অভিযানে জঙ্গি সাইফুল ইসলাম নিহত হন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গোয়েন্দারা জানতে পেরেছিল যে, জাতীয় শোক দিবসে জঙ্গিরা ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে আসা মিছিলে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালাবে। আরো জানতে পারেন ওলিও হোটেলে জঙ্গিরা অবস্থান নিয়েছে।”
প্রথমে ওই হোটেলের একটি কক্ষে অবস্থানরত উগ্রবাদীকে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়। কিন্তু ওই ব্যক্তি জবাবে একটি বিস্ফোরণ ঘটায়।
‘এরপর ওই জঙ্গি দরজা ভেঙ্গে যখন আরও একটি বিস্ফোরণ ঘটানোর চেষ্টা করে, তখন পুলিশ গুলি চালায়।’
ওই ব্যক্তি সুইসাইডাল ভেস্ট পরিহিত ছিল এবং এক পর্যায়ে সে নিজেই বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মাহুতি দেয়।
সে যে রুমে থাকতো, সে রুমের সবকিছু উড়ে গেছে – বারান্দা উড়ে গেছে, সাইড ওয়াল উড়ে গেছে। অর্থাৎ এটা ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী একটি বিস্ফোরক, একটি আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) ছিল।
দেড় বছর কলেজে যায়নি সাইফুল: বিএল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর সৈয়দ সাদিক জাহিদুল ইসলাম বলেন, সাইফুল ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে বিএল কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়। তবে তৃতীয় বর্ষের কোনো ক্লাসে তার হাজিরা পাওয়া যায়নি। তৃতীয় বর্ষের ফরমও পহৃরণ করেনি সে, পরীক্ষাও দেয়নি। দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষায় ইংরেজিতে ফেল করলেও পরের বছর সে মানোন্নয়ন পরীক্ষাও দেয়নি। সব মিলিয়ে দেড় বছর আগে থেকেই কলেজের সঙ্গে তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। খুলনার আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আবুল খায়ের মোহাম্মদ যাকারিয়া বলেন, সাইফুল সেখানে পড়ত কি-না তার জানা নেই।