১ জানুয়ারি সারাদেশে বই উৎসব হয়ে গেল। এ উৎসবে এবার পার্বত্য চট্টগ্রামে নতুন চমক ছিল এই প্রথম চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা আদিবাসী শিশুদের স্ব স্ব মাতৃভাষার বই বিতরণের খবর।
পাহাড়ে বসবাসরত ১৪ আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা শিশুদের হাতে বই তুলে দেয়ার কথা সরকারের। অথচ এসব বই এখনও পায়নি আদিবাসী শিশুরা।
উৎসবের দিন রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা বনরূপা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, এবার তিন জনগোষ্ঠীর শিশুদের হাতে স্ব স্ব মাতৃভাষার বই বিতরণ করা হয়েছে।
জেলা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে আদিবাসী শিশুদের জন্য এখনও কোন বই আসেনি। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জিল্লুর রহমান, আদিবাসী শিশুদের জন্য জেলায় কোন বই পাঠানো হয়নি। শুধু অনুশীলন বই ও শিক্ষক সহায়িকা পাঠানো হয়েছে। অনুশীলন খাতার মাধ্যমে অজাপাঠ শিখতে পারবে শিশুরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান যে বই বিতরণের কথা বলেছে সেগুলো বই ছিল না। এগুলো ছিল অনুশীলন খাতা। আদিবাসী শিশুদের কোন বই এখনও জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসে আসেনি। কবে আসবে তাও তারা জানেন না।
এদিকে শিক্ষক সহায়িকা বই নিয়ে বেশ বিপাকে জেলা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। অফিসের কর্মকর্তা ও শিক্ষকরা বলছেন, এগুলো পড়ানোর জন্য শিক্ষক নেই। সে ধরণের প্রস্তুতিও নেই। যদি শিক্ষকদের প্রশিক্ষিত করা না যায় তাহলে আদিবাসী শিশুদের পাঠদান করা কঠিন হবে বা সম্ভবও হবে না।
রাঙামাটি শহরের রাজা নলীলাক্ষ রায়. স. প্রা বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জহরলাল চাকমা বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে শিশুদের চাকমা ভাষার বর্ণগুলো পড়ানোর জন্য শিক্ষক নেই। যদিও চাকমা শিক্ষক আছে কিন্তু তাদের কেউই চাকমা ভাষার বর্ণমালাগুলো সাথে পরিচয় নেই।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পার্বত্য চুক্তির আলোকে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগটি জেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তরিত হয়েছে। তাই যেসব প্রয়োজনীতা সৃষ্টি হয়েছে এগুলো নিরসনের দায়িত্ব জেলা পরিষদের।
জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে জেলায় ১৪৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। এদিকে জেলা পরিষদ সূত্র জানিয়েছে সরকারের আদিবাসী মাতৃভাষার বইয়ের খবরে জেলা পরিষদের অর্থায়নে এযাবৎ মাত্র ৫০ জন আদিবাসী ভাষার উপর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় কম। চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ভাষার বর্ণমালাগুলো শিখানোর জন্য আরো শিক্ষকের প্রয়োজনর কথা বলা হয়েছে।
রাঙামাটির কাউখালী উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কৌশিক চাকমা বলেন, শিক্ষক সহায়িকা নামে যে বইটি শিক্ষকদের জন্য করা হয়েছে তা একজন প্রশিক্ষিত ব্যক্তি ছাড়া পাঠদান তো দূরের কথা পড়তেও কষ্ট হয়। বইটিতে কোন অনুবাদ করা হয়নি। যাত্রা শুরু করা হয়েছে এটি মহৎ উদ্যোগ। এটিকে এগিয়ে নিতে ভুল সংশোধন করে এগিয়ে যেতে হবে। এতে সবার সহযোগীতার দরকার।
রাঙামাটি সদর উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ত্রিরতন চাকমা বলেন, যারা প্রশিক্ষণ পেয়েছেন তাদের সংখ্যা খুব কম। চর্চার অনেকে ভুলে গেছেন। তাই প্রয়োজনীয় শিক্ষকদেরকে যেহেতু প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রশিক্ষিত করা হয়নি সেহেতু শিক্ষকদের পাঠদানের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হবে। তাছাড়া যে আদিবাসী ভাষা শিক্ষক সহায়িকা পাঠানো হয়েছে কিন্তু কোন এ বইগুলোর বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়নি।
রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ইনস্টিটিউটের পরিচালক রনেল চাকমা বলেন, আদিবাসী ভাষায় পাঠদানের ব্যাপারে তারা কিছু জানেন না। তবে ১৫/২০ শিক্ষক নিয়ে আদিবাসী ভাষার প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ে পাঠদানের জন্য জেলা পরিষদের সহায়তায় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থার শিগগিরই শুরু করা হবে।
রাঙামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা বলেন, গতবারে আদিবাসী ভাষার উপর কিছু শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে আগামীতে আরো প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।