এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে এখনই ভাবুন - Dainikshiksha

এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে এখনই ভাবুন

মোহাম্মদ আবু নোমান |

এ বছর এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রতিদিনই ফাঁস হয়েছে। পরীক্ষাগুলোও বাতিল হয়নি। এ অবস্থায় প্রকৃত মেধাবী শিক্ষার্থী খুঁজে পাওয়া দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, ‘প্রশ্ন আগেও ফাঁস হতো, কিন্তু এখন তা বিস্তৃত হচ্ছে ইন্টারনেটকে মাধ্যম করে, বলতে পারেন প্রযুক্তির বিড়ম্বনা।’ সচিব মহোদয় তো গোপনীয় গুপ্তরহস্য উন্মোচন করলেন—‘আগেও ফাঁস হতো।’ প্রশ্নফাঁস বাণিজ্যের বিষয়টি অকপট ও শিশুসুলভ মেজাজে তিনি স্বীকার করে নিলেন! এখন যোগ করা হয়েছে ‘প্রযুক্তির বিড়ম্বনা’। আসলে দায়িত্ববানদের মন্তব্যে ব্যর্থতা ও অসহায়ত্বই ফুটে উঠছে। অনর্থক দোষ চাপানো হয়েছে ইন্টারনেটের ওপর! অথচ প্রশ্নপত্র ফাঁসের মূল কারণ চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

আগামী ২ এপ্রিল থেকে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হবে। এ পরীক্ষা নকল ও প্রশ্নপত্র ফাঁসমুক্তসহকারে কীভাবে সম্পন্ন করা যায়, সেটা নিয়ে এখনই ভাবুন। এরই মধ্যে ঐ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ছাপা শুরু হয়ে যাওয়ার কথা। এরপর জেলা প্রশাসকের পাঠানো ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে বিভিন্ন জেলায় প্রশ্নপত্র পাঠানো শুরু হবে। দেশের বাইরেও বিভিন্ন কেন্দ্রে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ঐ কেন্দ্রগুলোতে প্রশ্নপত্র পাঠাতে ১৫-২০ দিন সময় লাগে। এজন্য অন্যান্য পরীক্ষার তুলনায় উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের প্রশ্নপত্র অনেক আগেই ছাপা শুরু করতে হয়। ছাপা শেষে প্রশ্নপত্র জেলা প্রশাসকদের ট্রেজারিতে পাঠানো হয়। পরীক্ষা শুরুর আগ পর্যন্ত এই প্রশ্নপত্র গোপনীয়তার সঙ্গে সংরক্ষণ করা হলেও প্রচলিত পদ্ধতিতে এত আগে প্রশ্নপত্র তৈরি ও ছাপা এবং এত স্তরে আনা-নেওয়ার সঙ্গে একাধিকবার হাতবদল হওয়ায় ফাঁসের আশঙ্কা থাকে।

প্রশ্নপত্র, পরীক্ষা, পাঠ্যবিষয় ও পাঠ্যক্রমে নিত্যনতুন পদ্ধতি প্রয়োগ করা হচ্ছে। এক্সপেরিমেন্ট চলছে কখনো নৈর্ব্যত্তিক প্রশ্নে, কখনো রচনামূলক আবার সৃজনশীল নামের পদ্ধতি প্রয়োগ করে। ১৯৯২ সালে এসএসসিতে চালু করা ৫০ নম্বরের এমসিকিউতে ৫০০টি প্রশ্ন নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। তখন নৈর্ব্যত্তিক ও রচনামূলক মিলে ৩৩ নম্বর পেলেই পাস। ফলে শিক্ষার্থীরা রচনামূলক অংশের লেখাপড়া বাদ দিয়ে সর্বোচ্চ ৫০০ এমসিকিউ পড়লেই হতো। এতে পাসের হার রাতারাতি বাড়তে থাকে। ১৯৯৬ সালে ৫০০ এমসিকিউর পরিবর্তে পুরো বই থেকে এমসিকিউ নির্ধারণ করে। এরপর শুরু হয় পরীক্ষার হলে এমসিকিউর উত্তর বলে দেওয়ার ঘটনা। পরে এমসিকিউতে ৪০ নম্বর ও এক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অন্য প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রণালয়। ২০০৯ সাল থেকে দেশে সৃজনশীল পদ্ধতি চালু হয়। ২০১৫ সাল থেকে ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের র্যাংকিং বাতিল করা হয়। তাতেও কাজ হয়নি। গত বছর এসএসসি পরীক্ষায় এমসিকিউ ৩০ নম্বর করা হয়। এভাবে নিত্যনতুন পদ্ধতি এক্সপেরিমেন্ট করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের গিনিপিগে পরিণত করা হচ্ছে।

প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে অভিজ্ঞ শিক্ষাবিদ, প্রযুক্তিবিদরা নানামুখী পর্যবেক্ষণ ও বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। যেমন—ইলেকট্রনিক খাম: এতে সহজে অনুমেয় হবে কোথায় কখন খোলা হচ্ছে প্রশ্নপত্রের খাম। বিশেষায়িত ব্যাগ: যা একবার ব্যবহারের পর দ্বিতীয়বার ব্যবহার করা যাবে না। ফলে কেউ প্রশ্নের প্যাকেট খুললে দ্বিতীয়বার আর আটকানোর সুযোগ পাবে না। ইন্টারনেট জ্যামার: পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোয় ইন্টারনেট জ্যামার ডিভাইস ব্যবহারের পরামর্শ প্রযুক্তিবিদদের। পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রশ্ন ছাপা: এজন্য প্রয়োজন প্রতিটি কেন্দ্রে বিদ্যুত্ ও ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত করা। যাতে কম্পিউটার এবং প্রিন্টার ব্যবহার করে মাত্র ২০-২৫ মিনিটে পাঁচ শ থেকে ১ হাজার প্রশ্নপত্র প্রিন্ট করা সম্ভব। অনস্ক্রিনে প্রশ্ন: কেন্দ্রে প্রজেক্টরের মাধ্যমে অনস্ক্রিনে প্রশ্নপত্র থাকবে সেটা দেখে উত্তর দেবে শিক্ষার্থীরা ইত্যাদি। এই বিষয়গুলো সামনে রেখে বাস্তবতার নিরিখে খুঁটিনাটি খতিয়ে দেখা জরুরি।

ঢাকা

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.007206916809082