দীর্ঘ সাড়ে ১০ বছরেও চালু হয়নি খুলনা নার্সিং কলেজ। ইতোমধ্যে ভবনের জানালা-দরজায় পচন ধরেছে, ছাদের প্লাস্টার খসে খসে পড়ছে। ঠিকাদারের সঙ্গে সরকারের সমঝোতার পর পুনঃনির্মাণে সাত কোটি টাকার প্রাক্কলন ব্যয় প্রস্তুত করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে এক বছর আগে। এ ছাড়া টেন্ডার প্রক্রিয়া করতেই কেটে গেছে প্রায় আট মাস। ফলে সাড়ে ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত নার্সিং কলেজটির কার্যক্রম শুরুর আগেই ‘ভুতুড়ে বাড়ি’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এ ছাড়া কোনো সীমানা প্রাচীর না থাকায় রাতে মাদকসেবী আর বখাটেদের আড্ডাস্থলে পরিণত হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে এলাকাবাসীর।
জানা যায়, নার্সিং পেশায় উচ্চ শিক্ষার লক্ষ্য নিয়ে ২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও বগুড়ার সঙ্গে খুলনাতেও প্রতিষ্ঠা করা হয় ‘খুলনা নার্সিং কলেজ’। খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে ১০ একর জমির ওপর ১৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রতিষ্ঠিত এ কলেজটির নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায় ২০০৯ সালে। তখন একটি একাডেমিক ভবন, একটি গেস্ট হাউজ, দুইটি হোস্টেল ও তিনটি স্টাফ কোয়ার্টার নির্মাণ কাজের অধিকাংশ সমপন্ন করা হয়। দীর্ঘ চার বছর পর ২০১১ সালে একাডেমিক কার্যক্রম চালুর উদ্যোগ নিয়ে ১৩ জন শিক্ষক পদায়ন করা হলেও বর্তমানে মাত্র সাত জন শিক্ষক রয়েছেন কাগজে-কলমে। তাদের মধ্যে আবার শিক্ষা ছুটি এবং প্রেষণে অন্যত্র কর্মরত আছেন পাঁচ জন। বর্তমানে স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তরে সহকারী পরিচালক (সেবা) হিসেবে কর্মরত খালেদা আক্তার বর্তমানে অতিরিক্ত দায়িত্বে অধ্যক্ষ পদে রয়েছেন। এ ছাড়া একজন মাত্র প্রভাষক রয়েছে সেখানে। তা ছাড়া দুইজন কম্পিউটার অপারেটর, একজন ক্যাশিয়ার, একজন স্টোর কিপার, একজন ল্যাব সহকারী পদায়ন থাকলেও প্রেষণে অন্যত্র কর্মরত। এসবের মধ্যে গত সেশনে দেশের অন্য তিনটি নার্সিং কলেজে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে ৬০ জনকে খুলনাতে ভর্তির জন্য মনোনীত করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে তা বাতিল করে ডিজি নার্সিংয়ের কার্যালয়।
স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী এএফএম আনিছুর রহমান বলেন, ‘আমি সদ্য যোগদান করেছি, কোনো কাজই এখনো ঠিকমত বুঝে নিতে পারিনি। ফলে এই বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।
সদ্য বিদায়ী নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ বলেন, হেড অফিসের চাহিদামত সাত কোটি টাকার প্রাক্কলন ঢাকায় পাঠিয়েছি। টেন্ডার হওয়ার পর ঠিকাদারের মাধ্যমে কাজ শুরু হবে।
নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষ খালেদা আক্তার বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে বার বার পুনঃনির্মাণ প্রক্রিয়া থমকে যাওয়ায় শিক্ষার্থী ভর্তিও পিছিয়ে যাচ্ছে। এতে এ অঞ্চলের নার্সিং পেশায় নিয়োজিত শত শত নার্স উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তবে আগামী বছর শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর ব্যাপারে আশাবাদী তিনি। সরকারিভাবে কিছু আসবাবপত্র পাঠানো হয়েছে। আস্তে আস্তে জটিলতা নিরসন হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
স্বাধীনতা নার্সেস পরিষদের (স্বানাপ) খুলনা মহানগর সভাপতি জেসমিন নাহার বলেন, খুলনায় নার্সিং কলেজটি চালু না হওয়ায় এ অঞ্চলের কর্মরত নার্সদের ঢাকা, চট্টগ্রাম ও বগুড়ায় গিয়ে বিএসসি নার্সিং কোর্স করতে হচ্ছে। এতে অনেকে সংসার, স্বামী-সন্তান রেখে দুই বছর ধরে দূরে অবস্থান করতে বাধ্য হচ্ছেন। অথচ খুলনা নার্সিং কলেজটি চালু থাকলে বাড়িতে বসেই অনেকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পেতেন।
স্বাধীনতা নার্সেস পরিষদের খুলনা বিভাগীয় সভাপতি শীলা রানী দাস বলেন, বর্তমান সরকার নার্সদের ব্যাপারে অতীতের সব সরকারের চেয়ে আন্তরিক। সরকার ইতোমধ্যে সারাদেশে ১০ হাজার নার্স পদায়ন ছাড়াও নার্সদেরকে দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদা দিয়েছে। খুলনা নার্সিং কলেজটিও দ্রুত চালু করা হবে এমন প্রত্যাশা করেন তিনি।