দেশটা দিনে দিনে জিপিএ-৫ এ ভরে যাচ্ছে! এত্তো জিপিএ-৫! রেজাল্ট বেরুলে মানুষ এখন আর জিপিএ-৫ এর খবর জানতে কৌতুহল বোধ করে না। ক’জন ফেল করেছে- সে খবরটা আগে জানতে চায়। ফেল এখন কদাচিত! এর হিসেবটা অনেক ছোট। জিপিএ-৫’র হিসেব অনেক বড় হয়ে গেছে! এসএসসি আর এইচএসসি’র সাথে পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা দু’টো যোগ হওয়ায় আমাদের জিপিএ-৫ এর বহর অনেক বেড়ে গেছে। প্রায় সারা বছর জিপিএ-৫ এর জোয়ারে ভাসে পুরো দেশ। আমাদের শিক্ষায় অনেক উন্নতি হয়েছে বটে , কিন্তু মৌলিক উন্নতি কতটুকু কী হয়েছে?
সে দিন ফেসবুকে জনৈক শিক্ষকের একটা স্ট্যাটাস পড়লাম। তিনি লিখেছেন, ‘আমার যে ছাত্রটি স্কুলের কোন পরীক্ষায় গণিত বিষয়ে কোনদিন ১৫ নম্বর পায় নাই, সে এবার সব বিষয়ে ‘এ +’ পেয়েছে।’ জিপিএ-৫ পাওয়াটা এখন বড় বেশী সহজ। যা সহজে পাওয়া যায়, তার মূল্য থাকে না। ফেল করাটা আজকাল এক কঠিন কাজ। এ ক’জনের ভাগ্যে জুটে (?)।
১৯৯২-৯৩ শিক্ষাবর্ষে কুমিল্লা টিচার্স ট্রেনিং কলেজে বিএড ক্লাসের উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে শ্রদ্ধেয় কাসেম স্যার রসিকতা করে বিএড প্রশিক্ষণ প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘এখানে তিনটি কাজ বড় কঠিন। এক. ডাল খাওয়া। দুই.বিএড পরীক্ষায় ফার্স্ট ক্লাস পাওয়া। তিন.বিএড পরীক্ষায় ফেল করা।’ বড় জ্ঞানী মানুষ ছিলেন কাসেম স্যার। সামান্য ক’দিন পর নায়েমে পরিচালক হয়ে ময়মনসিংহ চলে যান।
যাক ,বলছিলাম আমাদের পরীক্ষায় যেন আজকাল কাসেম স্যারের সে ‘তিন নম্বর’ কঠিন কাজটিই চলছে!
সর্বপ্রথম যে বছর গ্রেডিং পদ্ধতিতে এসএসসি’র রেজাল্ট হয়, সে বছর দেশের সকল বোর্ড মিলে মোট কতটি ‘জিপিএ-৫’ পেয়েছিল? আর এ বছর একেক বোর্ডে কত জনে পেয়েছে?
আমাদের শিক্ষায় আমরা কী আলাদীনের চেরাগ পেয়ে গেছি? রাতারাতি জিপিএ-৫’ এ দেশটা ভরে যাচ্ছে। এ ক’বছরে আমাদের দেশ কত জিপিএ-৫ পেয়েছে। এত সব জিপিএ-৫ গেল কোথায়? এতো জিপিএ-৫, অথচ আমাদের মেধার বড় অভাব। মেধার আকাল ও দূর্দিন চলছে আমাদের। মেধায় আমাদের এ দূর্দশা আর কতকাল চলবে?
গ্রেডিং পদ্ধতিতে রেজাল্ট চালু হবার আগে বোর্ড পরীক্ষার রেজাল্টে মেধা তালিকা প্রকাশ করা হতো। দেশ সেরা মেধাবীদের প্রতি দৃষ্টি যেত সবার।
এখন সেটি করা হয় না। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি দিনে দিনে বদলে যাচ্ছে। একদিন হয়ত যারা ফেল করবে, তাদেরই মেধাক্রম করে জাতিকে জানানো হবে। আমরা কী সে দিকে এগিয়ে যাচ্ছি? এ পথটি মোটে ও সঠিক পথ নয়।
অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী: চরিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, কানাইঘাট, সিলেট ও দৈনিক শিক্ষার সংবাদ বিশ্লেষক।