এমপিওভুক্তিতে বিশৃঙ্খলা - দৈনিকশিক্ষা

এমপিওভুক্তিতে বিশৃঙ্খলা

রাকিব উদ্দিন |

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই অব্যবস্থাপনা চলে আসছে। বিগত প্রায় ৯ বছরেও এমপিওভুক্তিতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পারেনি শিক্ষা প্রশাসন। এমপিও সংক্রান্ত বিষয়ে মন্ত্রণালয় একেক সময় একেক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বারবার নিজেদের নীতিমালা বা সিদ্ধান্ত নিজেরা ভঙ্গও করেছেন। এজন্য এমপিও’র জন্য বারবার আন্দোলনের সুযোগ পাচ্ছেন শিক্ষকরা। আন্দোলন তীব্র হলে তা মেনেও নিচ্ছে সরকার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে সারাদেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমপিও বঞ্চিত শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন ৭ হাজার ১৪৬ জন। এছাড়া দেশে নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও রয়েছে ৭ হাজার ১৪২টি, যার একটি বড় অংশই বর্তমান সরকারের আমলে অনুমোদন পেয়েছে। গড়ে প্রতি বছর ২০০ থেকে ৩০০ নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনুমোদন দেয়া হচ্ছে বা স্বেচ্ছায় গুটিয়ে যাওয়া প্রতিষ্ঠান পুনরায় চালু হয়েছে।

শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলছেন, সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় অনেক পুরনো প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন এমপিওবঞ্চিত থাকছে। আবার ভাড়া বাড়িতে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানও এমপিওভুক্ত হয়েছে। কিন্তু এসব বিষয়ে শিক্ষা প্রশাসনের কোন মনিটরিং নেই।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, তদবিরের চাপে ‘এমপিও নয়’-এমন শর্তসাপেক্ষে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন বা অতিরিক্ত শাখা অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। এসব শাখায় নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকরা বেতনভাতা না পেয়ে এমপিওভুক্তির জন্য আন্দোলন করছেন। কারণ মন্ত্রণালয়ের শর্ত অনুযায়ী অতিরিক্ত শাখায় নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের বেতনভাতা দিচ্ছে না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পরিষদ। কিছু প্রতিষ্ঠান নামমাত্র সম্মানীভাতা দিচ্ছে। শর্ত ভঙ্গের দায়ে ওই পরিচালনা পরিষদের বিরুদ্ধেও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ কারণেই এমপিও (বেতনের সরকারি অংশ) নিয়ে নৈরাজ্য চলছে। বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে বর্তমানে এমপিওভুক্তির আন্দোলন করছেন প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষক।

প্রবীণ শিক্ষক নেতা ‘জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০’ প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহম্মেদ বলেন, ‘এমপিও নীতিমালা সরকার করে, সরকারই মানে না। ২০১০ সালে এমপিও নীতিমালা করা হলেও সেটিকে সিরিয়াসলি নেয়া হয়নি। এর ফলে অযোগ্য অনেক প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়েছে; কিন্তু ভালো অনেক প্রতিষ্ঠান এমপিও বঞ্চিত। শিক্ষক কষ্টে থাকলে, অদক্ষ হলে সেটা দেখার দায়িত্ব সরকারের। তারা সরকারের কাছ থেকে বা প্রতিষ্ঠান থেকে বেতনভাতা পাবেন। কিন্তু বেতন পাবেন না-এটা তো হতে পারে না। এই বিষয়গুলো মনিটরিং করা হচ্ছে না।’

শিক্ষক নিয়োগে সমন্বিত উদ্যোগ নেয়ার ওপর জোর দিয়ে এই শিক্ষাবিদ বলেন, ‘শিক্ষক নিয়োগে ডিজি অফিস (মাউশি অধিদফতর), জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের মধ্যে কোন সমন্বয় নেই। শিক্ষানীতি অনুযায়ী, পিএসসির আদলে একটি কমিশন গঠনের কথা থাকলেও সেটি করা হয়নি। বর্তমান শিক্ষানীতি জাতীয় সংসদে অনুমোদিত। এটি অনুসরণ না করে এনটিআরসিএর অধীনে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে, যে প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে। এসব কারণেই মূলত এমপিও নিয়ে বিশৃঙ্খলা চলছে।’

জানা গেছে, ২০১০ সালে সর্বশেষ ১ হাজার ৬২৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়। ওই সময় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, নতুন করে আর কোন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হবে না। এই ঘোষণায় অখ্যাত অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে ‘আরও প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি করা হবে’-এমন ঘোষণার পর থেকে রাজনৈতিক বিবেচনায় নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি দেয়া শুরু হয়।

২০১৩ সাল থেকে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনুমোদনের সময় শর্ত জুড়ে দেয়া হচ্ছে, ‘এমপিও সুবিধা দাবি করা যাবে না’। একইভাবে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন শাখা অনুমোদন ও এসব শাখায় শিক্ষক নিয়োগের সময়ও ‘এমপিও সুবিধা দাবি করা যাবে না’-এই শর্ত জুড়ে দেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে নতুন শাখায় নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের বেতনভাতা দেয়ার কথা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব তহবিল থেকে।

২০১৫ সালের ১১ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক নির্দেশনায় বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ স্থগিত করা হয়। পরে ওই বছরের ২৮ ডিসেম্বর বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একাডেমিক স্বীকৃতি, পাঠদানের অনুমতি, নতুন শ্রেণী শাখা, বিষয়, বিভাগ, সহশিক্ষা এবং ডাবল শিফট চালু কার্যক্রম সাময়িক স্থগিত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ওই সময় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, এ সংক্রান্ত একটি নতুন নীতিমালা না করা পর্যন্ত এসব কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি, নতুন নীতিমালাও হয়নি।

এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে বঞ্চিত শিক্ষক

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) হিসেবে, ২০১১ সালের ১৩ নভেম্বরের পর অতিরিক্ত শ্রেণী শাখা ও বিষয় বা বিভাগের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক আছেন ৭ হাজার ১৪৬ জন। এর মধ্যে হাইস্কুলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে (আইসিটি) সহকারী শিক্ষক ১ হাজার ৬৫৬ জন, বিজ্ঞানের সহকারী শিক্ষক ২৬৫ জন এবং অতিরিক্ত শ্রেণী শাখায় নিয়োগ পাওয়া সহকারী শিক্ষক আছেন ২ হাজার ২৯২ জন। মাধ্যমিকে মোট এমপিওবঞ্চিত শিক্ষক ৪ হাজার ২১৩ জন।

আর কলেজে আইসিটি বিষয়ের প্রভাষক ২৪২ জন, প্রভাষক (উৎপাদন, ব্যবস্থাপনা ও বিপণন) ৬১০ জন, প্রভাষক (ফিন্যান্স, ব্যাংকিং ও বীমা) ২০৩ জন, বিজ্ঞানের প্রভাষক ৫০৩ জন এবং অন্যান্য বিষয়ে নিয়োগ পাওয়া প্রভাষক আছেন ১ হাজার ৩৭৫ জন। কলেজে এমপিওবঞ্চিত মোট শিক্ষক আছেন ২ হাজার ৯৩৩ জন।

বঞ্চিতদের এমপিওভুক্তিতে বার্ষিক ব্যয় ২ হাজার

১৮৪ কোটি টাকা

অতিরিক্ত শাখায় নিয়োগপ্রাপ্ত ৭ হাজার ১৪৬ জন শিক্ষকভুক্তির আওতায় আনতে সরকারের বার্ষিক ব্যয় হবে ২ হাজার ১৮৪ কোটি ২৭ লাখ ৫২ হাজার ২৫০ টাকা।

এমপিও প্রদানের দায়িত্বে থাকা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) গত ৪ জানুয়ারি এমপিওভুক্তির বার্ষিক ব্যয়ের হিসাব দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগকে।

মাউশির তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে এমপিওবিহীন (নন-এমপিও) স্কুল ও কলেজ রয়েছে ৭ হাজার ১৪২টি। এর মধ্যে এমপিওবিহীন নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১ হাজার ২২৭টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১ হাজার ৮৯টি, এমপিওভুক্ত নিম্ন মাধ্যমিককে মাধ্যমিক স্তরে উন্নীতকরণ বিদ্যালয় ৩ হাজার ২৭৫টি, উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ ৫১৮টি এবং এমপিওভুক্ত উচ্চ মাধ্যমিক কলেজকে ডিগ্রি স্তরে উন্নীতকরণ প্রতিষ্ঠান ১ হাজার ৩৩টি। এসব প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী আছেন প্রায় ৮০ হাজার। এগুলোতে লেখাপড়া করছে প্রায় ২০ লাখ ছাত্রছাত্রী।

তবে ২০১০ সালে ২ হাজার ৬২৪টি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির পর দেশে নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা) ছিল ৮ হাজার ৫৫টি। ২০১৬ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত মাউশি’র হিসেবে, সারা দেশে সরকারি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত নন-এমপিও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা) ছিল ৫ হাজার ২৪২টি। এ হিসেবে ছয় বছরে (২০১০ থেকে ২০১৬) ২ হাজার ৮১৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে বা কমেছে। মূলত এমপিও না দেয়ার ঘোষণার কারণেই প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়।

কিন্তু মাউশির গত ৪ জানুয়ারির হিসেবে, দেশে নন-এমপিও স্কুল ও কলেজ রয়েছে ৭ হাজার ১৪২টি। এছাড়াও প্রায় এক হাজার সরকারি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত নন-এমপিও মাদ্রাসা রয়েছে বলে মাদ্রাসা অধিদফতরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে। এ হিসেবে ‘আর এমপিও দেয়া হবে না’- ২০১০ সালে সরকারের এই ঘোষণার পর স্বীকৃতিপ্রাপ্ত প্রায় তিন হাজার প্রতিষ্ঠান বন্ধ হলেও পরবর্তীতে নতুন প্রতিষ্ঠান অনুমোদন পেয়েছে বা বন্ধ হওয়া প্রতিষ্ঠান পুনরায় চালু করা হয়েছে।

৫ হাজার অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকের এমপিওভুক্তিতে ১৪৬ কোটি টাকা

মাউশির হিসেবে, হাইস্কুল ও কলেজ ছাড়াও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) অধিভুক্ত বেসরকারি কলেজের অনার্স ও মাস্টার্স কোর্সের ৫ হাজারের বেশি শিক্ষকের এমপিওভুক্তিতে সরকারের বার্ষিক ব্যয় হবে ১৪৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

গত ২ জানুয়ারি মাউশি এমপিওভুক্তির বার্ষিক ব্যয়ের হিসাব দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগকে।

ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় ১৯৮২ সালে প্রণীত জনবল কাঠামো অনুযায়ী প্রতিটি বিষয়ে উচ্চ মাধ্যমিক একজন এবং ডিগ্রি পর্যায়ে একজন মোট দু’জন শিক্ষক এমপিওভুক্তির বিধান আছে। ১৯৯২ সালে জাবি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৯৩-৯৪ শিক্ষাবর্ষ হতে বেসরকারি কলেজে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স চালু হয়ে বর্তমানে ৭১৮টি কলেজে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স চালু আছে। এর মধ্যে ১৮৬টি সরকারি কলেজ ও উপজেলা ভিত্তিক ২৮৩টি জাতীয়করণকৃত কলেজের মধ্যে ১৩৫টি অনার্স ও মাস্টার্স কলেজ অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট অনার্স ও মাস্টার্স পর্যায়ের শিক্ষকরা আত্মীকরণের প্রক্রিয়াধীন আছেন। অবশিষ্ট ৩৩৫টি বেসরকারি অনার্স-মাস্টার্স কলেজে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রায় ৫ হাজার শিক্ষককে জনবল কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করা আবশ্যক।’

২০১০ ও ২০১৩ সালে জনবল কাঠামো পরিবর্তন করা হলেও অনার্স-মাস্টার্সের শিক্ষকদের প্রচলিত জনবল কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ফলে ৫ হাজার শিক্ষক ২৫ বছর ধরে এমপিওভুক্ত হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ১২ ও ১৩তম বৈঠকের সুপারিশ সংবলিত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হতে মাউশি অধিদফতর বরাবর বিষয়টি পরীক্ষান্তে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পত্র প্রেরণ করা হয়। বিষয়টি বিবেচনাপূর্বক অনার্স পর্যায়ে প্রতি বিষয়ে পাঁচজন এবং মাস্টার্স পর্যায়ে প্রতি বিষয়ে দুজন শিক্ষক জনবল কাঠামোতে অন্তুর্ভুক্ত করে এমপিও বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে ওই চিঠিতে মন্তব্য করা হয়।

প্রতিষ্ঠান অনুমোদনে নীতিমালা উপেক্ষা

এবার অষ্টম শ্রেণীর জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় ৫৯টি প্রতিষ্ঠান থেকে কেউ পাস করেনি। গত বছরও এই ধরনের প্রতিষ্ঠান ছিল ২৮টি। ব্যর্থ ৫৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৫টিই মাদ্রাসা। ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।

মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক একেএম ছায়েফ উল্লা বলেন, ‘২৫টি দাখিল মাদ্রাসা থেকে এবার জেডিসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল মোট ১১৮ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে একটি এমপিওভুক্ত মাদ্রাসা রয়েছে, যেটি থেকে মাত্র দু’জন পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল।’ তিনি বলেন, ‘যেসব প্রতিষ্ঠানে কেউ পাস করেনি, সেগুলোর এমপিও থাকা উচিৎ নয়।’

২০১৪ সালের আগস্টে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে গিয়ে নতুন এমপিও নীতিমালা তৈরির তাগাদা দিলেও আজও তা বাস্তবায়ন হয়নি।

শিক্ষা বোর্ডের নীতিমালা অনুযায়ী, নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অনুমতি দেয়ার ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত এলাকার জনসংখ্যা ন্যূনতম ৮ হাজার হতে হয়। পৌর ও শিল্প এলাকায় নিম্ন মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের ক্ষেত্রে সন্নিহিত এক কিলোমিটার এলাকায় কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকার শর্ত রয়েছে। মফস্বল এলাকার জন্য এ শর্ত তিন কিলোমিটার পর্যন্ত। আর মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজের ক্ষেত্রে জনসংখ্যা হতে হবে ন্যূনতম ১০ হাজার এবং এক প্রতিষ্ঠান থেকে অন্য প্রতিষ্ঠানের দূরত্ব হবে দশ কিলোমিটার।

কিন্তু নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনুমোদনের ক্ষেত্রে এসব নিয়ম আমলে নেয়া হয় না। রাজনৈতিক বিবেচনা, প্রভাবশালী মহলের তদবিরের চাপেই মূলত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি প্রদান ও এমপিওভুক্ত করার নজির রয়েছে। ২০১০ সালে রাজধানীর দুটি প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হয়, যেগুলো এখনও ভাড়া বাড়িতে পরিচালিত হচ্ছে।

এমপিওভুক্তির বর্তমান অবস্থা

বর্তমানে দেশে ২৬ হাজার ৮১টি সাধারণ স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা এবং ৭৭৫টি কারিগরি কলেজসহ প্রায় ২৮ হাজার এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রায় সাড়ে পাচঁ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী এমপিও সুবিধা পাচ্ছেন। তাদের এমপিও বাবদ প্রতি মাসে সরকারের ব্যয় হচ্ছে ৯৪০ কোটি ৪৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নথি থেকে জানা গেছে, ১৯৮৪ সালে মাউশি অধিদফতরের বাজেট ছিল ২৩৫ কোটি টাকার, ২০০৯ সালে যা ছিল প্রায় চার হাজার কোটি টাকার। বর্তমানে মাউশির বাজেট হচ্ছে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার। এভাবে প্রতিবছরই এমপিও খাতের বরাদ্ধ বাড়ছে, কিন্ত মনিটরিং নেই।

প্রথম আন্দোলন:

২০১০ সালে এক হাজার ৬২৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়। অথচ আগে নিয়োগ ও পরে প্রশিক্ষণ দেখিয়ে বিদ্যালয়ের প্যার্টানভুক্ত ৮৫০ জন বিপিএড শিক্ষকসহ কৃষি, কম্পিউটার ও কলেজের প্রায় ১ হাজার ৫০০ শিক্ষককে এমপিও থেকে বঞ্চিত করা হয়। এক পর্যায়ে তীব্র আন্দোলনের মুখে তাদেরও এমপিওভুক্ত করা হয়।

২০১৩ সালে আন্দোলনে নামেন ‘নন-এমপিও’ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। এক পর্যায়ে শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে ৩ মাসের মধ্যে এমপিওভুক্তির আশ্বাস দিলে পেরিয়ে যায় দুই বছর।

এরপর ২০১৫ সালের অক্টোবরে প্রথমে শহীদ মিনারে সমাবেশ এবং পরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনশন পালন করে নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশন। ওই সময় সরকার আবারও এমপিওভুক্তির আশ্বাস দিলে কেটে যায় এক বছর। এভাবে নয় বছর ধরেই শিক্ষক আন্দোলন চলছে।

 

সৌজন্যে: দৈনিক সংবাদ

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0085740089416504