বাংলাদেশে ‘মানুষ গড়ার কারিগরদের উৎসবভাতা একটি ‘জাতীয় লজ্জা’! দেশের প্রায় শতভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত এবং শিক্ষক-কর্মচারীবৃন্দের প্রারম্ভিক বেতনের ১০০ ভাগ রাষ্ট্রীয়ভাবে বহন করা হলেও এমপিওভুক্ত শিক্ষকবৃন্দই সম্ভবত বিশ্বের একমাত্র পেশাজীবী যারা সিকিভাগ (২৫ শতাংশ) এবং কর্মচারীবৃন্দ ৫০ শতাংশ উৎসবভাতা পান। বৈষম্যটি পীড়াদায়ক।
অথচ খুবই প্রাসঙ্গিক যে, ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে প্যারিস সম্মেলনে ১৩টি অধ্যায় ও ১৪৬টি ধারা-উপধারায় শিক্ষকের মর্যাদা ও অধিকারের সুপারিশ প্রণীত হয়। কিন্তু বাংলাদেশে শিক্ষা ও শিক্ষকস্বার্থে বিনিয়োগ যৎসামান্য এবং শিক্ষকের অধিকার নিম্নগামী। এমপিওভুক্তদের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন পদের সবাই একই পরিমাণ (১০০০ টাকা) বাড়ি ভাড়া পান। তারা বার্ষিক পাঁচ শতাংশ প্রবৃদ্ধি, পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল ও উৎসব ভাতা, বৈশাখী ভাতা, পদোন্নতি, স্বেচ্ছা অবসর, বদলি সুবিধাসহ অসংখ্য বঞ্চনার শিকার।
অথচ শিক্ষকদের জন্য প্রণীত সনদে শিক্ষকের চিকিৎসা, স্বাস্থ্যসেবা, ছুটি, বেতন-ভাতা ও মর্যাদার ক্ষেত্রে বলা আছে (ক) সম্মানজনক পারিতোষিক নিশ্চিতকরণ (খ) যুক্তিসংগত জীবনমান বিধানকল্পে সুবিধাদি নিশ্চিতকরণ (গ) স্কেল অনুযায়ী নিয়মিত বেতন-ভাতাদি প্রাপ্তির নিশ্চয়তা (ঘ) জীবনধারণের ব্যয় বৃদ্ধির সঙ্গে বেতনকাঠামো পুন:বিন্যাস ও বর্ধিত বেতনপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা ইত্যাদি। কিন্তু চির বঞ্চনাই যেন ‘বেসরকারি শিক্ষক’দের ভাগ্যলিপি।
ঈদুল আযহা সমাগত। দেশ এখন সহস্রাব্দ উন্নয়ণ লক্ষমাত্রা (এমডিজি) অর্জনের পথে এবং মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় নাম লেখাতে যাচ্ছে। দেশে তো ‘পাখি ড্রেসের’ জন্য আত্মহত্যা, ডিভোর্সের ঘটনাও ঘটেছে অথচ একজন শিক্ষকের সংসারের কষ্টের সংবাদ পত্রিকার শিরোনাম হয় কি? একজন শিক্ষক যে উৎসবভাতা পান, তাতে উৎসব কি উৎসব থাকে? বর্তমান বাজারদর বিবেচনায় টাকার অংকে একজন শিক্ষকের উৎসবভাতা নিতান্তই সামান্য নয় কি?
মানবসম্পদ উন্নয়নে ‘মানুষ গড়ার কারিগর’ শিক্ষকের জীবনমানের উন্নতির বিকল্প নেই এবং কারিগরকে অভুক্ত, অবহেলিত রাখলে জাতি হয়ে ওঠবে অবনমিত ও নিম্নগামী। অত্যন্ত সীমিত আয়ের এ মানুষগুলোর জীবন দারুন কায়ক্লেশে স্থবির। পরিশেষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন, আসন্ন ঈদুল আযহার আগেই বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীবৃন্দের জন্য পূর্ণাঙ্গ উৎসবভাতা ঘোষণার মাধ্যমে তাদের মুখে হাসি ফোটাবেন ও বুকে সাহস জোগাবেন।
মো. আলী এরশাদ হোসেন আজাদ: সহকারি অধ্যাপক, কাপাসিয়া, গাজীপুর।
[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন]