টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন করতে হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিবন্ধীদের উপস্থিতি ও সক্রিয় অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। বিষয়টি আমলে নিয়ে প্রয়োজনে শিক্ষানীতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। গতকাল বুধবার ব্র্যাক সেন্টারে আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস উদযাপন-২০১৬ উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা এ সুপারিশ তুলে ধরেন। প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে সচেতনতা প্রসার ও প্রতিবন্ধীদের অধিকার সুরক্ষায় সুপারিশমালা তুলে ধরতে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক এই সেমিনারের আয়োজন করে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইআর) এর অধ্যাপক ড. এম. তারিক আহসান বলেন, ২০১২ সালের পর শিক্ষাক্ষেত্রে প্রতিবন্ধীদের প্রবেশগম্যতা কমেছে। এর কারণ, চলমান সামাজিক কাঠামোর সঙ্গে প্রতিবন্ধীরা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার অভাবে তাল মেলাতে পারছে না। এছাড়া শারীরিক অক্ষমতা তাদের স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ বলেন, প্রতিবন্ধীরাও সমাজের মানুষ। শারীরিকভাবে অক্ষম বলে তারা অবহেলার পাত্র নয়। কেবল একটু সহযোগিতা পেলেই প্রতিবন্ধীরা তাদের মেধার বিকাশ ঘটাতে পারে। সরকারি নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সমাজের মূলধারায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সম্পৃক্ত করতে সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তবে এক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগের সমন্বয় করতে হবে। বেসরকারি সংস্থা, সামাজিক সংগঠন, ব্যক্তি উদ্যোগের সমন্বয় করলে প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে গৃহিত পদক্ষেপ সফল হবে।
ব্র্যাকের শিক্ষা কর্মসূচির পরিচালক ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে আমাদের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রতিবন্ধীদের প্রবেশগম্যতা আরো বাড়াতে হবে। প্রতিবন্ধীদের অধিকার সুরক্ষার ক্ষেত্রে অনুষ্ঠানে বক্তারা বেশ কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে উচ্চ শিক্ষায় প্রতিবন্ধীদের প্রবেশগম্যতা বাড়ানো, ব্রেইল পদ্ধতির বইয়ের সংখ্যা বাড়ানো, অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের সাংকেতিক ভাষা বুঝানোর জন্য শিক্ষক সংখ্যা বৃদ্ধি করা, আধুনিক শিক্ষা উপকরণ চালু করা, প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষায়িত স্কুলের সংখ্যা বাড়ানো, অটিস্টিক শিশু ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, যে কোনো দেশের মোট জনসংখ্যার মধ্যে প্রতিবন্ধীদের হার ১৫ শতাংশ। ২০১৪ সালের সরকারি হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশে মোট প্রতিবন্ধী ১৬ লাখ ৯৫ হাজার। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক এ পর্যন্ত বিশেষ শিক্ষা ব্যবস্থার আওতায় দেশের ৬৪ টি জেলায় মোট ২৪৮৪১ জন প্রতিবন্ধী ছেলে-মেয়েকে প্রাইমারি ও প্রি-প্রাইমারি পর্যায়ে শিক্ষা প্রদান করেছে। শুধু শিক্ষা প্রদান নয়, স্থানীয় কমিউনিটি নেতাদের সহযোগিতায় সেলাই মেশিন, ছোট দোকান ও ভ্যান রিকশা, হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল প্রদানের মাধ্যমে ২০১৪ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ১০০ জন প্রতিবন্ধীকে স্বাবলম্বী হওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছে।
সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সুশান্ত কুমার প্রামাণিক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ব্র্যাকের ভাইস চেয়ারম্যান আহমদ মোশ্তাক রাজা চৌধুরী।