ঐতিহ্যবাহী স্কুলের মরণদশা - দৈনিকশিক্ষা

ঐতিহ্যবাহী স্কুলের মরণদশা

বাবুল হোসেন |

শিক্ষা ব্যবস্থায় মারাত্মক ধস নেমেছে ময়মনসিংহের এমপিওভুক্ত বেসরকারী শীর্ষস্থানীয় স্কুলগুলোতে। শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি, ব্যবস্থাপনা কমিটির লুটপাট, অযাচিত হস্তক্ষেপ ও রাজনৈতিক খবরদারিসহ শিক্ষা নিয়ে বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গী, শিক্ষকদের মধ্যে কোন্দল দলাদলি, কোচিং বাণিজ্য ও প্রাইভেট টিউশনি প্রবণতার কারণে এই ধসে ডুবতে বসেছে এক সময়কার নামকরা স্কুলগুলো। এতে করে শিক্ষানগরী বলে খ্যাত ময়মনসিংহের প্রতিষ্ঠিত স্কুলগুলোতে দেখা দিয়েছে চরম বিপর্যয় ও বিশৃঙ্খলা। শিক্ষার্থী সঙ্কটের সঙ্গে এসএসসির ফল বিপর্যয়ের কারণে-এসব স্কুল এখন মৃত্যুর প্রহর গুনছে!

স্থানীয় সূত্রগুলোর দাবি, এমন সুযোগে রাতারাতি পাড়ায় মহল্লায় গজিয়ে উঠেছে অনুমোদনবিহীন কোচিং নির্ভর ব্যক্তি মালিকানার অসংখ্য ভুঁইফোড় ‘ব্যবসায়িক স্কুল’। শিক্ষার নামে এসব বাণিজ্যিক স্কুলগুলোতে চলছে গলাকাটা ফি’র নামে অর্থ আদায়ের মহোৎসব। অব্যবস্থাপনার ঢেউ লেগেছে নগরীর সরকারী স্কুলগুলোতেও। ফলে নতুন প্রজন্মের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ রয়েছে ভয়াবহ ঝুঁকির মুখে। সরকারী একটি স্কুলের শিক্ষার্থীরা জড়িয়ে পড়েছে মাদকের মরণনেশাসহ খুন খারাবিতে। বাড়ছে বখাটেপনা ও স্কুল ফাঁকি দেয়ার প্রবণতাও। টিফিনের পর বেশিরভাগ স্কুল ফাঁকা হয়ে পড়ছে। স্কুলে পাঠদানের বদলে শিক্ষকদের মনোযোগ কোচিং বাণিজ্য ও বাসায় প্রাইভেট টিউশনি নিয়ে। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় শিক্ষাবিদরা। এমতাবস্থায় কিছুটা নড়েচড়ে উঠেছে স্থানীয় শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা। পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ তা পর্যবেক্ষণে মাঠে কাজ শুরু করেছেন জেলা শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তা। ময়মনসিংহের জেলা শিক্ষা অফিসার রফিকুল ইসলাম জানান, এমপিওভুক্ত বেসরকারী স্কুল পরিচালনা কমিটির খবরদারি এবং শিক্ষকদের চরম অবহেলাসহ কোচিং বাণিজ্য ও প্রাইভেট টিউশনির প্রবণতার কারণেই বেশিরভাগ স্কুল এখন মরণদশায় উপনীত হয়েছে। অনুমোদন নেই এরকম ৬৫টি ভুঁইফোড় স্কুল শনাক্তের পর ইতোমধ্যে ৪৫টি স্কুল সম্পর্কে শিক্ষা অধিদফতরে পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন পাঠানোর কথাও জানান এই শিক্ষা কর্মকর্তা। ময়মনসিংহ সদরে এমপিওভুক্ত সরকারী অনুমোদনপ্রাপ্ত স্কুল রয়েছে ৭৭টি। এই হিসেবে ময়মনসিংহ সদরে বেসরকারী মাধ্যমিক স্কুলের সংখ্যা ১৪২টি। এত বিপুলসংখ্যক স্কুলের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও এখন প্রশ্ন উঠেছে।

স্থানীয় সূত্রগুলো আরও জানায়, শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি, কোন্দল দলাদলিসহ কোচিং সেন্টার ও প্রাইভেট টিউশনিতে জড়িয়ে পড়া অদক্ষ শিক্ষকদের পাঠদানে অনীহা ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে ময়মনসিংহের এমপিওভুক্ত নামকরা বেসরকারী স্কুলগুলোর শিক্ষা ব্যবস্থায় মারাত্মক ধস দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে স্কুল প্রধান ও সহকর্মী শিক্ষকদের পাঠদানে আন্তরিকতার অভাব এবং প্রতিষ্ঠানের প্রতি কোন দরদ না থাকায় নগরীর বেশিরভাগ নামকরা স্কুলে শিক্ষার্থী সঙ্কটে অচলবস্থা বিরাজ করছে। প্রভাব পড়ছে ফলাফলেও। প্রবাহ বিদ্যা নিকেতন ও রাধা সুন্দুরী স্কুলে শিক্ষার্থীর উপস্থিতির হার এতটাই কম যে তা জানাতে বিব্রত শিক্ষকরা। এমপিওভুক্ত এই দুটি স্কুল কার্যত বন্ধ নাকি চালু এ নিয়ে সন্দিহান স্থানীয় শিক্ষা কর্মকর্তারা স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ রেখেছে। এমনিতেই এসব স্কুলে উপস্থিতির হার কম, তারওপর টিফিনের পর একদম ফাঁকা হয়ে পড়ছে। এ সময় স্কুলে কোন শিক্ষককেও খুঁজে পাওয়া যায় না।

নগরীর প্রাণকেন্দ্রের সিটি কলেজিয়েট, প্রবাহ বিদ্যা নিকেতন ও রাধা সুন্দুরী স্কুলে এ সময় মাদকাসক্তরা নিরাপদ ভেবে নেশার আড্ডা জমিয়ে তুলছে। স্থানীয় একাধিক প্রবীণ শিক্ষক অভিযোগ করে জানান, এমপিওভুক্ত বেসরকারী এসব স্কুলের বেশিরভাগই দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। স্কুল পরিচালনা কমিটি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন ছাড়া কোন স্কুল শিক্ষক নিয়োগ পেয়েছেন এমন নজির নেই! মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে অনৈতিক পন্থায় নিয়োগ পাওয়া এসব শিক্ষকদের অনেকেই কোচিং ও প্রাইভেট টিউশনি বাণিজ্যে জড়িত। এর বাইরে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীদের সরকারী বরাদ্দের বই ও এসএসসি পরীক্ষার সুযোগ দিয়েও হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের অর্থ। কোচিং সেন্টারের কাছে শিক্ষার্থী ‘ভাড়া’ দিয়ে কতিপয় স্কুলপ্রধান মাসোহারা নিচ্ছেন বলে প্রচার রয়েছে। মুসলিম হাই স্কুলসহ বেশ কয়েক স্কুলপ্রধানের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ রয়েছে। নৈতিক অবক্ষয়ের চরম শিখরে পৌঁছা এমন শিক্ষকদের কাছ থেকে ভাল কিছু আশা করা যায় না।

এরকম নানা উদাহরণ দিয়ে অবসরপ্রাপ্ত স্থানীয় প্রবীণ শিক্ষকরা জানিয়েছেন, এসব কারণে ডুবতে বসেছে ময়মনসিংহের এককালের নামকরা স্কুলগুলো। বিদ্যমান ব্যবস্থাপনায় এসব প্রতিষ্ঠানের ঘুরে দাঁড়াবার আর কোন সক্ষমতা নেই বলে মনে করেন প্রবীণ শিক্ষকরা। ময়মনসিংহের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও স্থানীয় মুকুল নিকেতন স্কুলের রেক্টর অধ্যাপক আমির আহাম্মদ চৌধুরী রতন আক্ষেপ করে জানান, স্কুল প্রধান ও সহকর্মীদের আন্তরিকতার অভাবে চোখের সামনে জৌলুস হারাচ্ছে নগরীর নামকরা ঐতিহ্যবাহী স্কুলগুলো। প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি আর শিক্ষকদের পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধের অভাবসহ স্কুল পরিচালনা কমিটির অযাচিত হস্তক্ষেপ, রাজনৈতিক খবরদারি এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাব স্কুলগুলোকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অথচ প্রয়োজনীয় ভৌত অবকাঠামো সুবিধা, খেলার মাঠ, প্রয়োজনীয় ক্লাসরুম ও সরঞ্জামাদিসহ সব সুবিধাই রয়েছে এমপিওভুক্ত এসব নামকরা স্কুলে। তারপরও উল্টোপথে যাচ্ছে বেশিরভাগ নামকরা স্কুল। প্রবীণ শিক্ষক শফিকুল ফেরদৌস জানান, প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির কারণে নামকরা স্কুলগুলোতে দক্ষ ও ভাল মানের কোন শিক্ষক নিয়োগ না পাওয়ায় নামকরা স্কুলগুলো ডুবতে বসেছে।

বিপরীতে কোচিং নির্ভর অনুমোদনহীন বাণিজ্যিক চরিত্রের স্কুলগুলো ভাল ফলাফল নিশ্চয়তা দানের চটকদার প্রলোভন দেখিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিক্ষার্থী সংগ্রহ করছে। এসব নিয়ে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কোন মনিটরিং না থাকায় শিক্ষাকে পণ্য করে কোচিং নির্ভর স্কুল খুলে ময়মনসিংহ নগরীকে শিক্ষা বিক্রির নৈরাজ্যের লীলাভূমিতে পরিণত করেছে একটি মাফিয়া চক্র-অভিযোগ এই প্রবীণ শিক্ষকের। শিক্ষাকে পণ্যের মোড়কে বিক্রি করা এরকম স্কুলগুলোর উদাহরণ হচ্ছে-আফরোজ খান মডেল স্কুল, প্রগ্রেসিভ মডেল স্কুল, আইডিয়াল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, ময়মনসিংহ বয়েজ মডেল স্কুল, মেট্রোপলিটন মডেল স্কুল, প্রতিশ্রুতি আইডিয়াল হাই স্কুল, হলিসোল কিন্ডার গার্টেন এ্যান্ড হাইস্কুল, প্রেসিডেন্সি মডেল স্কুল, লোটাস পাবলিক স্কুল, শাহীন স্কুল, ড্যাফোডিল মডেল স্কুল, ফার্স্ট মিডিয়া স্কুল, আলমগীর মডেল হাই স্কুল, জাস একাডেমি, প্রাইম ইন্টারন্যাশ স্কুল, নলেজ পাওয়ার মডেল স্কুল, মহানগর মডেল স্কুল ও আলবুরুজ জিনিয়াস মডেল স্কুল ও মোমেনশাহী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়সহ অনেক স্কুল।

ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কাতারে থাকা নামকরা স্কুলগুলোতে মৃত্যুঘণ্টা বাজছে ॥ গত ২৪ ফেব্রুয়ারি-২০১৮ তারিখ বেলা ১২টার দিকে ময়মনসিংহ জেলা শিক্ষা অফিসের সহকারী পরিদর্শক শহীদুল ইসলাম নগরীর এক সময়কার শীর্ষস্থানীয় মৃত্যুঞ্জয় স্কুল পরিদর্শনে গিয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ২৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৩ জন, সপ্তম শ্রেণীতে ১৯ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১০ জন, অষ্টম শ্রেণীতে ৪৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ১৪ জন, নবম শ্রেণীতে ৪৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ২৪ জন এবং দশম শ্রেণীতে ২৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ১৪ জন উপস্থিত দেখতে পান। টিফিনের পর নাকি উপস্থিতির এই চিত্র আরও হতাশাজনক- জানালেন স্কুলের খোদ প্রধান শিক্ষক রোকনুজ্জামান। স্কুল গেটে তালা দিয়েও নাকি আটকানো যাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা। কোচিং ও প্রাইভেট আছে বলে চলে যায় শিক্ষার্থীরা-এমন দাবিও এই প্রধান শিক্ষকের। চলতি এসএসসি পরীক্ষায় ৩৪ জন অংশ নিয়েছে। গত ২০১৭ সালে ১৯ জন এবং ২০১৬ সালে ১৭ জন অংশ নিলেও জিপিএ পায়নি কোন শিক্ষার্থী। পাসের হারও ছিল হতাশাজনক। অভিযোগ রয়েছে-বাইরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে মৃত্যুঞ্জয় স্কুলের নামে এসএসসি পরীক্ষার সুযোগ দিয়ে প্রতি বছর প্রধান শিক্ষক এককভাবে হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অঙ্কের অর্থ।

সহকর্মীদের পর্যন্ত এর কোন ভাগ দেন না তিনি। এ নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে সহকর্মীদের সঙ্গে স্কুলপ্রধানের। এসব নানা কারণে স্কুলটিতে মারাত্মক শিক্ষার্থী সঙ্কট দেখা দিয়েছে। দিন দিন এই সঙ্কট প্রকট হয়ে উঠলেও কোন বিকার নেই স্কুল প্রধান ও সহকর্মীদের। বর্তমানে স্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত মাত্র ১৫৪ শিক্ষার্থী রয়েছে। অথচ আশির দশক পর্যন্ত এই স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল অভাবনীয়-এক হাজার চারশ’য়ের বেশি। এই স্কুলের এসএসসি ফলাফলের প্রতিযোগিতা ছিল সরকারী জিলা স্কুলে সঙ্গে। সর্বশেষ প্রধান শিক্ষক গোপীনাথ দত্তের মেয়াদ পর্যন্ত শিক্ষার্থী ও স্কুলের ফলাফল ছিল ঈর্ষণীয়। সাবেক প্রধান শিক্ষক চিন্তা হরণ মজুমদারের মেয়াদে (১৯০৫-১৯৪৫ পর্যন্ত) স্কুলের খ্যাতি ছিল আকাশচুম্বী-এমন দাবি স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রদের। স্কুলের নবম ও দশম শ্রেণীতে চারটি করে সেকশন ছিল। আর প্রতিটি সেকশনেই ছাত্র সংখ্যা ছিল ৬০ জনের বেশি! প্রচার রয়েছে প্রধান শিক্ষক চিন্তা হরণ মজুমদার ১৪শ’ ছাত্রের নাম মুখস্ত বলতে পারতেন! মৃত্যুঞ্জয় স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম জানান, ১৯৭৬ সালের পর থেকে স্কুলে ধস নামতে শুরু করে। আর চূড়ান্ত পরিণতি ঘটে বিগত ১৯৯০ সালের পর থেকে।

এমন বিপর্যের কারণ হিসেবে স্কুলের একাধিক শিক্ষকের যুক্তি হচ্ছে- স্থানীয় বিদ্যাময়ী, জিলা ও গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি সরকারী স্কুলগুলোতে দুটি শিফট চালুসহ স্কুলের চারপাশে আধুনিক মানের ও ডিজিটাল চরিত্রের বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এমতাবস্থায় অভিজাত ও মধ্যবিত্ত সচেতন পরিবারের সন্তানদের এই স্কুলে ভর্তি করছেন না কোন অভিভাবক। ফলে মেধাবী ও মানসম্পন্ন কোন ছাত্র পাচ্ছেন না তারা। হতদরিদ্র ও নি¤œবিত্ত পরিবারের যেসব ছাত্রকে ভর্তি করা হচ্ছে-তাদের পাস করানোই দায় হয়ে পড়েছে শিক্ষকদের। ফলে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না স্কুলটি। স্থানীয় অভিভাবকদের অভিযোগ- শিক্ষকদের পাঠদানে অনীহার কারণেই মারাত্মক ছাত্র সঙ্কটে ভুগছে এক সময়কার নামকরা এই স্কুলটি।

আক্ষেপের সঙ্গে কিছুটা গর্ব করে স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট জহিরুল হক জানান, বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের সেরা নামকরা স্কুলের একটি ছিল মৃত্যুঞ্জয়। অনাথ বন্ধুগুহ তার বাবা মৃতুঞ্জয় গুহের নামে ১৯০১ সালে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। অমীয় ভূষণ গাঙ্গুলি ছিলেন এর প্রথম প্রধান শিক্ষক। খ্যাতিমান শিক্ষকদের পাঠদানে কড়াকড়ি চরিত্রের এই স্কুলটিতে আশির দশক পর্যন্ত ছাত্র সংখ্যা এবং ফলাফল ছিল ঈর্ষণীয় অবস্থানে। উপমহাদেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক সাহিত্যিক ও রাজনীতিক প্রয়াত আবুল মনসুর আহম্মদ ছিলেন এই স্কুলের প্রথম মুসলিম ছাত্র। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ও নিয়ন্ত্রণে ছিল মৃত্যুঞ্জয় স্কুলের কার্যক্রম। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক এই স্কুলের ছাত্র ছিলেন। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, সাবেক রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহম্মদ, বিশিষ্ট সাংবাদিক বজলুর রহমান, কথা সাহিত্যিক রাহাত খান, সংসদে বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদের বাবা খান বাহাদুর উমেদ আলী, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের প্রধান ড. অরবিন্দ গোস্বামী, ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানসহ অবিভক্ত ভারতের বহু খ্যাতিমান সাহিত্যিক, রাজনীতিক, সাংবাদিক, আইনজীবী ও পদস্থ কর্মকর্তা এই স্কুলের ছাত্র ছিলেন।

স্থানীয় সূত্রগুলো আরও জানায়, ঐতিহ্য হারাতে বসা নগরীর নামীদামী স্কুলগুলোর তালিকায় থাকা অপর স্কুলগুলো হচ্ছে- সিটি কলেজিয়েট স্কুল, এ্যাডওয়ার্ড ইনস্টিটিউট, মহাকালী গার্লস স্কুল, নাসিরাবাদ কলেজিয়েট স্কুল, রাধা সুন্দুরী গার্লস স্কুল, মুসলিম গার্লস হাই স্কুল, মুসলিম হাই স্কুল, প্রবাহ বিদ্যানিকেতন, কুমার উপেন্দ্র বিদ্যাপীঠ, নাসিরাবাদ গার্লস স্কুল ও ময়মনসিংহ উচ্চ বিদ্যালয়। ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম র‌্যাংলার আনন্দ মোহন বসুর পৈত্রিক ভিটার প্রায় এক একর জমিতে ময়মনসিংহ নগরীর প্রাণকেন্দ্রে ১৮৮৩ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় সিটি কলেজিয়েট স্কুল। ক্যালকাটা সিটি কলেজিয়েট স্কুল এ্যান্ড কলেজের বাইরে এই শাখার প্রথম প্রধান শিক্ষক ছিলেন গিরিশ চন্দ্র চক্রবর্তী। প্রতিষ্ঠা লগ্নে এর ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা কত ছিল জানা না গেলেও নব্বই দশক পর্যন্ত ময়মনসিংহ নগরীর নামকরা এই স্কুলের ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা ও ফলাফল ছিল অভাবনীয়-এমন দাবি স্কুলের প্রধান শিক্ষক টিআইএম বদরুদ্দোজা সিদ্দিক ফরহাদের। এ সময়ের ব্যবধানে ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা কমে এখন ২০০ জন দাবি করা হলেও উপস্থিতির হার ৫০ শতাংশের বেশি নয়। গত ওয়ান ইলেভেনের সময় স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ইকবাল মামুনের বিরুদ্ধে সাড়ে আট লাখ তসরুফের অভিযোগ উঠলে তদন্তের পর আদায় করা হয় পাঁচ লাখ টাকা। টাকা দিয়ে জেল থেকে ছাড়া পান স্কুল পরিচালনা কমিটির এই সভাপতি। অনেক স্কুলের বিরুদ্ধেই এরকম অর্থ তসরুফের অভিযোগ রয়েছে।

সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় পড়েছে নগরীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত নামকরা রাধা সুন্দরী ও প্রবাহ বিদ্যা নিকেতন। প্রায় এক একর জমিতে ১৯২৭ সালে প্রতিষ্ঠিত পুরনো রাধা সুন্দরী স্কুল এখন প্রায় ছাত্রী শূন্য বললেই চলে। প্রথম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত চালু স্কুলটিতে বর্তমানে ১৫০ জন ছাত্রী থাকার কথা বলা হলেও উপস্থিতির হার সিকিভাগের চেয়েও কম বলে জানা গেছে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি দুপুরে ফাঁকা স্কুলে গিয়ে দেখা গেছে মাদকাসক্তরা নেশার আসর জমিয়ে বুদ হয়ে পড়ে আছে। স্কুলের ছাত্রী হাজিরা খাতায় ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ২৮ জনের বিপরীতে ৩ জন, সপ্তম শ্রেণীতে ২৭ জনের বিপরীতে ৪ জন, অষ্টম শ্রেণীতে ১২ জনের বিপরীতে ৪ জন, নবম শ্রেণীতে ১১ জনের বিপরীতে ৩ জন ও দশম শ্রেণীতে ১৯ জনের বিপরীতে ৬ জন ছাত্রী উপস্থিত ছিল। স্কুলের মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের কম্পিউটার, ল্যাপটপসহ প্রজেক্টর বিকল বেশ আগে থেকেই। কম্পিউটার শিক্ষকসহ চারজন শিক্ষকের পদ খালি দীর্ঘদিন ধরে। টিফিনের পর স্কুলে শিক্ষক কিংবা ছাত্রী কারও খুঁজে পাওয়া যায় না। ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রবাহ বিদ্যা নিকেতনের অবস্থা সবচেয়ে করুণ। স্কুলটি চালু নাকি বন্ধ বলতে পারেনি স্থানীয় আশপাশের কোন বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী। বেশিরভাগ সময় তালাবদ্ধ স্কুলে মাদকাসক্তরা আড্ডা জমিয়ে রাখে। ২২ ফেব্রুয়ারি স্কুলে গিয়ে দেখা গেছে দশম শ্রেণীতে ৩ জন, ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ২ জন, সপ্তম শ্রেণীর ২ জন, অষ্টম শ্রেণীর ৭ জন শিক্ষার্থী বসে আছে। নবম শ্রেণীতে এ সময় কাউকে পাওয়া যায়নি। স্কুলের এমপিওভুক্ত পাঁচজন শিক্ষককে অফিস কক্ষে অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আরিফ রব্বানী জানান, নগরীর সব স্কুলেরই এমন অবস্থা! শিক্ষক অভিভাবক আর কমিটির দ্বন্দ্বে মহাকালী গার্লস স্কুলটি অস্তিত্ব সঙ্কটে ভুগছে।

নিয়োগ কেলেঙ্কারি: ময়মনসিংহ নগরীর নামকরা বেশিরভাগ স্কুলেই রয়েছে নিয়োগ কেলেঙ্কারির কাহিনী। এর মধ্যে নাসিরাবাদ কলেজিয়েট স্কুল, মুসলিম হাই স্কুল, সিটি কলেজিয়েট স্কুল, মৃত্যুঞ্জয় স্কুল, গলগন্ডা হাজী জালাল উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়, এডওয়ার্ড ইনস্টিউিউট, মুসলিম গার্লস স্কুল, মহিলা সমিতি উদয়ন হাই স্কুল, নাসিরাবাদ গার্লস স্কুল, ময়মনসিংহ উচ্চ বিদ্যালয়, পাটগুদাম গার্লস স্কুলসহ বিভিন্ন স্কুলের নিয়োগ বাণিজ্য নিয়ে মুখরোচক কাহিনীও রয়েছে। প্রচার রয়েছে নাসিরাবাদ কলেজিয়েট স্কুলে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে ঘুষের ডাক উঠেছিল ৩০ লাখ টাকা! তবে সিটি কলেজিয়েট স্কুল, মৃত্যুঞ্জয় স্কুল ও পাটগুদাম গার্লস স্কুলে অবশ্য এই অঙ্ক কিছুটা কম ছিল। তবে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের সূত্র জানিয়েছে এসব স্কুলে টাকা লেনদেনের এই অঙ্ক কোনটাতেই ৫/৬ লাখ টাকার নিচে ছিল না। নাসিরাবাদ কলেজিয়েট স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক গোলাম রব্বানী জানান, তার স্কুলে প্রধান শিক্ষক নিয়োগে ৪ বার বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছিল। এ সময় তিনিসহ ১৪ জন প্রধান শিক্ষক পদে আবেদন করেছিলেন। মৃত্যুঞ্জয় স্কুলের প্রধান শিক্ষক রোকনউদ্দিন জানান, নিয়োগ নিয়ে বিভিন্ন সময় নানা কথা হলেও টাকা লেনদেনের কোন প্রমাণ নেই।

উল্টো চিত্র: নগরীর নামকরা স্কুলগুলো ডুবতে বসলেও নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে কয়েকটি স্কুল। এর মধ্যে মুকুল নিকেতন, প্রিমিয়ার আইডিয়াল হাই স্কুল, উদয়ন মহিলা সমিতি স্কুল, বেসরকারী ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের শিক্ষার্থীর সংখ্যা, ফলাফল ও ব্যবস্থাপনা অনেকের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে। মুকুল নিকেতন ও প্রিমিয়ার আইডিয়াল হাইস্কুলে শিক্ষার্থীর চাপ এতটাই বেশি যে স্থান সংকুলান হচ্ছে না। মুকুল নিকেতনে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছয় হাজারের বেশি। আর প্রিমিয়ার আইডিয়ালে দুই শিফটে এই সংখ্যা ১৭২১ জন। প্রিমিয়ার আইডিয়ালের প্রধান শিক্ষক চান মিয়া জানান, আন্তরিক ও দক্ষ শিক্ষকম-লীর পাঠদান এবং স্কুল প্রধানসহ স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারির ফলে প্রতিকূল অবস্থা মোকাবেলা করেই সাফল্যে পোছাতে সক্ষম হয়েছেন তারা। গত ২০১৭ সালে এসএসসিতে পাসের হার ছিল এই স্কুল শতভাগ। ২৬৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে গত ২০১৭ সালে ১৪৩ জন শিক্ষার্থী জিপিএ ফাইভ পায় এই স্কুলে।

অনুমোদনহীন ভুঁইফোড় স্কুল কোচিংয়ের রমরমা বাণিজ্য: নামকরা স্কুলগুলোর মরণদশার সুযোগে রাতারাতি গজিয়ে উঠা ভুঁইফোড় স্কুল আর কোচিং সেন্টারগুলো রমরমা বাণিজ্যে মেতে উঠেছে। শিক্ষার নামে অর্ধশতাধিক ভুঁইফোড় স্কুল আর শতাধিক কোচিং সেন্টার মালিকেরা লোভনীয় অফার ও চটকদার প্রচার চালিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের অর্থ। এর ভাগ ঢালছে নানা মহলে। অভিযোগ রয়েছে বিদ্যাময়ী সরকারী বালিকা বিদ্যালয়, জিলা স্কুল ও গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুলের অর্থলোভী একশ্রেণীর শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যে জড়িত। কোচিং আর টিউশনি বাণিজ্য করে ময়মনসিংহ নগরীতে অনেকে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনেছেন। ময়মনসিংহ নগরীতে আলীশান বাড়ি আর ফ্ল্যাটও রয়েছে অনেকে শিক্ষকের।

স্থানীয় সূত্র জানায়, শিক্ষা নগরী বলে খ্যাত ময়মনসিংহে রাতারাতি গড়ে উঠেছে অসংখ্য ভুঁইফোড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অনুমোদনহীন এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ভর্তি নিয়ে বাণিজ্যে মেতে উঠেছে। অভিভাবকদের জিম্মি করে চলছে গলাকাটা ভর্তি ফি আদায়ের মহোৎসব। বিএনপি ও জামায়াতপন্থী মালিকানাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ভর্তি ফি আদায়ের ক্ষেত্রে সরকারের নিয়ম-নীতিমালার কোন তোয়াক্কা করছে না। সরকারের জারি করা নিয়মের অতিরিক্ত ও বাড়তি ফি আদায় করছে প্রকাশ্য সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে। এসব প্রতিষ্ঠানে সরকারী বিধিমালা না মেনে শিক্ষক নিয়োগেও রয়েছে মোটা অঙ্কের বাণিজ্যের অভিযোগ। অথচ অবৈধভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনাসহ খেয়াল খুশিমতো মোটা অঙ্কের ভর্তি ফি আদায়ের এ বিষয়টি দেখার কেউ নেই ময়মনসিংহে! অভিযোগ উঠেছে, এমপিওভুক্ত অনুমতিপ্রাপ্ত একশ্রেণীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান অনুমোদনহীন এসব ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠানকে সহায়তা দিচ্ছে।

নগরীর ৬১ নম্বর রামবাবু রোডে গত ২০১৬ সাল থেকে অনুমোদন ছাড়াই ভাড়া করা একটি বাসায় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে আফরোজ খান মডেল স্কুল। ব্যক্তিগত নামে স্কুল পরিচালনার ক্ষেত্রে জেলা শিক্ষা অফিসার ও স্কুল প্রধানের যৌথ হিসাবে ১০ লাখ টাকার ফিক্সড ডিপোজিটসহ (এফডিআর) স্কুলের নামে নিজস্ব জায়গা ও ভবন থাকার নির্দেশনা রয়েছে। অথচ এর কোনটিই নেই আফরোজ খান মডেল স্কুলের। ডাচ বাংলা ব্যাংকে স্কুলের সাধারণ তহবিলে নামে ১০ লাখ টাকা রাখা হয়েছে আফরোজ উদ্দিন খানের ব্যাংকের ব্যক্তিগত হিসাব নম্বরে। এই টাকা ব্যাংকের হিসাবে আছে কিনা এ নিয়েও সন্দিহান অনেকে। ময়মনসিংহ জেলা শিক্ষা অফিসার রফিকুল ইসলাম বিস্ময় প্রকাশ করে জানান, এটি গুরুতর অনিয়ম। অনুমোদন ছাড়া নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে কীভাবে স্কুলটি চলছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি। বিদ্যাময়ী সরকারী বালিকা বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সাবেক শিক্ষক আফরোজ উদ্দিন খান স্কুলটির প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি ছিলেন কোচিং নির্ভর প্রগ্রেসিভ মডেল স্কুলে। বর্তমানে ৩য় থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত চালু স্কুটির শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক হাজার ১৬২ জন। আর শিক্ষকের সংখ্যা অর্ধশতাধিক। চার হাজার টাকা উন্নয়ন ফিসহ ভর্তির ক্ষেত্রে আদায় করা হচ্ছে ৬৮০০ টাকা! এটি অস্বাভাবিক বলে জানিয়েছেন অভিভাবকরা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২০১৭ সালের ১৩ ডিসেম্বর সর্বশেষ জারি করা পরিপত্রে বলা হয়, কোন প্রতিষ্ঠান উন্নয়নখাতে ৩০০০ টাকার বেশি নিতে পারবে না।

নগরীর গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আব্দুল্লা হেল শাফী পরিচালিত কোচিং নির্ভর প্রগ্রেসিভ মডেল স্কুল পাঠদানের অনুমোদন পেয়েছে ২০১৩ সালে। এর আগে ২০০৬ সাল থেকে স্কুলটি শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে অনুমোদন ছাড়াই। ভাড়া করা বাসাতে পাঠদান চলা স্কুলে বর্তমানে ১৬০০ এর বেশি শিক্ষার্থী ও ৭১ জন শিক্ষক রয়েছে। অনুমোদনের শর্তে বলা আছে, প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব জায়গায় ভবন থাকতে হবে। বাড়তি ও অতিরিক্ত ফী আদায় প্রশ্নের জবাবে আব্দুল্লাহ হেল শাফী বলেছেন, সবাই নিচ্ছে বলে তিনিও নিচ্ছেন। নাম প্রকাশ করা হবে না শর্তে এই স্কুলের এক অভিভাবক জানালেন, ভর্তির জন্য ৬৫০০ টাকা এবং সপ্তম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সাত হাজার টাকা নেয়া হচ্ছে। আফরোজ খান মডেল ও প্রগ্রেসিভ মডেল স্কুলের বিরুদ্ধে বাড়ি ভাড়া প্রদানে ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ উঠেছে। পৌরসভার ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন ও পৌরকর প্রদানও হালনাগাদ নেই এই দুটি স্কুলের। হলিসোল কিন্ডার গার্টেনে একই সঙ্গে কোচিং ও কিন্ডার গার্টেন স্কুল পরিচালনা করা হচ্ছে। বিদ্যাময়ীতে ভর্তি কোচিংয়ের নামে হলিসোলে ভর্তি ফি নেয়া হচ্ছে ৫ হাজার টাকা। এর সঙ্গে মাসিক এক হাজার টাকার বেতন তো আছেই। শিক্ষা নিয়ে এমন নৈরাজ্য বন্ধ করতে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন এমপিওভুক্ত ও অনুমতিপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানসহ শিক্ষক সমিতির স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। তারপরও বন্ধ হয়নি বেপরোয়াভাবের অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম।

কোচিং বাণিজ্যে জড়িত সরকারী স্কুলের শিক্ষক: প্রাইভেট টিউশনি করলেও এমপিওভুক্ত বেসরকারী স্কুল শিক্ষকরা কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত নয় বলে দাবি করে ময়মনসিংহ জেলা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং প্রিমিয়ার আইডিয়াল স্কুলের প্রধান শিক্ষক চান মিয়া অভিযোগ করে জানান, নগরীর সরকারী স্কুলের বেশিরভাগ শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। এছাড়া ভাড়া করা বাসা বাড়ি কিংবা নিজের বাসায় অনেকে খুলে বসেছেন কোচিং চরিত্রের টিউশনি সেন্টার। এসব সেন্টারে নিজ স্কুলের শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ানো হচ্ছে। নগরীর বাউন্ডারি রোড, নাহা রোড, পিওনপাড়া, জিলা স্কুল রোড, নতুন বাজার সাহেব আলী রোড, সানকিপাড়া নয়নমনি মার্কেট, আমলা পাড়াসহ বিদ্যাময়ী ও জিলা স্কুলের আশপাশের বাসা বাড়িতে চোখে পড়বে এরকম অসংখ্য কোচিং সেন্টার ও টিউশনির সাইনবোর্ড। বিদ্যাময়ী স্কুলের গণিতের শিক্ষক আলতাফ হোসেন ও একই স্কুলের তার স্ত্রী সুরাইয়া আরজু আকুয়া লিচু বাগান এলাকায় এবং আলতাফ হোসেনের ভায়রা ভাই জিলা স্কুলের গণিত শিক্ষক তাহসিন রেজা ছন্দ ও শ্যালিকা বিদ্যাময়ী স্কুলের ফারজানা আরজু সানকিপাড়া শেষ মোড় এলাকায়, জিলা স্কুলের ভৌত বিজ্ঞানের আশরাফুল হক ভুইয়া জিলা স্কুল রোডে, বিদ্যাময়ীর ভৌত বিজ্ঞানের শিক্ষক আনোয়ার কাদের সানকিপাড়া নয়নমনি মার্কেটের কাছে, একই স্কুলের ফিজিক্যাল শিক্ষক অজিত দাস নতুন বাজার বাগান বাড়ি এলাকায়, জিলা স্কুলের ইংরেজী শিক্ষক রোকন উদ্দিন নাহা রোডে, একই স্কুলের গণিতের শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমান জিলা স্কুলের বাইলেন রোডে এবং বিদ্যাময়ীর ফিজিক্যাল শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক, গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরির আহসান হাবীব ও ভালুকা সরকারী বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম চৌধুরী বিদ্যাময়ীর গলির ভেতর প্রিপেটরি কোচিং, গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরির ইংরেজী শিক্ষক নুরুল ইসলাম আমলাপাড়া ক্যাপিটাল কলেজের ৩য় তলায় এবং প্রগ্রেসিভ হাই স্কুলের গলিতে গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরির আর্টের শিক্ষকসহ বিদ্যাময়ী, জিলা ও গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি সরকারী স্কুলের অর্ধশত শিক্ষক বাসায় ও কোচিংয়ে নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ ব্যাপকহারে ছাত্র পড়ানোর সঙ্গে জড়িত বলে জানিয়েছে স্থানীয় অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। বিদ্যাময়ীর মঞ্জুরুল হকসহ অনেকে আপতত প্রাইভেট বন্ধ রখালেও সময় সুযোগ মতো ফের চালু করবে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। এসব শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে ঘুরেফিরে ময়মনসিংহের সরকারী স্কুলে শিক্ষকতার পাশাপাশি কোচিং ও প্রাইভেট টিউশনি বাণিজ্য করে ময়মনসিংহ নগরে বাসাবাড়ি ও ফ্ল্যাটের মালিক বনেছেন। তাপস মজুমদারের ৫ তলা, আলতাফ হোসেনের ৫ তলা বাড়িসহ অনেকের ফ্ল্যাট রয়েছে ময়মনসিংহ নগরীতে।

সৌজন্যে: জনকণ্ঠ

রোজায় স্কুল: শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম, নজরদারিও ঢিলেঢালা - dainik shiksha রোজায় স্কুল: শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম, নজরদারিও ঢিলেঢালা পেনশন প্রজ্ঞাপনে উদ্বিগ্ন ঢাবি উপাচার্য - dainik shiksha পেনশন প্রজ্ঞাপনে উদ্বিগ্ন ঢাবি উপাচার্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গবেষণা অনুদান করমুক্ত - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গবেষণা অনুদান করমুক্ত ব্রাজিলে তীব্র গরমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ - dainik shiksha ব্রাজিলে তীব্র গরমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের নামে প্রতারণা, সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের নামে প্রতারণা, সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উচ্চ মাধ্যমিকের সমমান পেলো ‘হেট’ - dainik shiksha উচ্চ মাধ্যমিকের সমমান পেলো ‘হেট’ আটকের ১৩ দিন পরেও বরখাস্ত হননি অধ্যক্ষ - dainik shiksha আটকের ১৩ দিন পরেও বরখাস্ত হননি অধ্যক্ষ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0041708946228027