সরকারি বিদ্যালয় ও কলেজবিহীন উপজেলায় একটি করে স্কুল-কলেজকে সরকারি করার ঘোষণা দেয় সরকার। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এখন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৮৫টি বেসরকারি কলেজকে জাতীয়করণ করার প্রাথমিক সম্মতি দিয়েছেন। জাতীয়করণের লক্ষ্যে সম্মতি দেয়ার পরও বিভিন্ন কারণে গত ৪ মাসে সরকার ১৭টি কলেজের নাম পরিবর্তন করেছে। আর জাতীয়করণের জন্য নতুন পে-স্কেল অনুযায়ী কি পরিমাণ টাকা লাগবে তার হিসাব দেয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে। চলতি অর্থবছরে কয়টি কলেজকে সরকারি করা হবে এবং আত্তীকৃতের বেলায় বেসরকারি কলেজে কর্মরত এমপিও এবং ননএমপিওভুক্ত শিক্ষকদের কি হবে- সেসব বিষয়েও শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানাতে বলা হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওই চিঠিতে। চিঠির কপি দৈনিকশিক্ষার হাতে রয়েছে।
এদিকে ৮টি কলেজ জাতীয়করণের জন্য ঘোষিত তালিকাকে মানতে পারেনি। জাতীয়করণের ঘোষিত তালিকায় তাদের নাম না থাকায় কলেজগুলো ক্ষুব্ধ হয়। এ কারণে ৮টি কলেজ উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করে। প্রত্যেকটি রিট আবেদনে শিক্ষাসচিবকে বিবাদী করা হয়। আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বাতিলের তালিকায় থাকলেও মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা অধিদপ্তরের একটি চক্র তালিকা গোপণ রেখে পার্টির কাছ থেকে আর্থিক ফায়দা লুটছে বলে জানা গেছে। বাতিলের জন্য চিঠি আসা মাত্রই তা সংশ্লিষ্ট শাখায় পাঠাতে হয়, কিন্তু তা না পাঠিয়ে গোপন রাখা হচ্ছে।
রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বলেছেন, বিষয়গুলো নিষ্পত্তি করে আদালতকে জানাতে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, জেনেবুঝে পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ নিয়েই প্রধানমন্ত্রী কলেজগুলোর জাতীয়করণের ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু কিছু কলেজ প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্ত মানতে পারেনি। এমনকি কলেজগুলো দেশের প্রধানমন্ত্রীর সম্মতিকেও চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বসে। অথচ এসব কলেজগুলোর উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। জাতীয়করণের তালিকায় থাকতে না পেরে রিট আবেদন করা কলেজগুলো হলো- পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ মহিলা ডিগ্রি কলেজ (রিট নং-১০২০০/১৬), রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির সোনাপুরের মীর মোশাররফ হোসেন ডিগ্রি কলেজ (রিট নং-১০৫০৩/১৬), ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার ইসলামপুরের কাজী শফিকুল ইসলাম কলেজ (রিট নং-১০৩৬৪/১৬), বরিশালের উজিরপুরের আলহাজ বি এম খান কলেজ (রিট নং-১৩৫৭০/১৬), বরগুনার আমতলী কলেজ (রিট নং-১১৭৪৯/১৬), হবিগঞ্জের বাহুবল কলেজ (রিট নং-১২০৫০/১৬) এবং রাজশাহীর এএইচএম কামরুজ্জামান ডিগ্রি কলেজ (রিট নং-১৩৯৯৬/১৬)।
এ পর্যন্ত তিনটি ধাপে প্রকাশ তালিকার মধ্যে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ মহিলা ডিগ্রি কলেজ এবং রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির সোনাপুরের মীর মোশাররফ হোসেন ডিগ্রি কলেজটি ছিল। কিন্তু পরে কলেজ দুটি তালিকা থেকে বাদ দিয়ে ওই এলাকার অন্য দুটি কলেজকে জাতীয়করণের জন্য নাম ঘোষণা দেয়া হয়। এরপর কলেজ দুটি আদালতে রিট আবেদন করে। অন্য কলেজগুলোর রিট আবেদনের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট উপজেলায় জাতীয়করণের জন্য তাদের কলেজকে বাদ দিয়ে অন্য কলেজকে জাতীয়করণ করা হয়েছে। এ কারণে কলেজগুলো রিট আবেদন করেছে। জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রত্যেকটি রিট আবেদনের কপি আদালত থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এখন সবগুলো আবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। তিনি বলেন, সরকার পর্যাপ্ত তথ্য নিয়েই কলেজগুলো জাতীয়করণের ঘোষণা দিয়েছে। কাজেই আদালতে সরকার বিষয়গুলো মোকাবিলা করবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের চিঠি : প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আদেশের পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয়করণের জন্য কলেজগুলোর নাম ঘোষণা করা হলেও অর্থ মন্ত্রণালয় বেশ কিছু তথ্য চেয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে। সেই চিঠিতে অর্থ মন্ত্রণালয় জানতে চেয়েছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে কয়টি প্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ করা হবে, তার চূড়ান্ত তালিকা। এসব প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ হলে কি পরিমাণ টাকা লাগবে- তার পরিসংখ্যান, সরকারি হওয়ার অপেক্ষায় থাকা কলেজগুলোতে এমপিওভুক্ত ও ননএমপিওভুক্ত কর্মরতদের সংখ্যা কত তার তালিকা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় আরো জানতে চায়, গত জুলাই থেকে ২২ আগস্ট পর্যন্ত অর্থবিভাগে পাওয়া প্রস্তাবিত ৩৫০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে যে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের প্রাথমিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামের চূড়ান্ত তালিকা। এ ছাড়াও প্রস্তাবিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠার সন, শিক্ষার্থীর সংখ্যা, নিজস্ব জমির পরিমাণ, ভবনের আয়তন, এমপিওভুক্ত কি না, এমপিওভুক্ত জনবল সংখ্যা এবং এর বিপরীতে বার্ষিক আর্থিক সংশ্লেষ, নন-এমপিওভুক্ত জনবল সংখ্যা এবং এর বিপরীতে আর্থিক সংশ্লেষ, সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদিত সার-সংক্ষেপ আছে কি না এবং থাকলে এর সত্যায়িত কপি, প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট উপজেলায় অন্যকোনো সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, উচ্চবিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় অথবা কলেজ আছে কি না, থাকলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নাম ঠিকানা শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কথা বলা হয়েছে। প্রস্তাবিত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জাতীয়করণের পর শুধুমাত্র এমপিওভুক্ত জনবলকে আত্মীকরণ করা হবে কি না এবং ননএমপিওভুক্ত জনবলের ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তও জানতে চেয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের দেয়া ওই চিঠিটি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। সেখানেই এখন কলেজগুলোর সরকারিকরণে নতুন পে-স্কেল অনুযায়ী কি পরিমাণ টাকা খরচ হবে তার হিসাব তৈরি করা হচ্ছে।
জাতীয়কৃত শিক্ষকদের ক্যাডারভুক্ত করা নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তকে চ্যালঞ্জ জানিয়ে ইতিমধ্যে সভা-সমাবেশ করেছে সরকারি কলেজ ও মাদ্রাসা শিক্ষকদের একটি অংশের সংগঠন বি সি এস সাধারণ শিক্ষা সমিতি।
সমিতির ব্যানারে ৮ ডিসেম্বর শিক্ষা অধিদপ্তর ক্যাম্পাসে সমাবেশ করেছেন। অধিদপ্তরের শহীদ মিনারে জুতা পায়ে উঠেছেন নেতৃবৃন্দ। নজিরবিহীনভাবে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. এস এম ওয়াহিদুজ্জামান ওই সমাবেশে সমিতির দাবীর প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।