ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসম্পাদক দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর মরদেহ কবর থেকে তুলে ফের ময়নাতদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধানকে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম শিপলু কুমার দে আজ মঙ্গলবার বিকেলে এ আদেশ দেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) চট্টগ্রামের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. অহিদুর রহমান বলেন, নিহত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে আদালতে মামলা করা হলে সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেন। ফের ময়নাতদন্ত করতে কবর থেকে দিয়াজের লাশ উত্তোলনের জন্য মঙ্গলবার আদালতে আবেদন করা হয়।
আদালত একজন নির্বাহী হাকিমের উপস্থিতিতে কবর থেকে লাশ উত্তোলনের জন্য চট্টগ্রাম জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধানকে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে নিহত দিয়াজের লাশের ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেন। নিহত ব্যক্তির পরিবার এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপ করে কয়েক দিনের মধ্যে কবর থেকে লাশ উত্তোলন করা হবে।
গত ২০ নভেম্বর রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ২ নম্বর গেট এলাকার নিজ বাসা থেকে দিয়াজের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর ২২ দিন আগে দিয়াজসহ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের চার নেতার বাসায় তাণ্ডব চালানো হয়। ৯৫ কোটি টাকার দরপত্রের ভাগ-বাঁটোয়ারাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতির অনুসারী নেতা-কর্মীরা ওই হামলা চালান বলে অভিযোগ ওঠে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি ভবন নির্মাণের দরপত্রকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে আড়াই মাস ধরে একের পর এক পাল্টাপাল্টি হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। এই সময়ের মধ্যে অন্তত ছয়বার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। এতে ১০ জন আহত হয়েছেন। দিয়াজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পরে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে গেলেও ক্যাম্পাসে তাঁর বেশ প্রভাব ছিল।
পরে পুলিশ সাংবাদিকদের জানায়, দিয়াজকে হত্যা করা হয়েছে, এমন আলামত ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে মেলেনি। তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে মত দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তবে এ প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে দিয়াজের পরিবারসহ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একটি অংশ।
গত ২৪ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলনে দিয়াজের বোন আইনজীবী জুবাঈদা ছরওয়ার চৌধুরী বলেন, এটা যে হত্যাকাণ্ড, তা স্পষ্ট। কারণ, দিয়াজকে মেরে লাশ ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। আর ঘরের বেলকনি দিয়ে ঘাতকেরা মই ব্যবহার করে নির্মাণাধীন ভবন দিয়ে পালিয়ে যায়। তার মোবাইল ফোনটিও পাওয়া যাচ্ছে না।
সংবাদ সম্মেলনের আগে দিয়াজের মা জাহেদা আমিন চৌধুরী বাদী হয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতিসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম আদালতে হত্যা মামলা করেন। আদালত সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেন। মামলায় সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেন, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর টিপু, সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জামশেদুল আলম চৌধুরী, বর্তমান কমিটির সহসভাপতি আবদুল মালেক, মনসুর আলম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু তোরাব, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আরমান, প্রচার সম্পাদক রাশেদুল আলম, আপ্যায়ন সম্পাদক মিজানুর রহমান ও সদস্য আরিফুল হককে আসামি করা হয়। পরে সহকারী প্রক্টরকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।