ভূমিকম্পে সিলেট নার্সিং কলেজের ছাত্রীনিবাসে শতাধিক ফাটল দেখা গিয়েছে। এতে ওই ছাত্রীনিবাসটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তবু বাধ্য হয়ে ওই হোস্টেলে ৩৭৪ জন ছাত্রী থাকছেন। কখন মাথার ওপর ভবন ধসে পড়ে, এই ভয়-আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন তারা।
১৯৮২ সালে সিলেট নার্সিং ট্রেনিং সেন্টার নামে ওই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু হয়। ৪ তলা বিশিষ্ট ওই প্রতিষ্ঠানের নিচতলায় চলত একাডেমিক কার্যক্রম। আর বাকি তলাগুলোতে ৫০ জন করে ১৫০ ছাত্রীর আবাসনের ব্যবস্থা ছিল। তবে শুরু থেকেই নির্ধারিত আসনের চেয়ে বেশি ছাত্রী আছেন সেখানে।
২০১১ সালে ওই ট্রেনিং সেন্টারটি সিলেট নার্সিং কলেজে রূপান্তরিত হয়। করা হয় নতুন ভবনও। একপর্যায়ে পুরো চার তলা ভবনটিতে ছাত্রীদের আবসনের ব্যবস্থা করা হয়। ১৫০ থেকে আসনের সংখ্যা বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ২৫০ আসনে। কিন্তু ওই হোস্টেলে বর্তমানে ৩৭৪ জন ছাত্রী থাকছেন।
বৃহস্পতিবার হোস্টেলের শিক্ষার্থীরা জানান, বুধবার রাতের ভূমিকম্পে একটি ছাত্রীনিবাসে শতাধিক স্থানে ফাটল দেখা দেয়। এ সময় তাড়াহুড়ো করে হোস্টেল থেকে বের হতে গিয়ে শিলা, ববি দাস, শিল্পী নামের তিন ছাত্রী অজ্ঞান হয়ে যান। পরে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়।
ফাটল দেখা দেয়ায় রাতেই সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের পরিচালকসহ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হোস্টেল পরিদর্শনে যান। ওই সময় তারা ওই ফাটলে তেমন কোনো সমস্যা হবে জানিয়ে ছাত্রীদের হোস্টেলে থাকার পরামর্শ দেন। তবে কেউ যদি আত্মীয়-স্বজনের বাসায় থাকতে চান, তবে সেখানে যেতে বলেন তারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চার তলা বিশিষ্ট হোস্টেলের প্রায় শতাধিক স্থানে ফাটল ধরেছে। এ ছাড়াও নিচতলার বারান্দা অনেকখানি ‘দেবে’ গেছে। ছাত্রীদের রুমে বই-খাতা, কাপড়ের ব্যাগগুলো গুটানো রয়েছে। নিচতলার দক্ষিণ-পশ্চিমের একটি রুমের দেয়ালে বড় ধরনের ফাটল রয়েছে। এটা গত বুধবারের ভূমিকম্পে হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই রুমের ছাত্রীরা।
ছাত্রীরা বলেছেন, এর আগে ওই হোস্টেলে কোনো ফাটল ছিল না। তারা আতঙ্কে রয়েছেন। অনেকে দিনে হোস্টেলে থাকলেও রাতে অন্য কোথাও রাত্রিযাপন করছেন।
স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভানেত্রী হাসনা আলম অমি বলেছেন, ‘অনেকের পরীক্ষা থাকায় বাধ্য হয়ে হোস্টেলে থাকতে হচ্ছে। এখনও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভূমিকম্প আতঙ্ক রয়েছে।’
হোস্টেলে থাকা জুঁই ও তানিয়া জানিয়েছেন, তাদের পরীক্ষা চলছে। তাই তারা বাড়ি যেতে পারছেন না। সিলেট নগরীতে তাদের আত্মীয়-স্বজনের বাসাও নেই। তাই বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ওই হোস্টেলে রয়েছেন।
তারা বলেন, পরীক্ষা চলছে ঠিক, কিন্তু ভূমিকম্প আতঙ্কে পড়ার টেবিলে মন বসছে না। পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতেও হিমশিম খাচ্ছেন। এমতাবস্থায় তাদের কী করণীয় তাও ভেবে উঠছে পারছেন না তারা।
হোস্টেলের দায়িত্বে থাকা শিক্ষক কল্পনা দেবী ও সানজিদা ইয়াসমিন জানান, ভবনটি পুরোনো হওয়াতে ভূমিকম্পে ফাটল দেখা দিয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। তারা বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছে।
এ ব্যাপারে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মুর্শেদ আহমদ চৌধুরীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেনি।
সিলেট ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অফিসের কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করা হলে দায়িত্বরত ডিউটি অফিসার বলেছেন, সিলেট নার্সিং কলেজ ছাত্রীনিবাসে ভূমিকম্পে ফাটল দিয়েছে— এমন কোনো তথ্য এখনও তাদের জানানো হয়নি।