সপ্তাহ পেরোতে চলল। এখনও পর্যন্ত খোঁজ মিলল না জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ)-এর নিখোঁজ ছাত্র নজীব আহমেদের। আর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফের অশান্ত হয়ে উঠেছে জেএনইউ চত্বর। কয়েক মাস আগেই ছাত্র নেতা কানহাইয়া কুমারকে ঘিরে উত্তাল ছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-রাজনীতি। কাল বিকেল থেকে দীর্ঘ ক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য-সহ বেশ কিছু আধিকারিককে ঘেরাও করে রেখেছিলেন ছাত্র-ছাত্রীরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে মাঠে নেমেছেন স্বয়ং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। নজীবকে খুঁজে বার করতে আজ দিল্লি পুলিশকে বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গড়তে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
নজীব জেএনইউ-র বায়োটেকনোলজি বিভাগের ছাত্র। গত শুক্রবার হস্টেলে এবিভিপির কিছু সমর্থকের সঙ্গে তাঁর ঝামেলা বেধেছিল। তার পর থেকেই খোঁজ নেই ওই ছাত্রের। সহপাঠীদের অভিযোগ, সে দিন এবিভিপির সদস্যরা
নজীবকে বেধড়ক মারধর করেছিল। তাঁকে খুঁজে বার করার বিষয়টিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তেমন আমল দিচ্ছেন না বলেও অভিযোগ করেছেন নজীবের সহপাঠীরা। এ নিয়ে গত
কাল বিকেল থেকে উত্তপ্ত হতে শুরু করে জেএনইউ চত্বর। এই ঘটনার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম জগদেশ কুমার-সহ বেশ কিছু আধিকারিককে আটকে রাখেন শ’খানেক পড়ুয়া। প্রায় কুড়ি ঘণ্টা পরে আজ সেই ঘেরাও উঠেছে।
দিল্লি পুলিশের অতিরিক্ত ডিসিপি-১ (দক্ষিণ) নূপুর প্রসাদ জানিয়েছেন, অতিরিক্ত ডিসিপি-২ (দক্ষিণ) মনীষী চন্দ্রের নেতৃত্বে আজই একটি সিট গঠন করা হয়েছে। দেশের সব প্রান্তের থানায় বিষয়টি নিয়ে খোঁজ খবর শুরু হয়েছে। খবরের কাগজে বিজ্ঞাপনও দেওয়া হচ্ছে। নজীব সম্পর্কে কোনও তথ্য দিতে পারলে পুলিশের তরফ থেকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়ার কথাও ঘোষণা করা হয়েছে। তবে নজীবকে অপহরণের তত্ত্বে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না পুলিশ। তাদের বক্তব্য, কেউ ওই ছাত্রকে অপহরণ করলে তাঁর বাড়িতে মুক্তিপণ চেয়ে এত দিনে ফোন চলে আসত। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় ও তার আশপাশ এলাকার প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান খতিয়ে পুলিশ জেনেছে, পার্থসারথি রকস-এ শেষ বার দেখা গিয়েছিল নজীবকে। তবে নজীবের গতিবিধির সিসিটিভি ফুটেজ মেলেনি। হস্টেলে ফেলে যাওয়া তাঁর ল্যাপটপ, ওষুধ আর মোবাইল বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ।
কালকের ঘেরাও ঘিরে ছাত্রদের সঙ্গে চাপানউতোর শুরু হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। উপাচার্য জগদেশ কুমারের বক্তব্য, অনৈতিক ভাবে তাঁদের আটকে রেখেছিলেন ছাত্র-ছাত্রীরা। যা সমর্থন করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজুও। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আধিকারিকদের এ ভাবে বন্দি করে রাখা যায় না। মনে হয় জেএনইউ-র কিছু সংখ্যক ছাত্র শুধু রাজনীতিটাই করতে আসে। পড়াশোনা নয়।’’ উপাচার্যের অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট মোহিত শর্মা। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমরা কাউকে অনৈতিক ভাবে আটকে রাখিনি। ঘেরাও চলাকালীন আমরা ভিতরে বিদ্যুৎ আর খাবারও সরবরাহ করেছি।’’
সূত্র: আনন্দ বাজার