জঙ্গিদের সরাসরি সহযোগিতা করেন হাসনাত ও তাহমিদ - Dainikshiksha

জঙ্গিদের সরাসরি সহযোগিতা করেন হাসনাত ও তাহমিদ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

Hasnat-Tahmid‘নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক আবুল হাসনাত রেজাউল করিম নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীরের একজন সক্রিয় সদস্য। তার সহযোগী কানাডার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী তাহমিদ হাসিব খান। তাহমিদ বিভিন্ন সময় হাসনাতকে সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন। গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গিরা আক্রমণ করলে সেখানে উপস্থিত ছিলেন এই দুই জন। ওই বেকারিতে তারা উপস্থিত থেকে জঙ্গিদের সরাসরি সহযোগিতা করেছেন। এ ছাড়া হাসনাত করিমের মোবাইল ফোনে নতুন একটি অ্যাপ ডাউনলোড করে বাইরে ছবি পাঠায় জঙ্গিরা।’ পুলিশের পক্ষ থেকে আদালতে দাখিল করা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

হাসনাত করিম ও তাহমিদ হাসিব খানকে গতকাল বৃহস্পতিবার আট দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। এর আগে গত এক মাস ধরে এই দুইজনকে নিয়ে লুকোচুরি চলেছে। পরিবার দাবি করে আসছে- তারা পুলিশের হেফাজতে আছে। আর পুলিশ বলেছে, তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে তারা আসলে কোথায় ছিলেন তা নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়।

অবশেষে বুধবার রাতে তাদেরকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখানো হয়। সেই সঙ্গে গতকাল তাদেরকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করেন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবির। অন্যদিকে হাসনাত ও তাহমিদের আইনজীবীরা এর বিরোধিতা করে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে মহানগর হাকিম নুরুন্নাহার ইয়াসমিন দুইজনকে আট দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন।

এর আগে গত মঙ্গলবার পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছিলেন, হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গিদের হাতে বিদেশিসহ ২০ জন নিহত হওয়ার পর থেকে হাসনাত করিম ও তাহমিদ হাসিব খান পুলিশের ‘নলেজে’ আছেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি মিডিয়া) মাসুদুর রহমান জানান, বুধবার রাত পৌনে নয়টার দিকে হাসনাতকে গুলশান থেকে ও তাহমিদকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এখন পুলিশ তাদের রিমান্ডে নিয়েছে, বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করবে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রিমান্ড আবেদনে আরো বলেন, হলি আর্টিজানে হামলার দিন জঙ্গিরা তাদের নিজস্ব যোগাযোগের জন্য ‘উইকার’ (Wickr) নামে একটি অ্যাপস ব্যবহার করে। হাসনাতের মোবাইলে অ্যাপসটি পাওয়া গেছে। জঙ্গিরা রাত ৮টা ৪৪ মিনিটে হলি আর্টিজানে প্রবেশ করে ৮টা ৫৭ মিনিটে তার মোবাইলে অ্যাপসটি ডাইনলোড করে। অ্যাপসটি ব্যবহার করে সাধারণত জঙ্গিরা  যোগাযোগ স্থাপন করে থাকে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য তথা জঙ্গিরা কী ধরনের তথ্য আদান-প্রদান করেছিল, সে বিষয়ে জানার জন্য তাকে রিমান্ডে নেওয়ার প্রয়োজন। উইকার একটি যোগাযোগ অ্যাপস, ব্যবহারকারীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকে এটি। যে ডিভাইসে এটি ব্যবহার করা হয় সেই ডিভাইস থেকে সব ধরনের মেসেজ, ছবি ও ভিডিও কনটেন্ট মুছে ফেলা যায়। এ ঘটনার রহস্য উদ্?ঘাটনের জন্য আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ জরুরি।

তবে হাসনাত করিম ও তাহমিদ হাসিব খানের আইনজীবীরা শুনানিতে আদালতকে বলেন, তারা এ ঘটনার কিংবা জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার সঙ্গে মোটেও জড়িত নন। তারা ৩২ দিন ধরে পুলিশ হেফাজতে ছিলেন। তাই রিমান্ড আবেদন বাতিল করে তাদের জামিনের আরজি জানানো হয়।

মঙ্গলবার পুলিশ সদর দফতরে ব্রিফিংয়ে পুলিশের আইজি এ কে এম শহীদুল হক বলেন, গুলশান হামলার মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে। আমরা এ ঘটনা সম্পর্কে নানা তথ্য প্রমাণ হাতে পেয়েছি যা যাচাই বাছাই করেছি এবং করছি। গুলশান হামলার প্রশিক্ষক এবং হামলাকারীদের বসুন্ধরা ও শেওড়াপাড়ার বাসা থেকে শনাক্ত করে অভিযান চালানো হয়েছে। সেখান থেকে গ্রেনেডসহ অন্যান্য সরঞ্জাম ও গুরুত্বপূর্ণ আলামত উদ্ধার করা হয়েছে। গুলশান হামলার ঘটনায় জড়িত, তাদের আশ্রয়দাতা, প্রশিক্ষক, মদদদাতাদের অনেককেই চিহ্নিত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে এ সংক্রান্তে ৫ জনকে ফৌজদারী কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

হাসনাত করিমের বাবার নাম মোহাম্মদ রেজাউল করিম। হাসনাত বাংলাদেশ ও ব্রিটেনের দ্বৈত নাগরিক। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করার সময় হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এই অভিযোগে ২০১২ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নেন। অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে দাবি করেছে, হাসনাত রেজা করিমের বিরুদ্ধে হিযবুত তাহরীরের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ প্রমাণ হয়নি। তিনি ওই সময় স্বেচ্ছায় চাকরি থেকে অব্যাহতি নেন।

ব্রিটেনের নাগরিক হলেও সম্প্রতি তিনি দেশে ফিরে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে আবার যোগদান করেন। গুলশানের হামলার পর নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি তাদের ওয়েবপেজে শিক্ষকদের তালিকা থেকে হাসনাত করিমের নামটি মুছে ফেলে। হাসনাত করিম তার বাবা রেজাউল করিমের বেসিক ইঞ্জিনিয়ারিং নামে প্রতিষ্ঠানে পরিচালক হিসাবে যোগ দেন। গুলশান-২-এর ৫ নম্বর রোডের ৬৮/এ নম্বর বাড়িতে তিনি বাবা-মার সঙ্গে বসবাস করেন। হাসনাতের দাবি, মেয়ে শেফা করিমের জন্মদিন উপলক্ষে তিনি হলি আর্টিজানে সপরিবারে গিয়েছিলেন। তবে গোয়েন্দাদের দাবি, এটি ছিল তার লোক দেখানো একটি পরিকল্পনা। কারণ হলি আর্টিজানের মতো একটি স্প্যানিশ রেস্টুরেন্টে একটি ধর্মপ্রাণ পরিবারের জন্মদিন পালন করাটা ছিল এক ধরনের নাটক।

তাহমিদ হাসিব খান আফতাব বহুমুখী ফার্মের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলে রহিম খান শাহরিয়ারের ছেলে। তিনি কানাডার টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং কানাডার নাগরিক। গুলশান হামলার দিনই দুপুরে ঢাকায় আসেন তাহমিদ।

হাসনাত করিমকে আটকের পর থেকে অনেক প্রশ্নের জবাব নিয়ে ধোঁয়াশার মধ্যে ছিলেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা। এ জন্য তাকে না পারছিলেন ছেড়ে দিতে, না পারছিলেন গ্রেফতার দেখাতে। ২৬ জুলাই কল্যাণপুরে পুলিশের জঙ্গি বিরোধী অভিযানে ৯ জঙ্গি নিহত ও ১ জন গ্রেফতার হয়। নিহত জঙ্গিদের মধ্যে একজন ছিলেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাবেক শিক্ষার্থী তাজ-উল-ইসলাম রাশিক। তিনি মার্কিন নাগরিকও ছিলেন। গোয়েন্দারা ধানমন্ডির ১১/এ নম্বর সড়কের ৭২ নম্বর বাড়িতে রাশিকের বাবা রবিউল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারে যে, গত বছর হাসনাত রেজা করিম দুই বার রাশিকের সঙ্গে দেখা করতে বাসায় এসেছিলেন। হাসনাত করিমের সঙ্গে জঙ্গিদের যোগাযোগের বিষয়টি নিশ্চিত হয়। এরপর গোয়েন্দাদের নজরদারিতে থাকা স্থান থেকেই হাসনাত করিমকে গ্রেফতার দেখানো হয়।

পহেলা জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ দেশি-বিদেশি ২৩ নাগরিক নিহত হন। পরে সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানে ৫ জঙ্গি ও সন্দেহভাজন একজন নিহত হয়। অভিযানের পর ওই রেস্টুরেন্ট থেকে ৩২ জিম্মিকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত জিম্মিদের মধ্যে হাসনাত করিম ও তাহমিদের রহস্যজনক আচরণের কারণে তাদের গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সারারাত জঙ্গিদের কব্জায় থেকেও সকালে সুস্থভাবে সপরিবারে তারা ফিরে আসেন। গত ২ জুলাই সকালে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি থেকে উদ্ধার করে পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার পর থেকে হাসনাত ও তাহমিদ আর বাড়ি ফেরেননি বলে পরিবার এতোদিন বলে আসছিল।

নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট - dainik shiksha জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ - dainik shiksha আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0039188861846924