জাতীয়করণ: তালিকাভুক্ত শিক্ষকরা যেমন চান - দৈনিকশিক্ষা

জাতীয়করণ: তালিকাভুক্ত শিক্ষকরা যেমন চান

নিজস্ব প্রতিবেদক |

বেসরকারি কলেজ জাতীয়করণের শিক্ষক-কর্মচারি আত্তীকরণ বিধিমালা-২০০০ বাতিল করে নতুন বিধিমালা প্রণয়ন চায় জাতীয়করণের তালিকাভুক্ত কলেজ শিক্ষক সমিতি।

নতুন বিধিমালা প্রণয়নে নয়টি প্রস্তাবসহ শিক্ষক-কর্মচারি আত্তীকরণ বিধিমালা-২০০০ কেন বিতর্কিত তার ব্যাখ্যা দিয়ে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবর একটি চিঠি দিয়েছে সমিতি।

চিঠিটি দৈনিক শিক্ষার পাঠকদের হুবহু জন্য তুলে ধরা হল। আজ পড়ুন প্রথম পর্ব-

বরাবর,

         মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,

         গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার,

         প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, তেজগাঁও, ঢাকা।

বিষয়: বেসরকারি কলেজ জাতীয়করণের বিতর্কিত শিক্ষক-কর্মচারী আত্মীকরণ বিধিমালা-২০০০ বাতিল করে যুগোপযোগী, বৈষম্যহীন ও শিক্ষক-কর্মচারী বান্ধব নতুন আত্মীকর‌ণ বিধিমালা প্রণয়নের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান প্রসঙ্গে।

মহাত্মন,

         যথাবিহিত সম্মান পূর্বক বিনীত নিবেদন এই যে, দেশের শিক্ষায় বিদ্যমান আঞ্চলিক বৈষম্য দূরীকরণ এবং তৃণমূল পর্যায়ে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য স্বল্পমূল্যে গুনগত শিক্ষা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে আপনি সম্প্রতি স্বপ্রণোদিত হয়ে দেশের প্রতিটি উপজেলায় ০১টি কলেজ ও ০১টি স্কুল জাতীয়করণের এক মহৎ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন এবং ইতোমধ্যে ২৮৫টি কলেজ জাতীয়করণের জন্য সদয় অনুমোদন দিয়েছেন। আমরা আপনার এ যুগান্তকারী, সময়োপযোগী ও গণমুখী উদ্যোগকে কৃতজ্ঞচিত্তে স্বাগত ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।

আপনি অবগত আছেন যে, জাতীয়করণ প্রক্রিয়ায় শিক্ষক-কর্মচারীদের আত্মীকরন  একটি বহু-আকাঙ্খিত জনপ্রিয় বিষয়। কিন্তু জাতীয়করণের চলমান আত্মীকরণ  বিধিমালা-২০০০ বহাল থাকলে হাজার হাজার শিক্ষক-কর্মচারী সেই আকাংখা চরম হতাশায় পরিণত হবে বলে আমরা আশংকা করছি। এ বিধি প্রয়োগ হলে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ কর্মরত অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, সহকারি অধ্যাপক, সিনিয়র প্রভাষক সবাইকে গণহারে একইসাথে প্রভাষক হিসাবে আত্মীকরন  হতে হবে এবং প্রত্যেকের অবস্থান হবে সর্বশেষ বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রভাষকের নিচে যা চরম অমর্যাদাকর , অসম্মানজনক ও অমানবিক।

আত্মীকরণ বিধিমালা-২০০০ অনুযায়ী অযৌক্তিকভাবে শিক্ষকদের ৫০% কার্য্কর চাকুরীকাল কর্তন, সংশ্লিষ্ট জাতীয়করণকৃত কলেজের ০৪ বছরের কম চাকুরীকাল শূন্য ধরা, পূর্ববর্তী অন্য কোন কলেজের নিরবিচ্ছিন্ন বৈধ অভিজ্ঞতা গণনার বিধান না রাখা, নিয়োগকালীন শিক্ষাগত যোগ্যতা বিবেচনায় না এনে নতুন করে ক্যাডার প্রবেশের শিক্ষাগত যোগ্যতা চাপিয়ে দেওয়া, জ্যেষ্ঠতা ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে কার্যকর চাকুরীকাল গণনা না করা, এডহক নিয়োগ নিয়মিত করণের তারিখ হতে জ্যেষ্ঠতার বিধান ইত্যাদি বহাল থাকলে আমরা মারাত্মক আর্থিক, সামাজিক ও মানসিক ক্ষতির সম্মুখীন হবো। ইতোমধ্যে জাতীয়করণ হওয়া কলেজগুলোর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষক আত্মীকরণ না হতে পেরে সরকারি কলেজে বেসরকারি শিক্ষক হিসাবে চরম লজ্জাজনক অবস্থায় চাকুরী করছেন এবং অনেকগুলো কলেজ অনাকাঙ্খিতভাবে মামলা-মোকদ্দমায় জড়িযে পড়েছে।

উল্লেখ্য যে, নতুন আত্মীকরণ বিধিমালা প্রনয়নের জন্য আমরা ইতিমধ্যে আপনার কার্যালয়সহ মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও শিক্ষামন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছি। মহামান্য রাষ্ট্রপতি দপ্তর হতে এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রণালয় বরাবর একটি পত্র দেওয়া হয়েছে। কিন্তু উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি এখনো হয়নি।

এমতাবস্থায় এতদসঙ্গে সংযুক্ত “আমাদের প্রস্তাবসমূহ” এবং আত্মীকরণ বিধিমালা-২০০০ কেন বিতর্কিত তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা” সদয় বিবেচনায় এনে আত্মীকরণবিধিমালা-২০০০ বাতিলপূর্বক একটি যুগোপযোগী, বৈষম্যহীন ও শিক্ষক-কর্মচারী বান্ধব নতুন আত্মীকরণ বিধিমালা প্রণয়নের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদানের জন্য আকুল আবেদন করছি।

                                                  শ্রদ্ধায় বিনয়াবনত

                                   জাতীয়করণের লক্ষ্যে অনুমোদিত কলেজ শিক্ষকদের পক্ষ হতে

মো: আনোয়ারুল ইসলাম আকন্দ                          মো: নুরুন্নবী আকন্দ

ত্মীকরণ বিধিমালা২০০০ কেন বিতর্কিত তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা

স্বাধীনতা উত্তর ১৯৭৮ সাল থেকে বাংলাদেশ বেসরকারি কলেজ জাতীয়করণের প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ পর্যন্ত ৩৩৫টি বেসরকারি কলেজ জাতীয়করণের মাধ্যমে সরকারি কলেজে রূপান্তরিত হয়। সম্প্রতি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা-বান্ধব মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশের শিক্ষা জাতীয়করণের প্রথিকৃৎ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রতিটি উপজেলায় ০১টি করে বেসরকারি কলেজ জাতীয়করণের অংশ হিসেবে ২৮৫টি কলেজ জাতীয়করনের এক মহৎ উদ্যোগ গ্রহন করেছেন। আমরা এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছি ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। কিন্তু চলমান বিতর্কিত আত্মীকরন বিধিমালা-২০০০ বহাল থাকলে সরকারের এ যুগান্তকারী উদ্যোগ বাধাগ্রস্থ হতে পারে। তাই বিতর্কিত আত্মীকরন বিধিমালা-২০০০ বাতিল করে যুগোপযোগী, বৈষম্যহীন ও শিক্ষক-কর্মচারী বান্ধব নতুন বিধিমালা প্রনয়ন করা প্রয়োজন।

ত্মীকরন বিধিমালা কেন প্রয়োজন হয়?

জাতীয়করনকৃত বেসরকারি কলেজের শিক্ষকগণ সাধারনত বিভিন্ন বয়সের, বিভিন্ন পদের(অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, সহকারি অধ্যাপক, সিনিয়ন প্রভাষক), বিভিন্ন বেতন স্কেলের, বিভিন্ন শিক্ষাগত যোগ্যতার(অনার্স-মাস্টার্স, প্রিলি-মাস্টার্স)এবং কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সবারই সরকারি চাকুরীতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা অতিক্রান্ত এবং সবাই বেসরকারি কলেজের জন্য প্রযোজ্য চাকুরী বিধিমালা দ্বারা নিয়োগ প্রাপ্ত। তাই এ ধরনের শিক্ষকদের ওপর নতুন করে বিসিএস(জেনারেল শিক্ষা)ক্যাডারের বয়সসীমা, শিক্ষাগত যোগ্যতা আরোপ করে কোন ভাবেই তাঁদেরকে সরকারি চাকুরীতে আত্মীকরণ সম্ভব নয়। এ জন্যই বিকল্পবিধি বা আত্মীকরণ বিধিমালা তৈরীর প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় এবং এ পর্যন্ত নিম্নলিখিত ০৩টি আত্মীকরণ বিধিমালা প্রনীত হয়-

*আত্মীকরন বিধিমালা-১৯৮১

*আত্মীকরন বিধিমালা-১৯৯৮(মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আলোকে প্রনীত)

*আত্মীকরন বিধিমালা-২০০০(২০০১ সালে সংশোধনসহ)(সংযুক্ত পৃষ্ঠা নং-০১-১০)

আত্মীকরন বিধিমালা প্রনয়নের মূল উদেশ্যই হলো জাতীয়করনকৃত কলেজের কর্মরত সকল শিক্ষক-কর্মচারীকে তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং সরকারি চাকুরীতে প্রবেশের বয়সসীমা প্রমার্জনপূর্বক সবাইকে আত্মীকরনের মাধ্যমে সরকারিকরনের আওতায় আনা।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে নতুন ত্মীকরন বিধিমালা কেন প্রয়োজন?

(ক)আত্মীকরন বিধিমালা-২০০০ প্রয়োগের শুরুতেই বির্তক দেখা দেয় এবং সংশোধনের প্রয়োজন হয় এবং এর বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে মহামান্য হাইকোর্টে বেশ কয়েকটি মামলা রুজু হয়েছে। এ বিধিমালা জেলা সদরের ১৮টি মহিলা কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের ক্ষেত্রে প্রথম প্রয়োগ করতে গিয়ে শিক্ষা ক্যাডারের প্রয়োজনীয় যোগ্যতা তথা প্রথম শ্রেনীর স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অথবা ২য় শ্রেনীর অনার্স ডিগ্র্রীসহ ২য় শ্রেনীর স্নাতকোত্তর ডিগ্রীর অভাবে ১২৭ জন শিক্ষক চাকুরিচ্যুত হন। পরবর্তীতে সরকার আত্মীকরন বিধিমালা-২০০০ সংশোধন পূর্বক বিধিমালার বিধি-০৯ এর উপবিধি-০৩ এর পর নতুন উপবিধি-৪(শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল)সংযোজন করে উক্ত ১২৭ জন ‍শিক্ষককে এডহক নিয়োগ প্রদান করতে হয়েছিল(সংযুক্ত পৃষ্ঠা নং-১১)।

(খ)তাই আত্মীকরন  বিধিমালা-২০০০ এর প্রয়োগ-উপযোগিতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক চলে আসছে। এটি প্রনয়নে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয় ও আইন মন্ত্রনালয়ের মতামতকে উপেক্ষা করা হয়েছে। এটি প্রয়োগের পূর্বে অর্থ মন্ত্রনালয়ের পূর্বানুমোদন নেওয়া হয়নি(সংযুক্ত পৃষ্ঠা-১২-১৬)

(গ) ২০১৩ সালে জাতীয়করনকৃত কলেজের ক্ষেত্রে আত্মীকরন বিধিমালা-২০০০ প্রয়োগ করার ফলে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষক ক্যাডারের শিক্ষাগত যোগ্যতার অভাবে আত্মীকরন না হতে পেরে সরকারি কলেজে বেসরকারি শিক্ষক হিসেবে চরম লজ্জাকর অবস্থায় চাকুরী করছেন। একই সরকারি কলেজে (যেমন চরফ্যাসন মহাবিদ্যালয়, ভোলা/জিল্লুর রহমান মহিলা কলেজ, ভৈরবে) এখন ক্যাডার, আত্মীকৃত ও বেসরকারি- তিন ধরনের শিক্ষক চাকুরী এবং করছেন তাঁদের ত্রি-মুখী মনস্তাত্তিক দ্বন্দ্বে কলেজ শিক্ষা আজ অরাজকতার দিকে ধাবিত হচ্ছে এবং বিভিন্ন মামলা মোকদ্দমায় জড়িয়ে পড়ছে এবং পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি হচ্ছে। (সংযুক্ত পৃষ্ঠা নং- ১৭-২২)

পরবর্তী কিস্তি রোববার

 

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0040538311004639