জামায়াত-শিবিরের পৃষ্ঠপোষক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকা হচ্ছে - Dainikshiksha

জামায়াত-শিবিরের পৃষ্ঠপোষক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকা হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক |

জামায়াত-শিবিরের আর্থিক পৃষ্ঠপোষক ও রাজনৈতিক আদর্শে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরি হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এসব তালিকা তৈরির কাজ করছে দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। এরই মধ্যে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সন্দেহজনক কার্যক্রম চালানোর প্রমাণ পেয়েছে দেশের শীর্ষ এক গোয়েন্দা সংস্থা। কার্যক্রম সম্পর্কে আলাদা আলাদা প্রতিবেদনের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে তারা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে ২৭টি পিস স্কুল ও কলেজ জামায়াত আদর্শে পরিচালিত হওয়ার প্রমাণ পাওয়ার পরই নড়েচড়ে বসে সরকার। জাকির নায়েকের ভাবাদর্শে পরিচালিত এসব স্কুলের কার্যক্রম এরই মধ্যে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে অন্য নাম দিয়ে এসব স্কুল চলছে। জামায়াত- শিবিরের বদলে এসব স্কুলের পরিচালনা পর্ষদে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতারা কাজ করছেন। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার একটি ও নাটোরের একটি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিশেষ প্রতিবেদন এরই মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পৌঁছেছে।

নাটোরের বখতিয়ার খিলজি স্কুল অ্যান্ড মাদরাসা সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নাটোরের লালপুর থানার অন্তর্গত গোপালপুর পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের ভূঁইয়াপাড়া এলাকায় ২০০৬ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। মাদরাসাটিতে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা দেয়া হয়ে থাকে। এ মাদরাসার দুইটি শাখা রয়েছে। ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত ছেলে ও মেয়ে এক সঙ্গে পাঠ করলেও গোপালপুর শাখায় ষষ্ঠ-৭ম শ্রেণিতে শুধু ছাত্ররা এবং কেশবপুর (গোপালপুর) শাখায় ৬ষ্ঠ-৭ম শ্রেণিতে শুধু ছাত্রীরা অধ্যয়ন করে। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা মো. আযাযুল হক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে পাস করেন। ছাত্র অবস্থায় তিনি ইসলামী ছাত্র শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বর্তমানে তিনি লন্ডনে সন্তান ও স্ত্রীসহ অবস্থান করছেন। তার ফেসবুক একাউন্ট খুঁজে দেখা যায়, তিনি জামায়াতপন্থি বিভিন্ন ব্যক্তির ফেসবুক বন্ধু। মাদরাসা সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাদরাসাটিতে বিভিন্ন সময় বহিরাগত কিছু লোকজন এসে সন্ধ্যার পরে মিটিং করে থাকেন। এছাড়া স্থানীয়ভাবে এই মাদরাসা জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের দিয়ে পরিচালিত হয়। কয়েক দিন আগে বখতিয়ার খিলজি স্কুল অ্যান্ড মাদরাসায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হতো না। বর্তমানে কিছু দিন ধরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হচ্ছে। মাদরাসায় বর্তমানে প্রায় ২০০ ছাত্রছাত্রী রয়েছে। মাদরাসাটির সুপার কাম প্রধান শিক্ষক মো. আবুল কালাম আজাদ রাজশাহী কলেজ থেকে অর্থনীতি বিভাগে পাস করেন। তিনি অধ্যয়নকালীন সময়ে রাজশাহী ঘোষপাড়াস্থ বিসমিল্লাহ ছাত্রাবাসে থাকতেন। স্থানীয়ভাবে ছাত্রাবাসটি ইসলামী ছাত্রশিবির নিয়ন্ত্রিত ছাত্রাবাস হিসেবে পরিচিত। মাদরাসার ছাত্রছাত্রী সম্পর্কে বলা হয়েছে, মাদরাসাটিতে ছাত্রছাত্রীদের বেড়ে ওঠার পরিবেশ এবং শিক্ষা ব্যবস্থা প্রগতিশীল চিন্তা-চেতনার বিরোধী। এছাড়াও সেখানে নিয়মিত বহিরাগত ব্যক্তি গোপন মিটিং করে থাকে।

তারা কি উদ্দেশ্যে মিটিং করে তা সুস্পষ্ট নয়। মাদরাসাটি বর্তমানে থানা শিক্ষা অফিসে অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছে। কিন্তু ওই মাদরাসার কার্যক্রম, প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান শিক্ষকের নিবিড় জামায়াত-শিবির সংশ্লিষ্টতার কারণে মাদরাসাটিকে অনুমোদন দিলে তা শিক্ষার্থীদের উগ্র মৌলবাদী চেতনায় উৎসাহিত করতে পারে। এটা হবে দেশের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মাদরাসাটি এবং এর প্রতিষ্ঠাতা আযাযুল হকের ফেসবুক একাউন্ট অধিকতর তদন্ত করার জন্য বিটিআরসিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটিতে রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কার্যক্রম সংগঠিত হচ্ছে কিনা এ বিষয়ে নজরদারি বাড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এদিকে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ডে দণ্ডিত জামায়াতে ইসলামীর আমীর মতিউর রহমান নিজামীর স্ত্রী শামছুন্নাহার নিজামীর প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ও কলেজ সম্পর্কে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিশেষ প্রতিবেদন পাঠিয়েছে দেশের শীর্ষ এক গোয়েন্দা সংস্থা।

এর আগে গত বছরের ১৯শে আগস্ট স্কুলটির মেরুল বাড্ডা শাখা থেকে জামায়াতে ইসলামীর সহযোগী সংগঠন ছাত্রী সংস্থার কয়েকজনকে আটকের ঘটনা ঘটে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২৭শে ডিসেম্বর বিশেষ প্রতিবেদনটি হাতে পায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরপর ৫ই জানুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে লেখা এক চিঠিতে এক মাসের মধ্যে তদন্তপূর্বক প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলা হয়। পুলিশের বিশেষ শাখার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গুলশানের ইসলামিক ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ও কলেজ সম্পর্কে অনুসন্ধানে প্রতিষ্ঠানের দুটি শাখার খোঁজ মিলেছে। একটির ঠিকানা বাড়ি # ১৮, রোড # ৯, গুলশান-১ ও অপরটির বাড়ি # ১৫, রোড # ২১ গুলশান-১। দুটি শাখাই ২০০০ সাল থেকে ইংরেজি মাধ্যমে লেখাপড়ার পাশাপাশি ইসলাম ধর্মীয় ধারার বিষয়ে শিক্ষা দিয়ে আসছে। প্রতিষ্ঠানটি ম্যানেজিং কমিটি দিয়ে পরিচালিত। শুরু থেকেই জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামীর স্ত্রী শামছুন্নাহার অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। যে কোনো স্কুল বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য সরকারের অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু এ প্রতিষ্ঠানের সরকারি কোনো অনুমোদন নেই। প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ ২০০৫ সালের ১৭ই মে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছে বলে দাবি করেছে। তবে এর পক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক। তিনি ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মো. ওবায়দুল্লাহ ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের স্কুল কার্যক্রম সম্পাদক আলমগীর মো. ইউসুফ পরিচালিত ইনভাইটস পীস স্কুলের প্রধান সমন্বয়ক।

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0065069198608398