দুর্নীতির দায়ে ফেঁসে গেলেন ইউজিসির সেই ফেরদৌস জামান - দৈনিকশিক্ষা

দুর্নীতির দায়ে ফেঁসে গেলেন ইউজিসির সেই ফেরদৌস জামান

নিজস্ব প্রতিবেদক |
অভিযুক্ত ড. ফেরদৌস জামান
অভিযুক্ত ড. ফেরদৌস জামান

ফের দুর্নীতি করে ফেঁসে গেলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের অতিরিক্ত পরিচালক ড. ফেরদৌস জামান। এবার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে দুর্নীতির দায়ে ফেরদৌস জামানকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে। অভিযুক্ত ফেরদৌস জামান ইউজিসির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শাখার অতিরিক্ত পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন। তাকে ইউজিসির প্লানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট শাখায় পাঠানো হয়েছে।  বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুর্নীতির পুরো ঘটনা তদন্ত করতে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর আগে ২০১৪ খ্রিস্টাব্দে কুমিল্লার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়  থেকে অবৈধ সুবিধা নেয়া ও ২০ লাখ টাকা ঘুষের অভিযোগ তিনি সাময়িক বরখাস্ত হন। পরে তাকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় বদলি করে দেয়া হয়। তারও আগে ২০০৩ খ্রিস্টাব্দেও ঘুষে নিয়ে ধরা পড়ার পর তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

কমিশন সূত্রে জানা যায়, টাকার বিনিময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ সংক্রান্ত একটি ফাইলে ফেরদৌস তার উপরস্থ বসের অগোচরে নিজের মতো করে ফাইল নোট  দেন। এ ঘটনায় ইউজিসির সদস্য প্রফেসর দিল আফরোজ আহ্বায়ক করে ৪ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, সদস্য প্রফেসর আখতার হোসেন, শাহনেওয়াজ আলী এবং ইউজিসির অতিরিক্ত পরিচালক (প্রশাসন) ফখরুল ইসলাম। তদন্ত কমিটিকে দ্রুত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ইউজিসির চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, ফেরদৌস জামানকে সরানোর প্রয়োজন মনে হয়েছে তাই সরিয়েছি। অভিযোগের ব্যাপারে সরাসারি কিছু না বলে চেয়ারম্যান বলেন, পুরো বিষয়টি তদন্ত  করতে কমিটি গঠন করা হয়েছে, তাদের রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না।
ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাকটিক্যাল কেমেস্ট্রি নামে নতুন বিভাগ খোলার জন্য আবেদন করে ওই বিভাগ। বর্তমানে তিনজন শিক্ষক এই বিভাগ চালাবেন এবং নতুন করে কোন জনবল চাওয়া হবে না এমন শর্তে আবেদন করে। এরই প্রেক্ষিতে ইউজিসির সদস্য প্রফেসর আখতার হোসেন, শাহনেওয়াজ আলী ও অতিরিক্ত পরিচালক ফেরদৌস জামান ওই বিভাগ সরজমিন পরিদর্শন করে রিপোর্ট জমা দেন। রিপোর্টে কোথাও অতিরিক্ত জনবল নেয়ার বিষয়টি ছিল না এবং তা দেখেই সাক্ষর করেন দুই সদস্য। পরবর্তীতে চেয়ারম্যানের অনুমোদনের আগে নিচের এই বিভাগের জন্য ৫জন শিক্ষক ৪ জন কর্মকর্তাসহ মোট ৯জন জনবল নিয়োগের বিষয়টি নোট দিয়ে যোগ করেন তিনি। সেভাবেই চেয়ারম্যানের অনুমোদন করান। অতিরিক্ত নোট সংযুক্ত করার পর কমিটির অন্য দুইজন সদস্যের সাক্ষর নেয়া হয়নি। পরবর্তীতে বিভাগ থেকে ইউজিসির কাছে অভিযোগ করা হয়, আমাদের চাহিদা না দেয়ার পরও ইউজিসি জনবল দেয়ার বিষয়টি কেন আনা হলো? এই চিঠি পাওয়ার পর চেয়ারম্যান ওই ফাইল ডেকে পাঠান। ফাইল দেখেই চমকে উঠেন চেয়ারম্যান। অর্থাৎ তিনিই নিজেই যে ফাইলে স্বাক্ষর করেছেন, সেখানে কমিটি অন্যান্য সদস্যের সাক্ষর নেই। পুরো বিষয়টি ছিল জালিয়াতি। তাৎক্ষণিক ওই কর্মকর্তাকে ডেকে এনে স্ট্যান্ড রিলিজ দেন এবং বিষয়টি তদন্ত করতে উচ্চ পর্যায়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউজিসির একাধিক কর্মকর্তা জানান, প্রথম পর্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৯জন জনবলের ব্যাপারে রাজি হলেও পরে  চাহিদার অতিরিক্ত টাকা চাওয়ার ওই বিভাগ রাজি হয়নি। এক পর্যায়ে ওই জনবল বাতিল করা হবে ইউজিসি কর্মকর্তার এমন হুমকি পাওয়ার পর তারা চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ করেন।
এ বিষয়ে কমিটির সদস্য প্রফেসর শাহনেওয়াজ আলী সাংবাদিকদের বলেন, যেহেতু একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে, সুতরাং এই বিষয়ে এখন কথা বলা সমুচিত হবে না।

কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা দৈনিকশিক্ষা ডটকমকে জানান, ফেরদৌস জামান ইতিমধ্যে অঢেল টাকা কামিয়েছেন। ঘুষ নিয়ে ধরা পড়লেও ইউজিসির সাবেক একজন চেয়ারম্যানের হাতেপায়ে ধরে অভিযোগ ধামাচাপা দিতে সক্ষম হন তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে মতামত জানার চেষ্টা করলে ফেরদৌস জামানের মোবাইল টেলিফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

ফেরদৌস জামানের অতীত ইতিহাস:

দৈনিকশিক্ষার হাতে আসা নথিপত্রে দেখা গেছে, দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত ফেরদৌস জামানকে ২০০৩ সালের ৫ এপ্রিল সাময়িক বরখাস্ত করে ইউজিসি কর্তৃপক্ষ।

সে সময়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মোহাম্মদ মোফাক্কের হোসেন স্বাক্ষরিত বরখাস্ত আদেশে বলা হয়, ‘ ফেরদৌস জামান, সহকারী পরিচালক(গবেষণা ও প্রকাশনা বিভাগ) এর বিরুদ্ধে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিপির কপি প্রশাসন বিভাগের সাধারণ শাখা থেকে সংগ্রহকরণ ও কমিশন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ব্যাতিরেকে উক্ত পিপির ফটোকপি এবং বেশ কয়েকটি অনুষদ, বিভাগ ও কোর্স সংক্রান্ত একটি ‍অনুমতিপত্র ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেরণের অভিযোগসহ আরো কিছু অভিযোগ উত্থাপিত হয়। যা তদন্তের জন্য ২ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয় এবং কমিটির তদন্তে তা প্রমাণিত হয়’।

‘…তার বিরুদ্ধে এরূপ আচরণ সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ১৯৮৫ এর (৩) (বি) বিধি মোতাবেক ‘মিস কন্ডাক্ট’ বা ‘অসদাচরণ’ ও ৩ (ডি) বিধি মোতাবেক ‘করাপ্ট’ বা ‘দুর্নীতিপরায়ণ’ এর পর্যায়ভূক্ত অপরাধ।’

এরপর বিধিমালার ১১ (১) ধারার ক্ষমতাবলে ফেরদৌস জামানকে সাময়িক বরখাস্ত করার কথা বলা হয় আদেশে।

ফেরদৌস জামানের দুর্নীতি সম্পর্কে সে সময়ের ইউজিসি চেয়ারম্যান এটিএম জহুরুল হক বলেছিলেন, , ‘দুর্নীতির জন্য তাকে শুধু বরখাস্তই করিনি, তাকে চেয়ারম্যানের রুমেও নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এখন শুনছি, তিনি নাকি ইউজিসি’র অনেক প্রভাবশালী কর্মকর্তা। এ ধরনের অসৎ কর্মকর্তা যে কোনো প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তির জন্যই ক্ষতিকর।’

মঞ্জুরী কমিশনে চাকরির আগে ফেরদৌস জামান ঢাকা স্টক মার্কেটে চাকরি করতেন। সেখানেও তার নামে দুর্নীতির অভিযোগ ছিল বলে জানা যায়।

অারও পড়ুন

ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে ইউজিসি কর্মকর্তা বরখাস্ত

 

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0038869380950928