নতুন বইয়ের দাবিতে ৩১ জানুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঘেরাও - দৈনিকশিক্ষা

নতুন বইয়ের দাবিতে ৩১ জানুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঘেরাও

নিজস্ব প্রতিবেদক |

সাম্প্রদায়িক উপাদান প্রত্যাহার এবং প্রগতিশীল কবি-সাহিত্যিক ও লেখকদের রচনা পুনঃসংযোজনের মাধ্যমে নতুন পাঠ্যবই দেওয়ার দাবিতে আগামী ৩১ জানুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঘেরাও করবে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী। রবিবার এনসিটিবি’র সামনে বিক্ষোভ সমাবেশে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন উদীচীর সাধারণ সম্পাদক জামশেদ আনোয়ার তপন। পাঠ্যপুস্তক সাম্প্রদায়িকীকরণ ও প্রগতিশীল লেখকদের রচনা বাদ দেওয়ার প্রতিবাদে প্রগতিশীল সংগঠনসমূহ এ বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে।

বছরের শুরুতে উত্সবের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়া শিক্ষা ক্ষেত্রে সরকারের অন্যতম বড় সাফল্য হিসেবে স্বীকৃত পেয়ে আসছে। কিন্তু নানা ভুল-ত্রুটির কারণে এই সাফল্য ছাপিয়ে এবার বিতর্কের মুখে নতুন পাঠ্যবই। ম্লান হয়ে গেছে বছরের প্রথম দিনে সব শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যের বই তুলে দেওয়ার সুনাম।

পাঠ্যবইয়ে নানা ভুলের কারণে সাধারণ শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক থেকে শুরু করে উদ্বিগ্ন শিক্ষাবিদরাও। শিক্ষাঙ্গন থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সর্বত্রই বইছে সমালোচনার ঝড়। ভুলের কারণ অনুসন্ধানে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) পৃথক কমিটিও করেছে। ইতোমধ্যে দুই কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছে। বরখাস্ত করা হয়েছে এনসিটিবির চিত্রকরকে। আর শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, ভুলগুলো শোধরানো হবে।

২০১০ সাল থেকে সরকার মাধ্যমিক স্তরেও বিনামূল্যের পাঠ্যবই বিতরণ শুরু করে। ওই বছর থেকেই উত্সবের মাধ্যমে বিনামূল্যের বই বিতরণ শুরু হয়। শিক্ষাবর্ষের শুরুর দিনই সব শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দেওয়ায় শিক্ষায় যেন প্রাণ ফিরে আসে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, অতীতে বিনামূল্যের বই পৌঁছতে মার্চ মাস পর্যন্ত লেগে যেত। ২০১০ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত আট বছরে সর্বমোট বিতরণ করা হয়েছে ২২৫ কোটি ৪৩ লাখ বই। প্রতিবছরই যথাসময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে।

কিন্তু যে পাঠ্যবই নিয়ে এ সাফল্যের দাবি, সেই বইয়েই এবার ভুল ও অসঙ্গতি রয়েছে নানা ক্ষেত্রে। শুধু বইয়ের ভুল নয়, ভালো লেখকদের লেখা বাদ দেয়ারও সমালোচনা চলছে সর্বত্র। ছাপা থামিয়েও ভুল সংশোধন করা হয়েছে। তাতেও রক্ষা হয়নি।

পাঠ্যবইয়ে ভুল ও মুদ্রণ ত্রুটির বিষয়টি স্বীকার করে সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, ‘সারাদেশে সময়মতো পাঠ্যবই মুদ্রণ করে সরবরাহ করা অনেক বড় সাফল্য। এর মধ্যে কিছু ভুল-ত্রুটি হতেই পারে। শিক্ষকরা এগুলো সংশোধন করার ব্যবস্থা নেবেন। তবে পাঠ্যবইয়ে বড় ধরনের ত্রুটি কোনওভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’

অবশ্য শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যে দ্বিমত পোষণ করছেন অভিভাবক ও শিক্ষাবিদরা। তারা বলছেন, পাঠ্যবইয়ের ভুল ছোট হোক আর বড় হোক তা বড় ধরনের অপরাধ। তথ্য বিকৃতির মাধ্যমে কোমলমতি প্রজন্মের বিকৃত ভবিষ্যত্ গড়ার একটি ষড়যন্ত্র। যার দায় এড়ানো যাবে না। এ জন্য শুধু ওএসডি বা লঘু শাস্তি কাম্য নয়, জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

কয়েকটি ভুলের উদাহরণ: এ বছরের তৃতীয় শ্রেণির বাংলা পাঠ্যবইয়ে কুসুমকুমারী দাসের ‘আদর্শ ছেলে’ কবিতায় ‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে’ লাইনের পরিবর্তে ছাপা হয়েছে ‘আমাদের দেশে সেই ছেলে কবে হবে’। বিকৃত রূপ রয়েছে কবিতাটির আরো দুটি লাইনে। তৃতীয় শ্রেণির আরেকটি বইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে ইংরেজিতে লেখা রয়েছে: ‘ডু নট হার্ট এনিবডি’। এখানে ‘আঘাত করা’ অর্থে হার্ট শব্দটি লেখা হলেও, বানান ভুলের কারণে হার্টের অর্থ দাঁড়িয়েছে ‘হূদয়’।

প্রথম শ্রেণির বইয়ে এতদিন অ-তে অজগর শেখানো হলেও, এবার তার বদলে লেখা হয়েছে, অজ অর্থাত্ ছাগল। ও-দিয়ে শব্দ গঠনে ওলের পরিবর্তে ওড়না লেখা নিয়েও চলছে বিতর্ক। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বইয়ে কাজী নজরুল ইসলামের ‘সংকলগু’ কবিতায়ও চারটি লাইন অনুপস্থিত দেখা গেছে। এছাড়া পাঠ্যবই থেকে বাদ পড়েছে অনেক প্রখ্যাত ও প্রগতিশীল লেখকের লেখা। বিভিন্ন শ্রেণির বই থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে শরত্চন্দ্র, লালন শাহ, সত্যেন সেন, রণেশ দাশগুপ্ত, হুমায়ুন আজাদ, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো লেখকদের লেখা।

২০০৭ সালে পাঠ্যবই সংস্কারের কাজ শুরু হলেও আওয়ামী লীগ সরকার তা শেষ করে ২০১১ সালে। এ সময় পাঠ্যবইয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পাশাপাশি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে তুলে ধরা হয়। কিন্তু এখন পরিবর্তনের ফলে পাঠ্যবইগুলোতে সেই মূল্যবোধ আর থাকছে না- এমন অভিযোগ করছেন শিক্ষাবিদরা।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘পাঠ্যবইয়ে ভুল হওয়া উচিত নয়। মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। কারণ শিক্ষাখাতে যেটুকু সুনাম হয়েছে তা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।’

চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে পরীক্ষার আগেই হবু শিক্ষকদের হাতে পৌঁছে যায় উত্তরপত্র: ডিবি - dainik shiksha পরীক্ষার আগেই হবু শিক্ষকদের হাতে পৌঁছে যায় উত্তরপত্র: ডিবি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0065238475799561