জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিভাবক ও শিক্ষকদের ঐক্যবদ্ধভাবে শিশু-কিশোরদের নৈতিক ও আদর্শগত শিক্ষা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। সেই শিক্ষায় আগামীর নেতৃত্ব দিতে সক্ষম ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে তোলার কথাও বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী গতকাল সকালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ঢাকা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত জাতীয় শিশু-কিশোর সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলছে, চলবে এবং কঠোর হাতে তা আমরা দমন করব। ’
সমবেত শিশু-কিশোর ও তাদের অভিভাবকদের উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ তোমরা বিভিন্ন স্কুল ও প্রতিষ্ঠান থেকে সমবেত হয়েছ। সেই সঙ্গে শিক্ষক ও অভিভাবকবৃন্দ আপনারাও এখানে আছেন। আমি সবাইকে এইটুকু বলব—সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমাদের ছেলেমেয়েরা যেন উন্নত জীবন পায়। তারা যেন সৎ চরিত্রবান হয় এবং লেখাপড়ার পাশাপাশি মানুষের মতো মানুষ হয়। আগামী দিনের বাংলাদেশকে গড়ার জন্য যেন এখন থেকেই নিজেদের দক্ষ ও যোগ্য করে গড়ে তোলে। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে যারা শিশু, আমি মনে করি তাদের মধ্য থেকেই আগামীতে কেউ না কেউ প্রধানমন্ত্রী হবেন। মন্ত্রী হবে, অফিসার হবে, বিভিন্ন সেনা নৌ ও বিমানবাহিনী থেকে শুরু করে পুলিশ বাহিনী, বিজিবি কর্মকর্তা হবে। তারা দেশকে গড়ে তুলবে। দেশকে উন্নত সমৃদ্ধশালী করে তুলবে। ’
মহান মুক্তিযুদ্ধ জাতির পিতার নেতৃত্বে শুরু হয়েছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “২৫ মার্চ কালরাতে যখন পাকিস্তানি সামরিক জান্তা নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে গণহত্যা শুরু করে, তখন বঙ্গবন্ধু ২৫ মার্চের শেষ ও ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এর আগে ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু সমগ্র জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করতে ঘোষণা দেন—‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। ’ তিনি একটি সম্পূর্ণ গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনার দিকনির্দেশনা দিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর নির্দেশনায় তখন যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে বাঙালি জাতি প্রতিরোধ শুরু করল। সেই মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমরা মহান বিজয় অর্জন করি। ”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শিশুদের জন্য শিশু অধিকার আইন করে যান, প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক এবং বাধ্যতামূলক করে যান। মেয়েদের শিক্ষা মাধ্যমিক পর্যন্ত অবৈতনিক করে দেন। তিনি আমাদের একটি সংবিধান দেন যেখানে সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করার দায়িত্ব নিয়েছে সরকার। তিনি ক্রমেই একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তুলছিলেন। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য আমাদের উন্নয়ন-অগ্রগতির চাকাকে স্তব্ধ করে দিয়ে পরিবার-পরিজনসহ জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়। ’
সে সময় বিদেশে থাকায় তিনি নিজে ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা প্রাণে বেঁচে গেলেও পরবর্তী সরকার তাঁদের আর দেশে ফিরতে না দেওয়ায় তাঁরা ছয় বছর রিফিউজি জীবনযাপনে বাধ্য হন বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে আর্থ-সামাজিকভাবে উন্নত করা, জাতির পিতার অসম্পূর্ণ কাজকে সম্পূর্ণ করার জন্য ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তাঁকে সভাপতি নির্বাচিত করলে তিনি দেশে ফিরে আসেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা চাই বাংলাদেশ আরো এগিয়ে যাক। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং যাবে। যার কথা জাতির পিতাই তাঁর ৭ মার্চের ভাষণে বলে গেছেন ‘আমাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না। ’ তবে, অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে ২১ বছর। এ দেশের মানুষকে দাবায়ে রাখার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তুু আমরা ’৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই যে কাজ শুরু করেছি আজও দেশের মানুষ তার সুফল পাচ্ছে। সরকার কৃষকদের বিনা সুদে ঋণ দিচ্ছে, ন্যায্যমূল্যে কৃষি উপকরণ, সার দিচ্ছে। শিক্ষার্থীদের বৃত্তি-উপবৃত্তির পাশাপাশি প্রি-প্রাইমারি থেকে মাধ্যমিক শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিবছর ১ জানুয়ারি বিনা মূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করছে। স্বাস্থ্যসেবাকে দোরগোড়ায় আনতে কমিউনিটি ক্লিনিক করে ৩০ রকমের ওষুধ বিনা মূল্যে দেওয়া হচ্ছে। ডিজিটাল কনটেন্টসমৃদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলে স্কুলে স্কুলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, ডিজিটাল ক্লাসরুম গড়ে তোলা হচ্ছে। সবার নাগালের মধ্যে ইন্টারনেট সেবাকে নিয়ে ঘরে বসেই অর্থ উপার্জনের জন্য আউটসোর্সিং এবং লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং কোর্স চালু করা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, অর্থনৈতিক মুক্তির কর্মসূচিকে এবার আন্দোলনে রূপ দিতে হবে। তবেই আমরা গড়ে তুলতে পারব ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত জাতির পিতার স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’। আমরা স্বাধীনতার সুফল বাংলার প্রতিটি ঘরে পৌঁছে দিতে চাই।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। ঢাকা জেলা প্রশাসক মো. সালাহউদ্দিন অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন, মনোজ্ঞ ডিসপ্লে উপভোগ করেন। বাসস।