শরীয়তপুরে পরিবারের চাপ মেনে বাল্যবিবাহ না করা পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী সাবিনা আক্তারের মরদেহ দাফন করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার ময়নাতদন্ত শেষে ওই দিন সন্ধ্যায় নিজ গ্রামের কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এ সময় তার পরিবারের পলাতক সদস্যরা কেউ হাজির হননি। এদিকে তার মৃত্যুরহস্য উদ্ঘাটনের দাবি জানিয়েছেন গ্রামবাসী।
শরীয়তপুর সদর উপজেলার মধ্যপাড়া গ্রামের নিবাসী সুলতান খাঁর মেয়ে সাবিনা এবার প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা দিচ্ছিল। গত রোববার গণিত পরীক্ষার মধ্য দিয়ে সমাপনী পরীক্ষা শেষ হয়। পরীক্ষা শেষে দুপুরে বাড়ি ফিরলে তার মা রুমা বেগম ও বাবা সুলতান খাঁ জানান তার বিয়ে ঠিক হয়েছে। সে তাতে বেঁকে বসলে তার ওপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালানো হয় বলে প্রতিবেশীরা অভিযোগ করেন। সোমবার সকালে গ্রামবাসীকে সাবিনার পরিবারের সদস্যরা বলেন, সাবিনা হৃদ্রোগে মারা গেছে। তবে পুলিশ বলছে, নির্যাতনের মুখে সাবিনা আত্মহত্যা করেছে বলে তাদের ধারণা।
সাবিনার মৃত্যুর ঘটনাটি সন্দেহজনক হওয়ায় সোমবার দুপুরে শরীয়তপুর সদরের পালং মডেল থানার পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। পুলিশ বাড়িতে যাওয়ার পর সাবিনার বাবা-মা ও ভাই পালিয়ে যান। পরে মঙ্গলবার ময়নাতদন্ত শেষে সন্ধ্যায় সাবিনাকে গ্রামের মধ্যপাড়া কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার সকালে মধ্যপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সাবিনার নানাবাড়ির দুটি ঘর তালাবদ্ধ। রান্নাঘরের কোণে বসে আছেন তার নানি মাকসুদা বেগম। তিনি বলেন, সাবিনার বাবা-মা ও ভাই কোথায় আছেন জানেন না। লাশ দাফনের সময় তাঁরা কেউ আসেননি।
সাবিনা কীভাবে মারা গেছে জানতে চাইলে নানি বলেন, গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। গ্রামের মানুষকে বলেছেন হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে, এখন বলছেন আত্মহত্যা করেছে—এমন প্রশ্ন করলে তিনি কোনো জবাব দেননি।
এদিকে সাবিনাদের প্রতিবেশী রেখা আক্তার বলেন, ‘প্রথম আমাদের জানানো হলো সাবিনা হৃদ্রোগে মারা গেছে। এখন বলা হচ্ছে সে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে। কোনটা সত্য? তার মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটন করে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হোক।’
এ বিষয়ে পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খলিলুর রহমান বলেন, মেয়েটির মৃত্যুরহস্য উদ্ঘাটনে কাজ করছে পুলিশ। সে বাল্যবিবাহে রাজি না হওয়ায় আত্মহত্যা করেছে, নাকি কেউ তাকে হত্যা করেছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তার বাবা-মা ও ভাইকে খোঁজা হচ্ছে।