পে স্কেলের গ্যাঁড়াকল ও সৃষ্টপদে শিক্ষকদের আমরণ অনশন - Dainikshiksha

পে স্কেলের গ্যাঁড়াকল ও সৃষ্টপদে শিক্ষকদের আমরণ অনশন

অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী |

mujjam sirকার পোড়া কপাল কে জানে ? পে স্কেলের না সুবিধাভোগীদের ? এবার পে স্কেল তার চৌদ্দ গোষ্ঠীর ইজ্জত মেরে ছাড়লো। অতীতের পে -স্কেলগুলো দেখেছি। কোনো স্কেল নিয়ে এতো হৈ- চৈ হতে শুনিনি। এবার পে- কমিশন নতুন নতুন বিতর্কের জন্ম দিতে দিতে শেষ পর্যন্ত পে- স্কেলটাকেই বিতর্কিত করে ফেললো ।

প্রতিটি পে স্কেল ঘোষিত হবার পর সুবিধাভোগীগণ স্বল্প সময়ে এর সুফল পেয়েছেন । কেবল যা হতো, তা ছিল জিনিস পত্রের দাম একটু বেড়ে যেতো । কিন্তু , এবার এর কোনো আলামত নেই । সরকার এ ব্যাপারে সচেতন । বাজার পুরোপুরি তাদের নিয়ন্ত্রণে । এ জন্য সরকার অনেক অনেক ধন্যবাদ পেতে পারেন । কিন্তু, পে কমিশনের লোকজন সরকারকে অনেকটা বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে । তারা এ কী করলো ? মনগড়া সুপারিশ পেশ করে তারা তাদের পথে চলে গেছে, সরকারকে ফেলে দিয়েছে গ্যাঁড়াকলে । এতো বাজে রকম সুপারিশ আর কোনো পে – কমিশন কোনদিন করেনি । উদ্ভট রকম যতো সুপারিশ তাদের ! টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড উঠিয়ে দেবার সুপারিশ করে তারা যে প্যাঁচাল বাঁধালো , তা নিরসনে সরকার আন্তরিক না হলে উপায় ছিলো না । ইনক্রিমেন্টের বিষয়ে ও তাই । সব মিলিয়ে বর্তমান পে স্কেলের লেজে গোবরে অবস্থা ।তাদের সুপারিশ বাস্তবায়ন করলে সিনিয়র- জুনিয়র ভেদাভেদ থাকে না ।

দশ বছর আগের জন আর পরের জন একই স্তরে অবস্থান করেন । অতি সম্প্রতি সরকার পে স্কেলে কিছু কিছু সংশোধন করতে যাচ্ছে বলে প্রতীয়মান হয় । আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত যাদের ইন্ক্রিমেন্ট প্রাপ্য, তারা সকলে তা পাবেন মর্মে দৈনিক শিক্ষা ডট কম সহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম জানা যায় । এভাবেই সরকার পে- স্কেলের অসন্তোষ দূর করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে ।কিন্তু , সরকারকেই যদি পে -স্কেল সমন্বয় করতে হয় , তবে পে কমিশন কি ঘোড়ার ঘাস কাটলো ? শুধু কী তাই ? গত জুলাই মাস থেকে পে স্কেল কার্যকর করে বকেয়া সহ গত ডিসেম্বর মাসের বেতন নতুন স্কেলে সংশ্লিষ্টরা পাবার কথা ? কিন্তু , মাত্র কয়েক শ্রেণির চাকুরীজীবি ছাড়া কতজন তা পেয়েছেন আজ অবধি ? পে স্কেলের গ্যাঁড়াকল ভেদ করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে । ফিক্সেসনের নামে বাণিজ্য ও চলছে অনেক জায়গায় । তাই , এখনো অনেকে পে- স্কেলের নাম গন্ধ পর্যন্ত পাননি ।

এবার পে স্কেলে দেশের শিক্ষক সমাজ সর্বাধিক বঞ্চিত হয়েছেন । কেবল তা-ই নয় , এতে তাঁদের মর্যাদা হানি ও হয়েছে । এ নিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সর্বস্তরের শিক্ষকরা ক্ষুব্ধ হয়ে আছেন । বেসরকারি শিক্ষকদের নিয়ে পে স্কেলে তামাসা কম হয়নি । সরকারি কলেজের শিক্ষকদের মধ্যে ও অসন্তোষ । বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ দ্বিতীয় দফা সরকারকে আলটিমেটাম দিয়েছেন । আগামী ৬ মার্চের মধ্যে সরকার তাঁদের বিষয়ে সন্তোষজনক সিদ্ধান্ত না নিলে তাঁরা কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করবেন মর্মে সরকারকে জানিয়ে দিয়েছেন ।

দেশের বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহের সৃষ্টপদে কর্মরত কয়েক হাজার শিক্ষক বেশ কয়েক বছর যাবত পেটে পাথর বেঁধে জাতি গঠনের মতো গুরু দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন । পদগুলো হতভাগ্য শিক্ষকগণ সৃষ্টি করেননি। সরকারই সৃষ্টি করে দিয়েছেন এবং তাঁরা তাতে বিধি মোতাবেক নিয়োগ প্রাপ্ত হয়েছেন । কিছু কিছু সৃষ্টপদে দু’ বছর পর শিক্ষকদের এমপিও দেবার প্রতিশ্রুতি স্বয়ং সরকারের । দু’ বছরের স্থলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাঁচ বছর পূর্ণ হবার পর ও এমপিও’র কোন হদিছ নেই । আইসিটি শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা আজ সর্বজনবিদিত । আইসিটি শিক্ষা যেমন অপরিহার্য , তেমনি আইসিটি শিক্ষকদের গুরুত্ব সর্বাপেক্ষা বেশী । ক্ষুধার্ত আইসিটি শিক্ষক ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়বেন কীভাবে ? তাই আইসিটি সহ সৃষ্টপদের সকল শিক্ষক দেশ , জাতি ও শিক্ষার বৃহত্তর স্বার্থে তাঁদের প্রতি নজর দেবার জন্য সরকারকে বহুবার বহুভাবে নিবেদন করেছেন । কিন্তু, কে শুনে কার কথা ? এ সব শিক্ষক ও তাঁদের পরিবার পরিজনের আর্তনাদে আল্লার আরশ পর্যন্ত কাঁপছে । কিন্তু,আমাদের কর্তাদের টনক এতটুকু নড়ছে না ।

সর্বশেষ, আমাদের সৃষ্টপদে নিয়োজিত শিক্ষকগণ দেশ , জাতি ও শিক্ষার বৃহত্তর স্বার্থে গত ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে আমরণ অনশন শুরু করেছেন । জাতীয় প্রেসক্লাবে খোলা আকাশের নীচে জাতি গঠনের কারিগরদের এ কর্মসূচি যৌক্তিক ও ন্যায় সঙ্গত হলে ও জাতির জন্য তা মোটে ও সম্মান জনক নহে । জাতিকে লজ্বামুক্ত করতে সৃষ্টপদের শিক্ষকদের অবিলম্বে এমপিও দেবার ঘোষণা দিয়ে তাঁদের হাঁসি মুখে বাড়ি ফিরে যাবার ব্যবস্থা করে দিন – শিক্ষক ও শিক্ষা বান্ধব সরকারের কাছে আজ এই জোর নিবেদন ।

লেখক : অধ্যক্ষ, চরিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ , কানাইঘাট, সিলেট ।

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0065808296203613