প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীতকরণ প্রক্রিয়া থেমে গেলো? - দৈনিকশিক্ষা

প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীতকরণ প্রক্রিয়া থেমে গেলো?

নিজস্ব প্রতিবেদক |

প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীত করার গতি আবারও শ্লথ হয়ে পড়েছে। গত সোমবার মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে সরকারের একাধিক সিনিয়র মন্ত্রী বলেছেন, ‘যথাযথ প্রস্তুতি না নিয়ে তাড়াহুড়ো করেই প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এতে গোটা শিক্ষা ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলতা দেখা দিতে পারে, পরিণামে সরকারের সুনাম নষ্ট হবে।’ শিক্ষাবিদর ও শিক্ষার এনজিওর মালিকরা বলছেন, ‘শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করার মতো যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ ও অবকাঠামো সৃষ্টি না করেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এর মধ্যে সমাপনী পরীক্ষা বাতিল করা বা না করা নিয়ে গণশিক্ষা মন্ত্রী তালগোল পাকিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের গোলকধাঁধায় ফেলে দিয়েছেন।’ যদিও প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার মঙ্গলবার সাংবাদিকদের , ‘পর্যায়ক্রমে প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করা হবে।’

আন্ত:মন্ত্রণালয় সভা করার পর গত ১৮ মে হঠাৎ ঘোষণা দেওয়া হয়, শিক্ষানীতি অনুযায়ী চলতি বছর থেকেই প্রাথমিক শিক্ষাস্তর অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীত করা হবে। যদিও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সারাদেশের প্রায় ৮০ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন করে তিনটি শ্রেণি খোলার কোনো কাজই শুরু হয়নি।

পরীক্ষামূলকভাবে ২০১৩ ও ২০১৪ সালে মোট ৬২৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি চালু করা হলেও প্রত্যাশা অনুযায়ী ফল মেলেনি। পরীক্ষামূলকভাবে নতুন তিনটি শ্রেণি যুক্ত করা বিদ্যালয়গুলোতেও প্রয়োজনীয় ও যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক ও পর্যাপ্ত অবকাঠামো নেই।

প্রাথমিক সমাপনীর বাতিলের প্রস্তাব মন্ত্রীসভায় যাওয়া ও নাকচ হওয়ার নেপথ্যের কারণ হিসেবে মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা দৈনিকশিক্ষাকে জানান, তাদের ধারণা ছিল প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে নতুন শ্রেণি না খুলে বিভিন্ন উচ্চ বিদ্যালয়গুলোতেই ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের ব্যবস্থা করা যাবে। এজন্যই তারা মন্ত্রিসভায় সমাপনী পরীক্ষা বাতিল করে প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীতকরণের প্রস্তাবনা পাঠান।

কিন্তু মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীসহ একাধিক সিনিয়র মন্ত্রী মত দেন যে, ‘এক স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে অন্য স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়তে যেতে হবে, এটি কোনো উপযুক্ত সমাধান নয়।’ মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে প্রায় সোয়া ঘণ্টার আলোচনায় উঠে আসে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর পাশের অনেক স্কুলেই শিক্ষার্থীদের সংযুক্তি দেওয়ার সুযোগ নেই।

হাওর-বাঁওড়, চর কিংবা অনগ্রসর এলাকায় এ ধরনের স্কুলের সমস্যা আরও প্রকট। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে নতুন তিনটি শ্রেণিস্তর যুক্ত করলেও প্রশ্ন আসবে, মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক কীভাবে সপ্তম বা অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেবেন।

এ সময় সিনিয়র মন্ত্রীদের কয়েকজন আকস্মিকভাবে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষার স্তর নির্ধারণ সম্পর্কেই আপত্তি তোলেন। তারা বলেন, ‘শিক্ষার স্তর পরিবর্তনের এই সিদ্ধান্ত কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই নেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় সামনে এগোলে বিপদ বাড়বে।’ তাই প্রাথমিক শিক্ষাস্তর উন্নীতকরণের দিকগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যালোচনা করে আবার মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করতে বলা হয়। মন্ত্রিসভার এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক স্তর উন্নীতকরণের কাজ আবারও পিছিয়ে যায়।

প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে কাজ করেন এমন গবেষক-শিক্ষক-পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ‘নতুন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হলে নতুন পাঠ্যক্রম প্রণয়ন, প্রতিষ্ঠানের কাঠামো, শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, জনবল, ব্যবস্থাপনা_ সবকিছুই ঢেলে সাজাতে হবে। নিয়োগ দিতে হবে স্নাতক ও বিএড ডিগ্রিধারী শিক্ষক। কিন্তু প্রস্তাবিত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে এসব খাতে বিশেষ কোনো অর্থের বরাদ্দ রাখা হয়নি।’

শিক্ষার ‘উন্নতির’ জন্য বিদেশ থেকে কোটি কোটি ডলার এনে তা খরচ করে কয়েকশ এনজিও। এসব এনজিওর মোর্চা গণসাক্ষরতা অভিযানের প্রধান নির্বাহী রাশেদা কে চৌধূরী সাংবাদিকদের  বলেন, ‘২০১১ খ্রিস্টাব্দ থেকে শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করার কথা ছিল। দুঃখজনক হলেও সত্য, চার বছর পর সেটি বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েও আটকে দেওয়া হলো।’ তিনি বলেন, ‘সরকার থেকে একেক সময় একেক ধরনের সিদ্ধান্ত দেওয়া হলে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়, লাখ লাখ শিক্ষার্থী, অভিভাবক দুশ্চিন্তা ও দুর্ভোগে পড়েন।’

সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (সেসিপের)মাসিক আড়াই লাখ টাকা বেতনের পরামর্শক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ নেই, স্নাতক ও বিএড ডিগ্রিধারী শিক্ষক নেই, কারিকুলাম প্রণয়ন হয়নি এবং নতুন কারিকুলামে পাঠ্যবইও শিক্ষার্থীরা পাবে না। তারপরও প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করার সিদ্ধান্ত হয়!’ তিনি বলেন, ‘ঘোষণা দেওয়ার আগেই এসব বিষয়ের সমাধান জরুরি ছিল। এসব না করলে শিক্ষায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি দেখা দেবে।’

চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে পরীক্ষার আগেই হবু শিক্ষকদের হাতে পৌঁছে যায় উত্তরপত্র: ডিবি - dainik shiksha পরীক্ষার আগেই হবু শিক্ষকদের হাতে পৌঁছে যায় উত্তরপত্র: ডিবি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0039389133453369