দেশের বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার মান নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায় করে, তা কতটা যৌক্তিক, সেটিও বিবেচনার দাবি রাখে। সেবার মনোভাব নিয়েই প্রত্যেক শিক্ষার্থী মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। পাঠ্যসূচি ও পাঠদান পদ্ধতি ত্রূটিমুক্ত না হলে একজন চিকিৎসক পেশাগত জীবনে রোগীর প্রতি কতটা মানবিক আচরণ করবেন, সে প্রশ্ন থেকেই যায়। আমাদের আরো অনেক চিকিৎসক প্রয়োজন। কিন্তু নিশ্চিত করতে হবে যে, যারা চিকিৎসকের ডিগ্রি অর্জন করছেন, তারা মানসম্পন্ন মেডিকেল শিক্ষা পেয়েই ডিগ্রিটা পাচ্ছেন। নইলে এ ব্যবস্থায় মেডিকেল শিক্ষা বিপজ্জনক। কারণ চিকিৎসকের পেশার সঙ্গে মানুষের জীবন-মরণের প্রশ্ন জড়িত।
সামাজিক মর্যাদা ও অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্যের কারণে গত কয়েক দশকে দেশে চিকিৎসা পেশার প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। এ আগ্রহের কারণে গড়ে উঠেছে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মেডিকেল কলেজ। দেশে রোগীর তুলনায় চিকিৎসকের সংখ্যা অপ্রতুল। এ প্রেক্ষাপটে মেডিকেল কলেজের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি আশাব্যঞ্জক হলেও বাস্তবতা হলো, এসব প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করা চিকিৎসকদের ওপর জনগণ ভরসা করতে পারছে না। ফলে প্রতিবেশী ভারতসহ বিভিন্ন দেশে চিকিৎসার উদ্দেশে জনস্রোত বেড়েই চলেছে। দেশে বিদ্যমান শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন না হলে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করা চিকিৎসকের মান যে আরো কমবে,
তাতে সন্দেহ কী?
মানুষের আস্থা পাচ্ছেন না বিপুলসংখ্যক বেসরকারি চিকিৎসক। নিম্নমানের বেসরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করা চিকিৎসকরাই নাকি এ পরিস্থিতির জন্য দায়ী। বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মান নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও এ কথা ঢালাওভাবে বলে দেয়া যায় না যে, ওইসব প্রতিষ্ঠানের ডিগ্রিধারী সব চিকিৎসকই মানহীন; আর সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করা সবাই উচ্চমানসম্পন্ন। দেশে চিকিৎসকের চাহিদা আছে। না থাকলে বছর বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজের সংখ্যা বাড়ত না এবং শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতেন না। বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর মান নিশ্চিত করা দরকার। সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির একটি মান ও রীতি আছে, বেসরকারি কলেজে অনেক সময় তা লঙ্ঘিত হতে দেখা যায়। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সংকটও রয়েছে সেখানে। পাশাপাশি কলেজসংলগ্ন হাসপাতালও কোনো কোনো বেসরকারি মেডিকেল কলেজে নেই। ফলে শিক্ষার্থীরা হাতে-কলমে শেখার সুযোগ পাচ্ছেন না। এর মূল দায় অবশ্যই চিকিৎসাশিক্ষা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের।