মানবতার নামে উদ্দেশ্য হাসিল দুই মাদ্রাসার - দৈনিকশিক্ষা

মানবতার নামে উদ্দেশ্য হাসিল দুই মাদ্রাসার

কক্সবাজার প্রতিনিধি |

মিয়ানমারের রাখাইন থেকে রোহিঙ্গাদের আনতে কক্সবাজারের টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের দুটি মাদরাসা কর্তৃপক্ষ নিজেরাই নৌকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। তবে তাদের এই ‘মানবিকতা’র পেছনে উদ্দেশ্য হাসিলের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

রোহিঙ্গাদের এনে আটকে রেখে টাকা-পয়সা, সোনার অলংকার কেড়ে নেওয়ার অভিযোগে দারুস শরিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা ফিরোজ আলমকে ছয় মাসের কারাদণ্ডও দিয়েছেন আদালত।

এ ছাড়া বিদেশি অনুদান পেতে রোহিঙ্গাদের প্রথমে সেখানে রেখে পরে আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানো হয় বলে স্বীকার করেছেন বাহারুল উলুম মাদরাসার (বড় মাদরাসা) অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ হোসেন।

টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা হাজি সোনা আলী  বলেন, ‘রাখাইনে নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গাদের প্রতি আমাদের সরকারপ্রধান থেকে শুরু করে দেশের মানুষের সহানুভূতি রয়েছে। তাই বলে আমরা প্রলুব্ধ করে নিয়ে আসব কেন?’ তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের প্রতি এখন সবাই সাময়িক আবেগ দেখিয়ে ত্রাণ নিয়ে আসছে। কিন্তু এই আবেগ কত দিন স্থায়ী হবে, সেটাই বড় প্রশ্ন। ’

স্থানীয়দের অভিযোগ, শাহপরীর দ্বীপের বাহারুল উলুম মাদরাসা (বড় মাদরাসা) কর্তৃপক্ষ ব্যাপক হারে রোহিঙ্গাদের নিয়ে আসছে। নিজেরাই নৌকা ভাড়া করে রাখাইনে পাঠিয়ে রোহিঙ্গাদের নিয়ে আসছে তারা। বিদেশ থেকে অনুদান পেতে তাদের এই আয়োজন।

এ প্রসঙ্গে টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর হোসেন  বলেন, ‘মাদরাসা দুটি যা করছে তা মস্ত বড় অন্যায়।

এমনকি একজন মাদরাসার অধ্যক্ষ এমন কাজ করে ছয় মাসের কারাদণ্ডাদেশ নিয়ে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। তার পরও এসব কাজ থেকে বিরত থাকছে না মাদরাসা কর্তৃপক্ষ। ’

চেয়ারম্যান বলেন, ‘পুরো বিষয়টি আমার কাছে রহস্যময়। আমি ব্যাপারটি থানা-পুলিশ ও ইউএনও সাহেবকে জানিয়েছি। ’

কক্সবাজার জেলা পরিষদ সদস্য এবং সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. শফিক মিয়া বলেন, ‘যারা রাখাইন থেকে রোহিঙ্গাদের এপারে নিয়ে আসার জন্য এ রকম মরিয়া হয়ে পড়ে তারা কি আসলে মানবিক সহায়তা নাকি ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে করে যাচ্ছে, সেটা খতিয়ে দেখা জরুরি হয়ে পড়েছে। ’

এসব বিষয়ে জানতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বাহারুল উলুম মাদরাসার (বড় মাদরাসা) অধ্যক্ষ মওলানা মোহাম্মদ হোসেনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয়। তিনি স্বীকার করেন, ‘মাদরাসার একটি বড় অঙ্কের তহবিল প্রয়োজন। তাই এ কাজের আয়োজন। ’

মাদরাসা অধ্যক্ষ জানান, নৌকা নিয়ে রোহিঙ্গাদের এনে প্রথমে মাদরাসায় রাখা হয়। তারপর বিভিন্ন শিবিরে পাঠানো হয়। অনুদান পাওয়ার কথা জানিয়ে মাদরাসা অধ্যক্ষ বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ঢাকা, সিলেট, নোয়াখালী ও টাঙ্গাইল থেকে আসা ব্যক্তিরা প্রচুর টাকা দিয়েছে। এমনকি তুরস্ক থেকে আসা একটি দল রোহিঙ্গাদের পরিবারপিছু দিয়েছে নগদ ২০ হাজার টাকা।

আর দারুস শরিয়া মাদরাসা কর্তৃপক্ষ তো রীতিমতো নৌকা কিনে দিয়েছে রাখাইন থেকে রোহিঙ্গাদের নিয়ে আসার জন্য। স্থানীয়রা জানায়, এই মাদরাসায় অনেক রোহিঙ্গা শিক্ষার্থী আগে থেকেই পড়ালেখা করছে। তারাই রোহিঙ্গাদের আনার ব্যাপারে মুখ্য ভূমিকা রাখছে। মওলানা আবদুল্লাহ নামের এক শিক্ষক রোহিঙ্গাদের নিয়ে আসার ব্যাপারে দায়িত্বও পালন করছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে টেকনাফ মডেল থানার ওসি মো. মাঈনুদ্দিন খান  বলেন, রোহিঙ্গাদের আটকে টাকা-পয়সা ও সোনাদানা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে গত ৫ সেপ্টেম্বর দারুস শরিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ ফিরোজ আলমকে হাতেনাতে আটক করা হয়। এরপর ভ্রাম্যমাণ আদালত তাঁকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন। ওই অধ্যক্ষ বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।

এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহেদ হোসেন বলেন, ‘ব্যাপারটি আমার কাছে অস্পষ্ট। কেননা রোহিঙ্গারা তো এমনিতেই আসছে, তাদের জায়গা দিচ্ছি আমরা। তার পরও তাদের গায়ে পড়ে আনা হচ্ছে কেন? তবু বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেব। ’

গত বৃহস্পতিবার ইনানী সৈকত তীরবর্তী সাগরে যে ট্রলার ডুবে গিয়েছিল তার বেঁচে যাওয়া আরোহী রোহিঙ্গা আবদুস সালাম হাসপাতালে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের একজন ‘আমির সাহেবে’র ফোন এবং পাঠানো ট্রলার পেয়েই তাঁরা শাহপরীর দ্বীপ অভিমুখে যাত্রা করেছিলেন।

এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে দারুস শরিয়া মাদরাসার শিক্ষক মওলানা আবদুল্লাহ রোহিঙ্গাদের আনার কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি রোহিঙ্গা আনার কাজে জড়িত নই। তবে কুমিল্লা থেকে আসা জামায়াতের লোকজন রোহিঙ্গা এনেছিল। কুমিল্লার হুজুররা মাদরাসায় থাকতেন আমার সঙ্গে। ’

তবে মাদরাসাটির সিনিয়র শিক্ষক মওলানা ছৈয়দুল্লাহ বৃহস্পতিবার রাতে সঙ্গে আলাপে রোহিঙ্গাদের আনার কথা স্বীকার করেন।

নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট - dainik shiksha জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ - dainik shiksha আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.006425142288208