সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা প্রকল্প রিচিং আউট অব স্কুল চিলড্রেনের (রস্ক) প্রায় ৪৮০ কোটি টাকা ফেরত যাচ্ছে। কতিপয় আমলা ও এনজিওর ব্যথতা ও দুর্নীতিতে মুখ থুবড়ে পড়েছে প্রকল্পটি। শুরু থেকেই এ প্রকল্পের দায়িত্ব প্রশাসন ক্যাডারের হাতে।
জানা যায়, এ পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ অর্ধেকের বেশি পার হয়েছে। কিন্তু অর্থ ব্যয় হয়েছে মাত্র ২৮ শতাংশ। রস্ক প্রকল্পের মধ্য মেয়াদি ও ডিপিপি সংশোধনসংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে অর্থ ফেরতের বিষয়টি উঠে এসেছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনে কক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বৈঠকের কার্যবিবরণীতে উল্লেখ করা হয়, এ প্রকল্পের মেয়াদে পুরো টাকা ব্যয় হবে না। ফলে পাঁচ থেকে ছয় কোটি মার্কিন ডলার অব্যয়িত থাকবে। প্রকল্পের মেয়াদে টাকা ব্যয় না হওয়ায় এ টাকা ফেরত যাবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রস্ক প্রকল্প পরিচালক ড. এম মিজানুর রহমান রোববার বলেন, এখনও এগুলো নিয়ে কাজ করছি। প্রকল্প উন্নয়নসংক্রান্ত সংশোধন (আরডিপিপি) হলে বোঝা যাবে কোন খাতে কত টাকা প্রয়োজন হচ্ছে। আদৌ কোনো টাকা ফেরত যাবে কিনা বা আরও টাকার প্রয়োজন হবে কিনা।
প্রকল্প থেকে টাকা ফেরত গেলে দাতা সংস্থার নেতিবাচক ধারণা হবে। এই নেতিবাচক ধারণা কাটাতে প্রকল্পের ধরন পরিবর্তন করে টাকা ব্যয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে এ ব্যয় কতটুকু গুণগত হবে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কারণ প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানোর তালিকার মধ্যে রয়েছে প্রকল্পের অর্থায়নে পরিচালিত স্কুলগুলোর শিক্ষকদের বেতন ও ইনসেনটিভ বৃদ্ধি, প্রকল্প পরিচালনার ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন, প্রকল্পের আওতায় নতুন উপজেলা সংযোগ, ঢাকা মহানগরী ছাড়াও গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও বিভাগীয় শহরের বস্তি এলাকায় শিক্ষা কেন্দ্র স্থাপন করে এ অর্থ ব্যয় করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
২০১২ সালের ২ অক্টোবর বিশ্বব্যাংক রস্ক প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের অনুমোদন দেয়। ২০১৭ সালে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। মূলত উপকূল এলাকাসহ সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের স্কুলে শিক্ষা দান করাই এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য। এ প্রকল্পের আওতায় সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের স্কুলে নিয়ে আসার কার্যক্রমে ১৩ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার, শিক্ষার মানোন্নয়নে এক কোটি ১৩ লাখ ডলার, প্রকল্পের সক্ষমতা বাড়াতে ৭৭ লাখ ডলার ও এমঅ্যান্ডই বাস্তবায়নে ৫০ লাখ ডলার দেয়া হয়।
বৈঠকের কার্যবিবরণীতে উল্লেখ করা হয়, রস্ক প্রকল্পের লক্ষ্য অনুযায়ী শিশুদের জন্য শিখন কেন্দ্র স্থাপন কার্যক্রমের অগ্রগতি হয়েছে ৮০ শতাংশ। পাশাপাশি শিশু শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম ৯০ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। তবে অনেক শিক্ষার্থী ভর্তির পরও পুনরায় ঝরে পড়েছে।
আবার প্রকল্পের নীতিমালা অনুযায়ী যোগ্য না হওয়ায় বাদ দেয়া হয়েছে। এছাড়া মাঝপথে বন্ধ হয়ে গেছে অনেক শিখন কেন্দ্র। ফলে ভর্তি হওয়া শিশুরা প্রত্যেকেই প্রাথমিক শিক্ষা পর্ব শেষ করতে পারছে না। বৈঠকে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা যাতে পাঠ অব্যাহত রাখতে পারে এবং পঞ্চম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়ে উচ্চতর শ্রেণীতে ভর্তির সুযোগ পায় সে ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়ার কথা বলা হয়। বৈঠকে উপস্থিত অর্থনৈতিক বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, সহায়তার ৪৮০ কোটি টাকা ফেরত দেয়া হলে দাতা সংস্থার নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হবে। এজন্য এ অর্থ ফেরত না দিয়ে প্রকল্পের ধরন পরিবর্তন করে এ অর্থ ব্যবহার করার কথা ভাবা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ বিপুল অর্থ ফেরত ঠেকাতে নতুন করে কার্যপরিকল্পনা চাওয়া হয়েছে রস্ক ইউনিট ও বাস্তবায়ন সহায়ক প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়ে গঠিত কমিটির কাছে। এছাড়া এ প্রকল্পের আওতায় কিছু নতুন উপজেলা যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিশেষ করে দুর্গম অঞ্চল, হাওর, চর অঞ্চল, চা বাগান, উপজাতি অধ্যুষিত এলাকা নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
পাশাপাশি যেখানে বিদ্যালয় বহির্ভূত শিশু ও ঝরে পড়ার হার বেশি ও প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা যাবে না ওই সব এলাকাও যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। নতুন উপজেলাগুলোতে সর্বোচ্চ ৫০টি শিখন কেন্দ্র স্থাপন, বিভাগীয় শহর ও বড় বড় সিটি কর্পোরেশনে বস্তিগুলোতে আনন্দ স্কুল স্থাপন করার কথা বলা হয়