শিক্ষকদের দাবি কমে দুই, অনড় অবস্থান থেকে সরে এসেছেন - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষকদের দাবি কমে দুই, অনড় অবস্থান থেকে সরে এসেছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক |
????????????????????????????????????
????????????????????????????????????

অচলাবস্থা নিরসনে আগের অনড় অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসেছেন শিক্ষকরা। মর্যাদার প্রশ্নে চার দফা দাবি থেকে দুই দফায় নেমে এসেছেন তাঁরা। গতকাল দুই শিক্ষক নেতা সুনির্দিষ্টভাবে সরকারকে সেই প্রস্তাব জানিয়েও দিয়েছেন। শিক্ষক নেতারা বলছেন, মর্যাদা ফিরে পেতে তাঁরা সর্বোচ্চ ছাড় দিতেও প্রস্তুত। দাবি মানলেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।

দুই প্রস্তাবের মধ্যে একটিতে শিক্ষক নেতারা বলেছেন, মোট সচিবদের মধ্য থেকে যে হারে সিনিয়র সচিব করা হয়েছে অধ্যাপকদের মধ্য থেকেও সেই একই হারে সিনিয়র অধ্যাপক করতে হবে। উভয়ের মর্যাদা ও সুবিধা সমান করতে হবে। দ্বিতীয় প্রস্তাবে বলা হয়েছে, অন্যান্য শিক্ষকের ক্ষেত্রে সপ্তম জাতীয় বেতন স্কেলের মতো সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বহাল রাখা সম্ভব না হলে অন্য কোনো উপায়ে একই মর্যাদা ও সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে শিক্ষকদের মর্যাদা আগের মতোই অব্যাহত থাকে।

শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে দুই দিন ধরে অচলাবস্থা বিরাজ করছে দেশের ৩৭ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। গতকাল মঙ্গলবার শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিস্টার ও কোর্স ফাইনাল পরীক্ষা নেওয়া হলেও বাকি ৩৬ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা কিছুই হয়নি বলে জানা গেছে। আজও চলছে কমবিরতি।

কর্মবিরতির দ্বিতীয় দিন গতকাল দুপুরে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নেতাদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। এরপর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও মহাসচিব অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল সচিবালয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে ঘণ্টাখানেক রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। সেখানেই সুনির্দিষ্ট দুই প্রস্তাব লিখিত আকারে তুলে ধরেন তাঁরা।

সভা শেষে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘সমস্যা সমাধানে এক ধাপ এগিয়েছি আমরা। খুবই খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। কিভাবে সংকট কাটিয়ে ওঠা যায় তা নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা এগোচ্ছি। আমরা আশাবাদী। একটা সুষ্ঠু সমাধানে যাওয়ার জন্য যে কার্যক্রম নেওয়া দরকার সে কার্যক্রমটা আজকের আলোচনায় আরো এগোলো।’

শিক্ষামন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমি শিক্ষা পরিবারের সদস্য, আমি গভর্নমেন্টেরও সদস্য। গভর্নমেন্ট সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু কিভাবে সমাধানে যাওয়া যায় সে বিষয়টি তো আমরা আলোচনা করতেই পারি। আমরা চাইব যেন এমন একটি সন্তোষজনক সমাধান হয়, যেখানে আমাদের সম্মানিত শিক্ষকদের যেন সত্যিকার অর্থে সম্মান বজায় থাকে। একই সঙ্গে বেতন নিয়ে যে সমস্যা হয়েছে তারও যেন সমাধান হয়।’

সমস্যা সমাধানে কত দিন সময় লাগতে পারে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘এ রকম কোনো নির্ধারিত বিষয় নিয়ে আমরা বসিনি। তবে সমস্যার সমাধান অবশ্যই বের হবে।’

বৈঠক শেষে ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আলোচনার কোনো বিকল্প নেই। এ জন্য আমরা আলোচনা করেছি। আমরা চাচ্ছি একটা সম্মানজনক ও শান্তিপূর্ণ সমাধান। আলোচনা চলবে। ইনশা আল্লাহ, আমরা এক জায়গায় পৌঁছে যাব।’ আন্দোলন থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওই পর্যায়ে আসেনি। আমরা আলোচনার শুরুটা করলাম।’

গতকাল রাতে ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ড. এ এম এম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রী আমাদের দাবিগুলো আবারও জানতে চেয়েছিলন। সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এগুলো না থাকলে আমরা কী ক্ষতির মুখে পড়ব তা-ও জানতে চেয়েছেন তিনি। তবে আলোচনা চললেও আমাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। আমরা আমাদের মর্যাদার প্রশ্নে অনড় রয়েছি।’

শিক্ষামন্ত্রী ও ফেডারেশন নেতারা বৈঠকের মূল বিষয়বস্তুর ব্যাপারে কিছু খোলাসা করেননি। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষামন্ত্রী সমস্যা সমাধানে শিক্ষক নেতাদের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব নিয়ে বৈঠকে আসতে বলেছিলেন। একেবারে যা না হলেই নয়, এমন প্রস্তাব লিখিতভাবে দিতে বলেন মন্ত্রী। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ফেডারেশনের পক্ষ থেকে মন্ত্রীকে দুই দফা প্রস্তাব দেওয়া হয়।

সভা সূত্র জানায়, প্রথম প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সচিবদের মধ্য থেকে যে হারে সিনিয়র সচিব করা হয়েছে অধ্যাপকদের মধ্য থেকেও একই হারে সিনিয়র অধ্যাপক করতে হবে। উভয়ের মর্যাদা-সুবিধা সমান করতে হবে।

দ্বিতীয় প্রস্তাবে বলা হয়েছে, অন্যান্য শিক্ষকের ক্ষেত্রে সপ্তম জাতীয় বেতন স্কেলের মতো সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বহাল রাখা সম্ভব না হলে অন্য কোনো উপায়ে একই মর্যাদা ও সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। জানা যায়, বর্তমানে সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা রয়েছেন ১০৮ জন। এর মধ্যে ১০ জনকে সিনিয়র সচিব করা হয়েছে। সেই হিসাবে সচিবদের মধ্যে ১০.৮ শতাংশ কর্মকর্তা সিনিয়র সচিবের মর্যাদা পাচ্ছেন। আর বর্তমানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮২৩ জন অধ্যাপক রয়েছেন। শিক্ষক নেতাদের দাবি অনুযায়ী, তাঁদের মধ্য থেকেও একই হারে সিনিয়র অধ্যাপক করতে হবে। সে ক্ষেত্রে ৭৬ জন অধ্যাপককে সিনিয়র সচিবের মর্যাদা দিতে হবে। শিক্ষকরা এত দিন ২৫ শতাংশ অধ্যাপকের মর্যাদা সিনিয়র সচিবের সমান করার কথা বলছিলেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ৬ ডিসেম্বর অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে শিক্ষকরা তিনটি দাবি তুলে ধরেছিলেন। সেগুলো হলো—অষ্টম বেতন স্কেলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সপ্তম বেতন কাঠামোর মতো সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বহাল রাখতে হবে এবং কোনো সুযোগ-সুবিধা কমানো যাবে না। জ্যেষ্ঠ সচিবদের জন্য সৃষ্টি করা বিশেষ গ্রেডে সিলেকশন গ্রেডপ্রাপ্ত অধ্যাপকদের একাংশকে উন্নীত করার সুযোগ রাখতে হবে, যাতে শিক্ষকরাও সর্বোচ্চ মর্যাদা পেতে পারেন। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষকদের শুরুর বেতন কমপক্ষে অষ্টম গ্রেড থেকে শুরু করতে হবে। অর্থমন্ত্রীও তাঁদের দাবি পূরণে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে অষ্টম বেতন কাঠামোর গেজেটে প্রথম দুটি প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন ঘটেনি। মূলত এখন আবার সেই দাবি দুটিই পূরণ করতে বলেছেন শিক্ষকরা। তবে এ ক্ষেত্রে শিক্ষকরা অনেকটা ছাড় দিয়েছেন। নতুন দাবিতে সিনিয়র অধ্যাপকের সংখ্যা কমানো হয়েছে। আর সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেলের ব্যাপারেও কিছুটা নমনীয় হয়েছেন তাঁরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা গতকাল বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে দেওয়া অর্থ মন্ত্রণালয়ের চিঠিতেও কিন্তু সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল না থাকলে অন্য উপায়ে শিক্ষকদের গ্রেড-১ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। শিক্ষকদেরও যদি অন্য উপায়ে গ্রেড-১-এ যেতে আপত্তি না থাকে তাহলে তো কোনো বাধাই রইল না। এখন শিক্ষকরা বলছেন, ইউজিসির এটা কার্যকরের ক্ষমতা নেই। না থাকলে সেই ক্ষমতা দেওয়া যেতে পারে। এতে কিন্তু সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেলের সমস্যা মিটে যায়। এরপর থাকে সিনিয়র সচিবদের সমান মর্যাদা। এটা সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ব্যাপার। তবে এটা ইতিবাচক, শিক্ষকরা আগে যে শতাংশ শিক্ষককে সিনিয়র সচিবদের সমান মর্যাদায় দেখতে চেয়েছিলেন সেখান থেকে তাঁরা সরে এসেছেন।’

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সহসভাপতি ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক খবির উদ্দিন গতকাল বলেন, ‘আমাদের দরকার মর্যাদা। কিভাবে দেবে সেটা সরকারের ব্যাপার। সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল না থাকলেও অন্য উপায়ে সেই সুবিধা দিতে হবে। নাম পরিবর্তন হতেই পারে। এ ক্ষেত্রে কারো আপত্তি থাকার কথা নয়।’ অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোতে পদমর্যাদা অবনমন ও বেতনবৈষম্য নিরসনের দাবিতে গত সোমবার থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করছেন ৩৭ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এর আগে একই দাবিতে ৯ মাস ধরে তাঁরা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন। শিক্ষকরা মূলত চার দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন। সেগুলো হলো—অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য সপ্তম জাতীয় বেতন স্কেলের মতো সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বহালসহ অন্য সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত রাখতে হবে; নতুন বেতন স্কেলে সিনিয়র সচিবের যে স্থান রাখা হয়েছে, সেই স্থানে গ্রেড-১ প্রাপ্ত অধ্যাপকদের মধ্য থেকে একটি অংশকে শতকরা হারে উন্নীত করার বিধান রাখতে হবে; সরকারি কর্মকর্তাদের মতো গাড়ি ও অন্যান্য সুবিধা শিক্ষকদের ক্ষেত্রেও নিশ্চিত করতে হবে এবং সরকার ও বিদেশি দাতা সংস্থাগুলোর প্রদত্ত উচ্চশিক্ষা বৃত্তি তরুণ শিক্ষকদের জন্য নিশ্চিত করতে হব

স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.012347936630249