গত ১৪ সেপ্টেম্বর যশোরে প্রেস ক্লাবের সামনে ননএমপিও শিক্ষকগণ মানববন্ধন করতে গিয়ে একজন শিক্ষক শিক্ষামন্ত্রীর পা জাপটে ধরে সমগ্র শিক্ষক জাতিকে মাটিতে নামিয়ে ফেলেছেন। যদি এতটুকুন বোঝার মত ম্যাচ্যুরিটি না থাকে তবে শিক্ষকতা পেশায় আসা উচিত নয়। কী বলবো তাঁদেরতো দোষ নেই।
সরকার তাঁর নাগরিকদের শিক্ষার দায়িত্ব নিচ্ছেন না। শিক্ষা বিভাগের প্রবেশদ্বার উম্মুক্ত। ফলে যে কেউ কোনও রকম বাধা ছাড়াই শিক্ষকতা নামক একটি মহান পেশায় ঢুকে পড়ছে। যদিও অধুনা এনটিআরসিএ পরীক্ষা চালু হওয়ায় যে কেউ এ পেশায় ঢুকে পড়ার ক্ষেত্রে একটু বাধা সরকার সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু এরপরও তা যথেষ্ট নয়। আমরা যারা নিয়োগ প্রক্রিয়ার সাথে মাঠ পর্যায়ে জড়িত তারা দেখছি কারা শিক্ষকতায় ঢুকছেন। আমরা যদি কোন সুনির্দিষ্ট আউটপুট লাভের আশায় কাউকে দায়িত্ব অর্পণ করি তবে তার নিয়োগের প্রশ্নে হতে হবে আপসহীন।
আমি তো মনে করি প্রথম সারির মেধাকেই শিক্ষকতায় আকৃষ্ট করা উচিত। কারণ শিক্ষকরাই জাতি গঠন করে- এটিই চরম সত্য। আর শিক্ষক যেমন শিক্ষার্থী তেমন এটাই সরল সমীকরণ। বিনিয়োগ অনুপাতেই মুনাফা হবে।শিক্ষা ক্ষেত্রে বিনিয়োগ শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ এই সহজ কথাটা আমাদের সরকার মেনে নিতে পারছে না- খুবই পরিতাপের বিষয় এটি।টেকসই উন্নয়নের জন্য আগে চাই শিক্ষার উন্নয়ন।আর এই মহান কাজটি সম্পাদন করার জন্য চাই একটি দক্ষ ও সুবিশাল বাহিনী। অর্থাৎ একটি দক্ষ শিক্ষা প্রশাসন ও শিক্ষক সমাজ দরকার।
কিন্তু দু:খের বিষয় বাংলাদেশে অদ্যাবধি তা হয়ে ওঠেনি।বিশেষ করে মাধ্যমিক স্তরে এর অবস্থা ভয়ংকর। শিক্ষক ও শিক্ষা প্রশাসন দু’য়ের অবস্থাই সন্তোষজনক নয়। শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি সরকার আমলে নিলেই কেবল শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতি সম্ভব। প্রয়োজন কেবল একটি সাহসী পদক্ষেপ ও সিদ্ধান্তের।
মানছি আমাদের মাঝে কিছু আবর্জনা (মাফ করবেন)আছে যেমন ছিল রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যলয়ের ক্ষেত্রে । তবুও বলছি কাজটি শুরু করতে হবে ভবিষ্যৎ শক্তিশালী বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বার্থে। অর্থাৎ শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণেরর বিকল্প নেই। তবেই বর্তমান ভংগুর শিক্ষাব্যবস্থার যতি টানা যাবে এবং শিক্ষা সঠিক গতি পাবে ও গন্তব্যস্থল খুঁজে পাবে। এটি যত তাড়াতাড়ি করা যাবে জাতি তত উপকৃত হবে।
উদাহরণ হিসেবে বলছি, বৃটেনের দুই বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় অক্সফোর্ড ও ক্যামব্রিজ মানের বিশ্ব র্যাংকিংয়ে ক্রমাগত পিছিয়ে পড়ছিলো। আর প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান অধিকার করছিলো আমেরিকার দুই বিশ্ববিদ্যালয়। এরপর অক্সফোর্ড ও ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তারা বছরের পর বছর ধারাবাহিকভাবে আত্মসমালোচনায় নিয়োজিত থাকেন। ফল হলো এই যে, গত সপ্তাহে প্রকাশিত বিশ্ব র্যাংকিংয়ে এই দুই বিশ্ববিদ্যালয় যথাক্রমে এক ও দুই নম্বর স্থান ফিরে পেয়েছে।
আসুন আজ আমরা শিক্ষকরা আত্মসমালোচনা শুরু করি। একদিন কলঙ্ক মুছে যাবে।
এম. এ. বাতেন ফারুকী: প্রধান শিক্ষক, সৈয়দ হাবিবুল হক উচ্চ বিদ্যালয়, কিশোরগঞ্জ।
[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন]