দক্ষিণ চট্টগ্রামের একমাত্র সমন্বিত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষা কার্যক্রম চলছে খুঁড়িয়ে। প্রতিষ্ঠানের িশক্ষকের পদ রয়েছে দুটি। এ দুটি পদই এখন খালি। ফলে বিপাকে পড়েছে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা। তবে বেশি সমস্যায় পড়ছে এবারের এসএসসির পরীক্ষার্থীরা।
সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালিত এ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চলে লোহাগাড়া উপজেলার শাহপীর পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। এতে প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব ভবন রয়েছে। সেখানে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা থাকা-খাওয়াসহ পড়াশোনার সুযোগ পায়। আসন রয়েছে ১০টি। বর্তমানে শিক্ষার্থী রয়েছে নয়জন। এর মধ্যে এসএসসি পরীক্ষার্থী তিনজন। বাকিরা ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণিতে লেখাপড়া করে। এসব শিক্ষার্থীদের সব খরচ বহন করে সরকার।
সম্প্রতি ওই প্রতিষ্ঠানে গেলে কথা হয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। এসএসসি পরীক্ষার্থী ইমরানুল হক ও রনেল চাকমা বলে, ‘শিক্ষক না থাকায় লেখাপড়া ব্যাহত হয়েছে। আমাদের পড়া বিশেষায়িত। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা বুঝতে পারেন না। এখন সামনে এসএসসি পরীক্ষা। তাই নিজে নিজেই পড়াশোনা করছি।’
সমাজসেবা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এখানে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় ২০০০ সালের মার্চ মাসে। এতে আসন খালি থাকা সাপেক্ষে দেশের যেকোনো স্থানের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা পড়ার সুযোগ পায়। বর্তমানে লোহাগাড়া, সাতকানিয়া, চকরিয়া, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, নরসিংদী ও হাটহাজারীর নয়জন শিক্ষার্থী রয়েছে। শুরু থেকে প্রতিষ্ঠানের দুটি পদেই শিক্ষক ছিল। ২০০৭ সালে আবাসিক শিক্ষক (হাউস পেরেন্টস) সত্যজিৎ মজুমদার বদলি হয়ে যান। এরপর ২০১৬ সালে মার্চে রিসোর্স শিক্ষক আরিফুল হাসান চাকরি ছেড়ে দিলে শিক্ষকের দুটি পদই শূন্য হয়ে যায়।
শিক্ষার্থীরা জানায়, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের উপযোগী রাইটিং ফ্রেম, ব্রেইল টাইপ মেশিন, পার্কিন্স মেশিন, এবাকাস ও টেপরেকর্ডার–জাতীয় শিক্ষা উপকরণ অপ্রতুল। কিছু থাকলেও অধিকাংশ নষ্ট। এ ছাড়া খেলাধুলার কোনো সামগ্রী নেই। তবে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর চাওয়া—একটি কম্পিউটার।
শিক্ষার্থী রনেল চাকমার বাবা গনমিত্র চাকমা বলেন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষা দেওয়া হলে ভবিষ্যতে চাকরি পেতে সহজ হবে। এ ছাড়া প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে চলাচলের সুবিধার্থে সাদা ছড়ি দেওয়ারও দাবি জানান তিনি।
জানতে চাইলে এ কার্যক্রমের দায়িত্বপ্রাপ্ত বোয়ালখালী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম বলেন, সরকারি বরাদ্দের টাকার মধ্যে থাকা-খাওয়া, শিক্ষা, চিকিৎসা ও অন্যান্য ব্যয় বহন করতে হয়। শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করবেন বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম জেলার সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক বন্দনা দাশ বলেন, অধিদপ্তরে লোকবল নিয়োগ পেলেই এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া যাবে। পাশাপাশি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য কম্পিউটার ও সাদা ছড়ি দেওয়ার দ্রুত ব্যবস্থা করা হবে।