শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ছয় অতিরিক্ত সচিব: ১১ বছরেও বদলির কোন লক্ষণ নেই - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ছয় অতিরিক্ত সচিব: ১১ বছরেও বদলির কোন লক্ষণ নেই

রাকিব ‍উদ্দিন |

দু’দফা পদোন্নতি পেয়েও বদলি না হওয়া ছয়জন অতিরিক্ত সচিবসহ এবার শিক্ষা প্রশাসনের আরও শতাধিক কর্মকর্তাকে সরানোর উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পাঁচ থেকে ১১ বছর একই স্টেশনে কর্মরত থাকায় শিক্ষা প্রশাসনে ছয় অতিরিক্ত সচিবের অপ্রতিরোধ্য প্রভাব সৃষ্টি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। অনেক ক্ষেত্রে খোদ মন্ত্রী ও সচিবের সিদ্ধান্তও বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। এজন্য দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা বিরাজ করছে বলে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ ও পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন ব্যক্তি সংবাদকে বলেন, ‘সম্প্রতি প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে সরকারের ব্যাপক সমালোচনা হলেও শিক্ষামন্ত্রী ও সচিব ছাড়া কোন কর্মকর্তাই মন্ত্রণালয়ের পক্ষে কোন ব্যাখ্যা বা মতামত ব্যক্ত করেননি। তারা বিদেশ ভ্রমণ, সভা-সেমিনার ও কর্মশালায় ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন। সমালোচনা এড়িয়ে চলছেন। তারা শিক্ষা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে আত্মীয়স্বজনদের পদায়ন করেছেন, যাদের সরানো যাচ্ছে না। কিন্তু দায়িত্বশীল পদে থেকে তারা এভাবে মুখ বন্ধ রাখতে পারেন না। এজন্য শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের পাশাপাশি দীর্ঘদিন থাকা অতিরিক্ত সচিবদেরও সরানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।’

এদিকে কয়েকটি তদন্ত সংস্থার প্রতিবেদনের আলোকে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও দুর্নীতির অভিযোগে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মাউশি অধিদফতরের ৮৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ১৩ জন জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। চলতি সপ্তাহে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আরও কয়েকজন কর্মকর্তাকে বদলি করার উদ্যোগ নিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর। এসব কারণে সারাদেশের শিক্ষা প্রশাসনেই বদলির আতঙ্ক বিরাজ করছে।

এ ব্যাপারে মাউশি অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘বদলি চলমান প্রক্রিয়া। এটি চলতে থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় যেভাবে চেয়েছে সেভাবেই অ্যাকশন হবে। এটা শুধু সময়ের ব্যাপার।’

আমলাদের মধ্যে যারা বদলি হচ্ছেন

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, টানা ১১ বছর থেকে ৭/৮ বছর ধরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে কর্মরত আছেন কমপক্ষে ছয়জন অতিরিক্ত সচিব। তারা হলেন- এসএম জাকির হোসেন ভূইয়া, অশোক কুমার বিশ্বাস, চৌধুরী মুফাদ আহমেদ, আমিনুল ইসলাম , ড. অরুনা বিশ্বাস, ড. মোল্লা জালাল উদ্দিন। তাদের মধ্যে অরুনা বিশ্বাসসহ দু’তিনজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোন ধরনের অনিয়মের অভিযোগ নেই।

এ মুহূর্তে শিক্ষায় শৃঙ্খলা ফেরাতে করণীয় সর্ম্পকে জানতে চাইলে সরকার সমর্থক সবচেয়ে বৃহৎ শিক্ষক সংগঠন ‘জাতীয় শিক্ষক-কর্মচারী ফ্রন্ট’র অন্যতম সমন্বয়কারী মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রী নিজে শক্ত না হলে শিক্ষায় শৃঙ্খলা ফেরার সম্ভাবনা নেই। কারণ এত বেশি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে যে, আমরা শিক্ষা নিয়ে আর কোন সম্ভাবনা দেখছি না। সব স্তরেই দুর্নীতি, অনিয়ম চলছে। কোথাও ঘুষ ছাড়া কোন কাজ হয় না। প্রধানমন্ত্রী বারবার বলার পরও শিক্ষামন্ত্রী কোন ব্যবস্থা নিতে পারছেন না। শুধু শিক্ষকদের বদলি করে কিছু হবে না; দীর্ঘদিন একই মন্ত্রণালয়ে থাকা আমলাদেরও বদলি করতে হবে। তাদের তিন বছরের বেশি এক পদে রাখার দরকার কী?’

সাধারণত সরকারি কর্মকর্তাদের একই স্টেশন ও দফতরে তিন বছরের বেশি কর্মরত রাখার সুযোগ না থাকলেও বিপুলসংখ্যক শিক্ষা ক্যাডার সদস্য ৫ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত ঢাকায় কর্মরত আছেন। মন্ত্রণালয়ের এক শ্রেণীর কর্মকর্তাকে খুশি করে তারা বহাল তবিয়তে রয়েছেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, খুব শীঘ্রই অর্ধশত প্রভাবশালী কর্মকর্তাকে বদলি করা হচ্ছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে আরও কয়েকজন বদলি হতে পারে বলে মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তারা যাতে বদলির খড়কে না পড়ে সেদিকে লক্ষ্য রাখার নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ও সচিব।

সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই কর্মকর্তাকে দুর্নীতির দায়ে গ্রেফতার ও ধারাবাহিকভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ওঠার পর মন্ত্রণালয়, মাউশি ও শিক্ষা বোর্ডে বদলি আতঙ্ক শুরু হয়। এর ধারাবাহিকতায় গত ২২ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা প্রশাসনের ৩২ জন কর্মকর্তাকে (ঢাকায় কর্মরত বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার সদস্য) ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় বদলি করা হয়। সবার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ না থাকলেও তাদের অধিকাংশই দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীতে কর্মরত ছিলেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এবারের বদলি তালিকার শীর্ষে রয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) ও এর অধীনে বাস্তবায়ন হওয়া বিভিন্ন প্রকল্প, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি), জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম), শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতর (ডিআইএ)। এসব সংস্থার শতাধিক কর্মকর্তা পাঁচ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ বছর পর্যন্ত ঘুরেফিরে রাজধানীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে লোভনীয় পদে চাকরি করছেন। এদের মধ্যে বিএনপি-জামায়াতপন্থি ও সুবিধাবাদী কর্মকর্তাই বেশি, যাদের অনেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি, সরকারবিরোধী কর্মকা-ে লিপ্ত থাকাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবারের বদলির তালিকায় মাউশি’র কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন ট্রেনিং শাখার প্রভাবশালী সহকারী পরিচালক নিগার সুলতানা পারভিন ও সহকারী পরিচালক আনোয়ার উল আউয়াল। তাদের বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে গাফিলতি, ঘন ঘন বিদেশ ভ্রমণ, সহকর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও শিক্ষকদের হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। এই কর্মকর্তারা ৮/১০ বছর ধরে ঢাকায় কর্মরত আছেন। এই শাখার পরিচালক হিসেবে ড. আব্দুল মালেকের পদায়ন নিয়েও বিতর্ক শুরু হয়েছে।

তিনি সামরিক স্বৈরশাসক ও তথাকথিত ‘বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক দর্শন’র ওপর গবেষণা করে এমফিল ডিগ্রি লাভ করেন। এই কর্মকর্তাকে গত বছরের শেষের দিকে মাউশির পরিচালকের দায়িত্ব দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

বদলির তালিকায় অন্যদের মধ্যে রয়েছেন- মাউশির পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখার সবচেয়ে প্রভাবশালী গবেষণা কর্মকর্তা কামরুন নাহার, মাউশির মনিটরিং ও ইভ্যলুয়েশন উইংয়ের উপ-পরিচালক ড. মাহবুবা ইসলাম। তালিকায় আরও আছেন আইসিটি- পেইজ টু প্রকল্পের পরিচালক অধ্যাপক জসিম উদ্দিন আহমেদ ও অটিস্টিক একাডেমিক নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক অধ্যাপক সালমা বেগম। তাদের বিরুদ্ধে প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যর্থতা ও অদক্ষতার অভিযোগ রয়েছে। এজন্য মন্ত্রণালয় তাদের ওপর নাখোশ। এই দুই পিডি’ও ঘুরে ফিরে প্রায় ১০ বছর ধরে ঢাকায় কর্মরত আছেন। সেসিপ প্রকল্পের এক উপ-পরিচালকও বদলির তালিকায় রয়েছে।

আর ডিআইএ’র তিনজন শিক্ষা পরিদর্শক প্রায় ছয় মাস আগে পদোন্নতি পান। এর মধ্যে আবুল কালাম আজাদ ও সিদ্দিকুর রহমান সহযোগী অধ্যাপক ও শ্যামা প্রসাদ বেপারী সহকারী অধ্যাপক হন। তারা অন্যত্র বদলি হতে চাইলেও মন্ত্রণালয় তাদের বদলি করছে না। মাউশিতে সংযুক্ত এই তিন কর্মকর্তা বেতনভাতা নিচ্ছেন ডিআইএ থেকে। তাদের কোন কাজকর্ম নেই, অথচ টিএ-ডিএ ভাতাও দেয়া হচ্ছে।

এনসিটিবি’র বিভিন্ন পদে ১০/১২ বছর ধরে কর্মরত আছেন শিক্ষা ক্যাডারের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে মোখলেছুর রহমান, সৈয়দ মাহফুজ আলী, আসমত মনোয়ারা, চৌধুরী মোফাজ্জেল হোসেন জুবেরী, নাসিমা ফেরদৌস, মোছাব্বির হোসেন ও মনির হোসেন অন্যতম।

এছাড়াও ঢাকার ইডেন মহিলা কলেজ, ঢাকা কলেজ, তিতুমীর কলেজ, বাঙলা কলেজ, বদরুনেছা কলেজসহ রাজধানীর সরকারি কলেজগুলোতে শতাধিক শিক্ষা ক্যাডার সদস্য ১০ থেকে ১৫ বছর ধরে কর্মরত আছেন। তারা সরকারের বিভিন্ন স্তরের প্রভাবশালী কর্মকর্তা ও ব্যক্তির আত্মীয়স্বজন হওয়ায় তাদের বদলি করতে পারছে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে এবার তাদেরও বদলির উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

সূত্র:  দৈনিক সংবাদ 

ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জবি ছাত্রীর আত্মহত্যা: শিক্ষক-শিক্ষার্থী বহিষ্কার - dainik shiksha ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জবি ছাত্রীর আত্মহত্যা: শিক্ষক-শিক্ষার্থী বহিষ্কার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জবি ছাত্রীর আত্মহত্যা: শিক্ষক-শিক্ষার্থী বহিষ্কার - dainik shiksha ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জবি ছাত্রীর আত্মহত্যা: শিক্ষক-শিক্ষার্থী বহিষ্কার অবন্তিকার আত্মহত্যা: সাতদিনের মধ্যে তদন্ত সম্পন্নের আশ্বাস জবি উপাচার্যের - dainik shiksha অবন্তিকার আত্মহত্যা: সাতদিনের মধ্যে তদন্ত সম্পন্নের আশ্বাস জবি উপাচার্যের হয়রানির প্রতিকার চেয়েও ফল পাননি অবন্তিকা, অভিযোগ মায়ের - dainik shiksha হয়রানির প্রতিকার চেয়েও ফল পাননি অবন্তিকা, অভিযোগ মায়ের নতুন শিক্ষাক্রম: শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট না পড়লে মিলছে না মূল্যায়ন - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রম: শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট না পড়লে মিলছে না মূল্যায়ন মূল্যায়ন বুঝলেও নৈপুণ্য অ্যাপে চ্যালেঞ্জের মুখে শিক্ষকরা - dainik shiksha মূল্যায়ন বুঝলেও নৈপুণ্য অ্যাপে চ্যালেঞ্জের মুখে শিক্ষকরা ‘পড়তে ও লিখতে’ শেখা প্রকল্প কেনো - dainik shiksha ‘পড়তে ও লিখতে’ শেখা প্রকল্প কেনো please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0042810440063477