রোববার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বই বিতরণ উৎসবে প্রধান অতিথি হয়ে আসা ৮৩ বছর বয়সী অর্থমন্ত্রীর এমন আক্ষেপের সঙ্গে অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার উত্তেজনা কিভাবে তাকে গ্রাস করেছিল তারও বর্ণনা দেন।
মুহিত বলেন, “আমিও কালকে রাত থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছি। কাল থেকে ভাবছি, এমন একটা আসরে যাব, যে আসরটা আমাদের সময়ে কখনও হতো না। এই রকম নতুন বই আমরা সবসময় পেতাম না। অনেক সময় পুরনো বই দিয়ে ক্লাস করতে হতো।
“আমি আজকে সকালে ভাবছিলাম, তোমাদের এখানে আসব, এই রকম অনুষ্ঠানটা আমি কখনো দেখিনি জীবনে, কী করব, কী বলব, কি কাপড় পড়ব সবই চিন্তা করেছি। তারপরে একটু চিন্তা করে দেখলাম, আজকে একটু ভাল কাপড়চোপড় পড়ে যাই।”
পাজামা-পাঞ্জাবিতেই বেশি অভ্যস্ত অর্থমন্ত্রী স্যুট-টাই পরে শিশুদের বর্ণিল আয়োজনে যোগ দেন, অনুষ্ঠানের শেষ পর্যন্ত শিশুদের নানা পরিবেশনা উপভোগ করেন।
বই কিভাবে উপভোগ করতে হবে বক্তব্যে সেটাও বাতলে দেন এক সময়ের ঝানু আমলা মুহিত।
“আজকের দিনে আমার খুব আনন্দ, তোমাদের হাতে এই বইগুলো যাবে, তোমরা অত্যন্ত খুশি হবে, নতুন বইয়ের গন্ধ শুঁকবে এবং সেখানে মোটা মোট হরফে নাম লিখে দিবে।
“এটা অত্যন্ত আনন্দের ব্যাপার এবং তারপর যথাসময়ে যখন তোমাদের পড়াশোনা শেষ হয়ে যাবে, তখন বইটিকে বিসর্জন করে দিবে। সেখানেও আনন্দ আছে। হ্যাঁ.. আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি, বইটা পড়েছি, জ্ঞান আহরণ করেছি, শিক্ষিত হয়েছি।”
শিশুদের উপদেশ দিয়ে মুহিত বলেন, “বই তুলে দেওয়ার উদ্দেশ্যটা হচ্ছে, আমাকে জ্ঞান আহরণ করতে হবে, শিক্ষাদীক্ষা করতে হবে, মানুষ হয়ে গড়ে উঠতে হবে। তাহলে আমি এই দেশের উন্নয়নে ভবিষ্যতে অবদান রাখতে পারব।”
শিক্ষার সুযোগ অনেক বাড়ার কারণে এখনকার শিশুরা অনেক সৌভাগ্যবান উল্লেখ করেন তিনি।
অর্থমন্ত্রী বলেন, “আমাদের যারা কর দেন, তাদের টাকা-পয়সা আমরা এখানে খরচ করি। আমাদের জনগণও কখনও শিক্ষার ব্যাপারে আপত্তি করে না। তারা বেশ খুশিই হয়। কারণ এতে তাদেরই লাভ হয়। তাদের সন্তানেরা তাদের ভবিষ্যত গড়ে উঠে।
“এই যে ভবিষ্যতটা গড়ে উঠার দায়িত্বটা তোমরা এখন গ্রহণ করছ, আজকে নতুন বই নিয়ে, সেটার যে উদ্দেশ্য সেটা যদি সাফল্য লাভ করে তাহলে সেটা আজকের দিনে আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।”
উৎসবে আসা কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া হয়, হৈ-হুল্লোড়ে আর পতাকা উড়িয়ে তারা মাতিয়ে রাখে মাঠ। ছিল শিশুদের নাচ-গান আর সিসিমপুরের পরিবেশনা।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের শোনান প্রাথমিক শিক্ষার অগ্রগতিতে সরকারের নানা উদ্যোগের কথা। বিদ্যালয়ে শিক্ষকের ঘাটতি কিছুদিন পর থাকবে না বলে আশাও দেখান তিনি।
শিক্ষকদের জীবন-মান বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান গণশিক্ষামন্ত্রী।