পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ায় গতকাল রবিবার প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীর (পিইসি) গণিত পরীক্ষা চলাকালে ছয় পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে ছয়টি স্মার্টফোন উদ্ধার করা হয়েছে। পরীক্ষাকেন্দ্রে নিষিদ্ধ সত্ত্বেও মোবাইল ফোন রাখার দায়ে তাদের বহিষ্কার করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
বহিষ্কৃতদের সবাই তিনটি আনন্দ স্কুলের শিক্ষার্থী। এ ছাড়া একই জেলার নাজিরপুর উপজেলায় পরীক্ষার্থীদের নকল সরবরাহ করার অভিযোগে চার প্রধান শিক্ষককে আটক করে পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে কুমিল্লার দাউদকান্দিতে আগের দিন প্রশ্নপত্র ফাঁস করার পর গতকাল সেই প্রশ্নপত্র মিলে যাওয়ায় দুই শিক্ষককে ১৫ দিন করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
পিরোজপুর আঞ্চলিক প্রতিনিধি জানান, ভাণ্ডারিয়া উপজেলার ৬৩ নম্বর ধাওয়া রাজপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে মোবাইল ফোনসেটগুলো উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা হলো উপজেলার মধ্য রাজপাশা আনন্দ স্কুলের পরীক্ষার্থী মো. রাকিব, দক্ষিণ ধাওয়া আনন্দ স্কুলের পরীক্ষার্থী তুষার, কিশোর, হাদিস কাজী ও সুব্রত বল এবং পশারিবুনিয়া আনন্দ স্কুলের পরীক্ষার্থী রবিউল ইসলাম।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল গণিত পরীক্ষা চলাকালে ওই কেন্দ্রে মোবাইল ফোনসেট নিয়ে প্রবেশ করে ছয় শিক্ষার্থী। বিষয়টি জানতে পেরে পরীক্ষা শুরুর প্রায় ২০ মিনিট পর ওই কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপজেলা মাধ্যমিক একাডেমিক সুপারভাইজার মো. নজরুল ইসলাম পরীক্ষার্থীদের তল্লাশি করেন। এ সময় ওই ছয়জনের কাছে মোবাইল ফোনসেট পাওয়া যায়।
পিরোজপুর প্রতিনিধি জানান, গতকাল নাজিরপুর উপজেলার হোগলাবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নকল দেওয়ার সময় সেখানে ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্বে থাকা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইস্রাফিল নকলসহ চার প্রধান শিক্ষককে আটক করেন।
আটককৃতরা হলেন উপজেলার হোগলাবুনিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মুজিবর রহমান, তারাবুনিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশুতোষ ও তেঁতুলবাড়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাজল রানী মণ্ডল। অন্যজনের নাম জানা যায়নি।
দাউদকান্দি (কুমিল্লা) প্রতিনিধি জানান, দাউদকান্দি উপজেলায় গতকাল প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে কারাদণ্ডপ্রাপ্ত দুই শিক্ষক হলেন উপজেলা সদরের ঈদগাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোক্তার হোসেন (৪৫) ও এবিসি কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক নাজির হোসেন (৪০)। তাঁদের ‘প্রশ্ন ফাঁসের চেষ্টার ঘটনা’ প্রমাণিত হওয়ায় দাউদকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আল-আমিন দুজনকে ১৫ দিন করে কারাদণ্ড দিয়ে জেলহাজতে পাঠান।
জানা যায়, গত শনিবার রাত ১০টার দিকে এক অভিভাবক পিইসি গণিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র দেখতে পান তাঁর ছেলের কাছে। বিষয়টি তিনি তাত্ক্ষণিকভাবে ইউএনও মো. আল-আমিনকে জানালে তিনি ওই অভিভাবককে প্রশ্নের কপি নিয়ে বাসায় যেতে বলেন। পরে ওই অভিভাবক রাতেই প্রশ্নের কপি নিয়ে ইউএনওর বাসায় নিয়ে যান। প্রশ্নপত্রটি দেখে ইউএনও এর সঙ্গে জড়িত শিক্ষককে শনাক্ত করতে পুলিশকে নির্দেশ দেন। পুলিশ রাতেই অভিযান চালিয়ে ঈদগাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোক্তার হোসেনকে আটক করে। গতকাল পিইসির গণিত পরীক্ষা শুরু হলে সরকার সরবরাহকৃত প্রশ্নপত্রের সঙ্গে শিক্ষকের কপি মিলে যায়। প্রশাসনের ভাষ্য অনুযায়ী, উভয় প্রশ্নপত্রের ৯০ শতাংশ মিল থাকায় মোক্তার হোসেনকে ফের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।