সরকারি প্রাথমিকের চাইতে কিন্ডারগার্টেনের ফল ভালো - Dainikshiksha

সরকারি প্রাথমিকের চাইতে কিন্ডারগার্টেনের ফল ভালো

নিজস্ব প্রতিবেদক |

যোগ্য শিক্ষক এবং সবধরনের সুবিধা থাকার পরও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর চেয়ে কিন্ডারগার্টেনের ফল ভালো। পাসের হার ও জিপিএ-৫ উভয় দিক দিয়েই সরকারি স্কুলের চেয়ে এগিয়ে আছে কিন্ডারগার্টেন। গত শুক্রবার প্রাথমিকের ফল প্রকাশের পর এ চিত্রটির প্রমাণ মেলে।

এবার দেশের ১৯ হাজার ৬৭৩টি কিন্ডারগার্টেনের ৩ লাখ ২৭ হাজার ৩৩৫ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে পাস করে ৯৯ দশমিক ২৭ শতাংশ। অন্যদিকে সরকারি ৩৭ হাজার ২৭৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ১৪ লাখ ৭২ হাজার ৩৭৩ জন পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে পাস করে ৯৮ দশমিক ৭০ শতাংশ।এছাড়া পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীর হিসাবে জিপিএ-৫ এর সংখ্যাও কিন্ডারগার্টেনে বেশি।শুধু কিন্ডারগার্টেন নয়, ১৫ ক্যাটাগরির মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থান সপ্তম। সরকারি স্কুলের চেয়ে পাসের হার বেশি পিটিআই সংলগ্ন পরীক্ষণ স্কুলে। এই স্কুলে পাসের হার ৯৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ। এ ছাড়া সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে ৯৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ, বেসরকারি উচ্চবিদ্যালয় সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯৯ দশমিক ৩৩, মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯৯ দশমিক ২৭, ব্র্যাক পরিচালিত বিদ্যালয়ে ৯৮ দশমিক ৯৮। তবে এগিয়ে আছে প্রকল্প স্কুলের চেয়ে, এ স্কুলে পাসের হার ৯৮ দশমিক ৬৩। এছাড়া  অস্থায়ী ও অনুমতিপ্রাপ্ত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাসের হার ৯৭ দশমিক ৯৬, নতুন জাতীয়করণ হওয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯৭ দশমিক ৩৮, রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯৮ দশমিক ২১ শতাংশ, এনজিও পরিচালিত বিদ্যালয়ে ৯৭ দশমিক ৩৭, কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯৭ দশমিক ২৫, নন-রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯৬ দশমিক ৫৫ এবং শিশুকল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে।

নতুন সরকারি ২৫ হাজার ৫৫২ বিদ্যালয়েও পাসের হার তুলনামূলক কম। সরকারিকরণ প্রক্রিয়ায় জটিলতা, দীর্ঘ সময় বেতন না পাওয়ায় শিক্ষা কার্যক্রমে শিথিলতার কারণে এসব স্কুল পাসের হারে পিছিয়ে রয়েছে। এছাড়া এসব স্কুলের শিক্ষকদের  শিক্ষাগত যোগ্যতা ও মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

কেন ভালো করছে না সরকারি স্কুল, এর জবাব দিয়েছেন শিক্ষকরা। আরিফ নামে এক শিক্ষক বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিভিন্ন ধরনের সরকারি কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। আদমশুমারি, শিশু জরিপ, নির্বাচন, ভোটার তালিকা প্রণয়ন, বিস্কুট বিতরণ, উপবৃত্তির তালিকা প্রণয়ন, উপজেলা ও জেলার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগদান, উঠান বৈঠক, শোভাযাত্রা, থানা শিক্ষা অফিসের তথ্য পূরণ, উপকরণ মেলায় যোগদান, উপজেলা ও জেলা শিক্ষা অফিসে ছোটাছুটি ইত্যাদি হাজারো কাজ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের। প্রধান পরীক্ষকদের যেতে হয় অন্য উপজেলায়। ম্যানেজিং কমিটি, অভিভাবক কমিটি, বাধ্যতামূলক ওয়ার্ড কমিটি, বিদ্যালয় কল্যাণ কমিটি ইত্যাদি। কমিটির কাজকর্ম, রেজ্যুলেশন ঠিক রাখতে একাধিক শিক্ষককে ব্যস্ত থাকতে হয়। এই শিক্ষক প্রশ্ন তোলেন, এসব কাজ নিয়েই যদি ব্যস্ত থাকতে হয় তাহলে পাঠদান করবো কখন?

সরকারি স্কুল কেন পিছিয়ে এ বিষয়ে অনেকেই বলেছেন, দেশের  অনেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঠিকমতো ক্লাস হয় না। শিক্ষকরা ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত থাকেন। দেরিতে আসেন, আবার আগে চলে যান। যেসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের এই অবস্থা সেখানে শিক্ষার্থীরা ভালো ফল করবে কীভাবে। সেন্টার ফর এডুকেশন ইনিশিয়েটিভ এ্যান্ড রিচার্সের প্রেসিডেন্ট জসিম উদ্দিন বলেন, আমরা দেখেছি সরকারি স্কুলে মনিটরিং ব্যবস্থা দুর্বল। শিক্ষা কর্মকর্তারা শিক্ষকদের কর্মকাণ্ড মনিটরিং করেন না। শিক্ষকরা ঠিকমতো ক্লাস না নিলে বা শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো স্কুলে না এলে লেখাপড়ার ভালো হওয়ার প্রশ্নই আসে না। এছাড়া শিক্ষক সংকটতো রয়েছেই।

সরকারি স্কুলের এক শিক্ষক বলেন, যাদের বাড়ি স্কুল থেকে দূরে তারা স্কুলে আসতে দেরি করেন। আবার যাদের বাড়ি কাছে তারা স্কুল চলাকালীন নানা কাজে বাড়ি চলে যান, আবার ফেরেন। দুই ধরনের সমস্যা রয়েছে। শিক্ষা কর্মকর্তারা ঠিকমতো নজরদারি করলে এই সমস্যা কেটে যাবে বলে মনে করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই শিক্ষক। নজরুল আমিন নামে এক অভিভাবক বলেন, পঞ্চম শ্রেণিতে সমাপনী থাকবে কী থাকবে না এটা নিয়ে দোলাচলের সৃষ্টি হয়েছিল। এই সময়ে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী উভয়েই লেখাপড়ায় মনযোগী ছিলেন না। এটাও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পিছিয়ে পড়ার কারণ বলে মনে করেন এই অভিভাবক।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কেন পিছিয়ে এমন প্রশ্নের জবাবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রাপ্তি হয় না। বেসরকারি স্কুলগুলোয় শতভাগ পাস করলেও তাতে উদ্বেগের কিছু নেই। সরকারি স্কুলের সংখ্যা ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি। এসব স্কুলে শিক্ষকের ঘাটতি রয়েছে। তবে আমরা নানা উদ্যোগ নিয়েছি। তাতে ২০১৭ সালে এই সংকট থাকবে না।

নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট - dainik shiksha জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ - dainik shiksha আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0064568519592285