জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় ও এসএসসি ফরম পূরণকারী পরীক্ষার্থীদের সূত্রে জানা যায়, পৌরসভা ও উপজেলার ৪৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে বেশকিছু বিদ্যালয়ে এসএসসি ফরম পূরণে বোর্ডের নিয়ম বহির্ভূত ভাবে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশ অনুযায়ী এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে বিজ্ঞান শাখার জন্য ১৭৫০ টাকা, মানবিক ও বাণিজ্য শাখার জন্য ১৬৫০ টাকা নেয়ার নির্দেশ থাকলেও এ বিদ্যালয়গুলোতে তা মানা হচ্ছেনা। রশিদের মাধ্যমে ফরম পূরণের টাকা নেয়ার কথা থাকলেও অধিকাংশ বিদ্যালয়ই সে নির্দেশ মানছে না। প্রতি পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পুরণের জন্য আড়াই হাজার টাকা থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগও পাওয়া যায়। বিনা রশিদে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে এ অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে বলে জানা গেছে।
অধিক অভিযুক্ত বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ভাটারা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, রুদ্র বয়ড়া উচ্চ বিদ্যালয়, চাপারকোনা মহেশ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়, বয়ড়া ইসরাইল আহমেদ উচ্চ বিদ্যালয়, সরিষাবাড়ী আরডিএম মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, সরিষাবাড়ী রিয়াজ উদ্দিন তালুকদার উচ্চ বিদ্যালয়, পিংনা উচ্চ বিদ্যালয়, পিংনা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, পোগলদিঘা উচ্চ বিদ্যালয়, পোগলদিঘা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও মালিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত অর্থ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
ভাটারা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মানবিক শাখার এসএসসি পরীক্ষার্থী রকিবুল হাসান ও সোহাগ মিয়া জানায়, আমাদের কাছ থেকে ফরম পুরণের জন্য ৩ হাজার ৭০০ টাকা নিয়েছে। বাণিজ্য শাখার মোহাম্মদ আলী জানায়, আমি ৩ হাজার ৮০০ টাকা দিয়ে এসএসসি’র ফরম পূরণ করেছি। বাণিজ্য বিভাগের পরীক্ষার্থী ফরহাদ মিয়া জানায় আমার দুই বিষয়ে অকৃতকার্য হওয়ায় ৫ হাজার টাকা দিয়ে ফরম পূরণ করতে হয়েছে।
সরিষাবাড়ী রিয়াজ উদ্দিন তালুকদার উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম জানায়, সে ৩ হাজার ৩০০ টাকা দিয়ে ফরম পূরণ করেছে। সরিষাবাড়ী রিয়াজ উদ্দিন তালুকদার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অরুণ কুমার সাহা বলেন, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এসএসসি’র বিজ্ঞান শাখার পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৩ হাজার ৩০০, মানবিক ও বাণিজ্য শাখার কাছ থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে।
আরডিএম পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম জানান, আমার বিদ্যালয়ে আগামী জুন মাস পর্যন্ত বেতন ৯০০ টাকা, সেশন চার্জ ৪৫০ টাকা ও ১৮০০ টাকা বোর্ড ফিসহ ৩ হাজার ১৫০ টাকা নেয়া হয়েছে। তবে জেএসসি পরীক্ষার ঝামেলায় সময়ের অভাবে রশিদ দিতে পারি নাই।
ভাটারা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা ফি নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
অতিরিক্ত ফি আদায়ের ব্যাপারে ভাটারা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমার বিদ্যালয়ে ১০৬ জন ছাত্র-ছাত্রীর ফরম ফিলাপ করা হয়েছে। তাদের সবাইকে সাথে সাথে রশিদও দেয়া হয়েছে। আমার বিদ্যালয়ে বেতন, সেশনচার্জ, বিদ্যালয়ের সংস্কারসহ সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৭০০ টাকা নেয়া হয়েছে। তবে কেউ যদি যদি অতিরিক্ত ফি আদায়ের কথা বলে থাকে সেটা ডাহা মিথ্যা। যা করা হয়েছে কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই হয়েছে। কারো কাছ থেকে কোন অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয়নি। তবে যেসব শিক্ষার্থী টেষ্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি, তারা ফরম ফিলাপের জন্য অতিরিক্ত টাকা দিতে চেয়েছে কিন্তু আমি তা নিতে রাজি হইনি বলেই তারা মিথ্যা অপবাদ ছড়াচ্ছে বলে তিনি জানান।
ভাটারা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও ভাটারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন বলেন, পরীক্ষার্থীদের ফরম ফিলাপে অতিরিক্ত ফি না নেয়ার জন্য অধ্যক্ষকে বলা হয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম ইলাহী আকন্দ বলেন, এসএসসি’র ফরম ফিলাপে রশিদ ছাড়া অতিরিক্ত টাকা নিয়ে থাকলে বিদ্যালয়গুলো ভুল করেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইয়েদ এজেড মোরশেদ আলী বলেন, এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেয়া হলে বিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।