স্কুল-কলেজ জাতীয়করণ প্রসঙ্গে - দৈনিকশিক্ষা

স্কুল-কলেজ জাতীয়করণ প্রসঙ্গে

মো. শরীফুর রহমান আদিল |

সরকার দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি করে স্কুল ও একটি করে কলেজ জাতীয়করণের পদক্ষেপ নিয়েছে। এতে করে স্বল্প খরচে মানসম্মত শিক্ষা, দেশের প্রান্তিক জনগণের কাছে সরকারি সেবা পৌঁছে দেওয়া ও শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধের পাশাপাশি বাল্যবিবাহের হার কমবে। তবে জাতীয়করণের তালিকায় এমনও অনেক কলেজ রয়েছে, যেগুলোর ক্ষেত্রে সরকার প্রণীত চার নীতিমালা মোটেই প্রতিফলিত হয়নি।

এ কারণে গত কয়েক সপ্তাহ আগে জাতীয়করণের তালিকায় ১৯৯টি কলেজের নাম দেখে তালিকাভুক্ত না-হওয়া অনেক কলেজ প্রতিদিনই তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছে মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদান কিংবা হরতালের মতো কর্মসূচি দিয়ে। আর এসব কর্মসূচি পালন করে কিছু কিছু কলেজ সফল হয়েছে অর্থাত্ তাদের নাম জাতীয়করণের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আবার কোনো কোনো কলেজকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে তালিকাভুক্তির।

এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণের ঘোষণা দেওয়াই অধিকতর যৌক্তিক বলে শিক্ষাবিদরা মনে করেন। এর আগে যেমন ২৬ হাজার রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে করা হয়েছিল। অন্যদিকে জাতীয়করণকৃত কলেজের শিক্ষকদের নিয়ে বিতর্কের অবসানে আত্তীকরণ বিধিমালা ২০০০ সংশোধন করা উচিত।

কেননা কাউকে হঠাত্ করে ৪ নম্বর গ্রেড থেকে ৯ নম্বর গ্রেডে নামিয়ে দেওয়া অমানবিক। একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কেউ সরকারি আবার কেউ বেসরকারি কিংবা আগের মতো এমপিওভুক্ত থাকবেন-এটা হয় না। অনেক কলেজে এমন অনেক শিক্ষক রয়েছেন যাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতা শিক্ষা ক্যাডারের শিক্ষকদের ন্যূনতম যোগ্যতারও কম। সেক্ষেত্রে তাঁদের বিষয়ে কী হবে? তাঁরাও কি শিক্ষা ক্যাডারে যুক্ত হবেন নাকি তাঁদের অন্য কোনো এমপিওভুক্ত কলেজে সরকারের বিশেষ নির্দেশে স্থানান্তর করা হবে-এ বিষয়টি স্পষ্ট করা উচিত।

শিক্ষাবিদদের মতে, কলেজের বয়স, আয়তনে, সম্পত্তি, ছাত্র সংখ্যা, শিক্ষক সংখ্যা, উপকৃত জনগোষ্ঠী, নির্ণীত কলেজটি থেকে অন্য সরকারি কলেজের দূরত্ব নারী শিক্ষার্থীর অনুপাত প্রভৃতির দিকে লক্ষ রেখে নীতিমালা প্রণয়ন করা উচিত। আর শিক্ষকের ক্ষেত্রে কতজন এমপিওভুক্ত আর কতজন এমপিওভুক্ত নয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।

অর্থাত্ যদি ডিগ্রি শাখা এমপিওভুক্ত হয় এবং প্রায় সকল শিক্ষক এমপিওভুক্ত হয় তবে এসব প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করলে সরকারের রাজস্ব থেকে বেশি টাকা খরচ হবে না। কেননা এমপিওভুক্ত এসব শিক্ষক এমনিতেই সরকারি কোষাগার থেকে বেতনভাতা পেয়ে থাকেন। ডিগ্রি শাখা এমপিওভুক্ত না হওয়া কলেজ জাতীয়করণ হলে সরকারের রাজস্ব বেশি খরচ হবে।

যেহেতু সরকার প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কলেজ জাতীয়করণের উদ্যোগ নিয়েছে সেহেতু জেলা সদর উপজেলাও এর আওতাভুক্ত হবে, তবে যেহেতু জেলা শহরে দুই-চারটি সরকারি কলেজ রয়েছে সেহেতু জেলা থেকে অত্যধিক দূরত্বে, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং বিশাল দরিদ্র জনগোষ্ঠীর চাহিদার দিকে লক্ষ রেখে মূল শহর থেকে বাইরে অবস্থিত এমন কলেজকে জাতীয়করণের জন্য বিবেচনা করা উচিত।

তবে গ্রামে যে কলেজ নেই তা কিন্তু নয় বরং গ্রামেও বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে ব্যক্তিগত উদ্যোগে। তার কোনো কোনোটি কয়েক বছর পর বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আর কোনো কোনোটি বেতনভাতার অভাবে শিক্ষার মান খারাপের দিকে যাচ্ছে। আবার এমপিওভুক্ত কলেজগুলোতে গভর্নিং বডির দৌরাত্ম্য আর স্থানীয় রাজনীতির কারণে খুব একটা সুবিধা করতে পারছে না। সুতরাং গ্রামাঞ্চলে সরকারি কলেজ প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন।

 মো. শরীফুর রহমান আদিল, ফেনী সাউথ-ইষ্ট ডিগ্রি কলেজ

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0063540935516357