ভারতীয় যোগগুরুদের তালিকা তৈরি করলে একেবারে প্রথম সারিতেই থাকবে তার নাম। ‘হট যোগ’ ব্র্যান্ড নামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তো বটেই, পুরো দুনিয়া এক নামে চেনে যোগগুরু বিক্রম চৌধুরীকে। ভারতীয় বংশোদ্ভূত বিক্রম ১৯৭১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যোগ প্রশিক্ষণ শুরু করেন।
আগেই যোগগুরু বিক্রমের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন তার এক ভারতীয় ছাত্রী মনদীপ কৌর সাঁধু। মার্কিন আদালতে জানিয়েছিলেন তার বক্তব্য। এবার সংবাদ মাধ্যমে বিশদে জানিয়েছেন তার অভিজ্ঞতা। ফাঁস করেছেন যোগগুরুর কুকীর্তি।
৩০ বছর বয়সী মনদীপের অভিযোগ‚ বিক্রম পুরোমাত্রায় বিকৃতকামী এবং মনদীপ নিজেও বিক্রমের হাতে যৌন হেনস্থার শিকার। এমনকী, এক রাতে তাকে ঘরে ডেকে নিজের গোপনাঙ্গে ‘ম্যাসাজ’ করার জন্যেও বলেছিলেন বিক্রম।
সাত বছর আগের সেই অভিজ্ঞতার কথা সম্প্রতি জানিয়েছেন মুম্বাইয়ের মনদীপ। মুম্বাইয়ে তিন বছর ধরে একটি যোগপ্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালাচ্ছেন তিনি।
মনদীপ জানান, স্বামীর মৃত্যুর পর ২০০৯ সালে তিনি ১০ লাখ টাকা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রমের যোগ প্রশিক্ষণকেন্দ্রে ভর্তি হন। তার কথায়, ‘একাকীত্ব কাটাতে ভাইয়ের পরামর্শে লাস ভেগাসে বিক্রমের সঙ্গে দেখা করি। প্রথমদিনই বিক্রম জানতে চান, আমি বডি ম্যাসাজ জানি কি না। তখন হরিয়ানায় ম্যাসাজের প্রশিক্ষণ নেওয়ার কথা জানিয়েছিলাম।’
মনদীপ বলেন, ‘এরপর আমাকে নিজের অফিসে ডেকে পাঠান বিক্রম। আমাকে দিয়ে বডি ম্যাসাজ করান। তখন বিক্রম অন্তর্বাস পরেছিলেন।’ তিনি জানান, বিক্রমের সংস্থায় সাধারণ যোগ প্রশিক্ষণের সঙ্গেই শেখানো হতো ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতায় বিশেষ ‘হট যোগ’। ওই ক্লাসে খোলামেলা পোশাক পরাই ছিল রীতি। বিক্রমের পরনে থাকত অন্তর্বাস।
মনদীপ তো বটেই, একাধিক শিক্ষার্থীর অভিযোগ, ‘হট যোগে’র বিশেষ ক্লাসেই বিক্রমের যৌন হেনস্থার শিকার হতেন তারা। গভীর রাত পর্যন্ত জেগে সিনেমা দেখতে বাধ্য করা হতো। তখন পালা করে ছাত্রীদের ডাক পড়ত বিক্রমের ঘরে।
মনদীপ বলেন, ’একদিন রাত ২টার দিকে আমাকেও বিক্রমের ঘরে ডাকা হয়। আমাকে বিক্রম তার গোপনাঙ্গে ম্যাসাজ করতে বলেন। আমি কোনোমতে ঘর থেকে বেরিয়ে আসি।’
এরপর প্রশিক্ষণ ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন মনদীপ। বিক্রমের ভাইঝি মানালিকে জানান, তিনি ওই কোর্স আর করতে চান না। ফিরিয়ে দিতে বলেন ফি বাবদ দেওয়া ১০ লাখ টাকা। উত্তরে মানালি তাকে বোঝান‚ ওটা একটা ভুল বোঝাবুঝি মাত্র।
এরপর মনদীপ কোর্স বন্ধ করেননি। তবে দূরত্ব বাড়াতে থাকেন বিক্রমের সঙ্গে। এ অবস্থায় বিক্রমের স্ত্রী রজশ্রী এবং ভাইঝি মানালিও মনদীপকে ডাকতেন ম্যাসাজের জন্য। এতে রাজি না হওয়ায় এক সময় মনদীপের নামে ‘সমকামী’ তকমাও এঁটে দেওয়া হয়।
ভয়ে সে সময় মুখ না খুললেও সম্প্রতি নিজের অভিজ্ঞতার কথা বিক্রমের বিরুদ্ধে অন্য একজনের করা মামলার বক্তব্যে জানান মনদীপ। তার মতো ৭০ জন নারীর বক্তব্যের ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত বিক্রমকে ৯ লাখ ২৪ হাজার ৫০০ ডলার জরিমানা করেছে। ২০১০ সালে মুম্বাই চলে আসেন মনদীপ।
বিক্রম যোগা প্র্যাকটিসের প্রতিষ্ঠাতা ৬৯ বছরের যোগগুরু বিক্রম চৌধুরী এখন একটি সেশনের জন্যই প্রায় ৭ লাখ টাকা নেন। সারা বিশ্বে তার প্রায় ৭০০টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও লাখ লাখ ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। সূত্র: এবিপি আনন্দ, এবেলা।