৬ মামলায় পরোয়ানা নিয়েও বহাল জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ইব্রাহীম - দৈনিকশিক্ষা

৬ মামলায় পরোয়ানা নিয়েও বহাল জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ইব্রাহীম

নাটোর প্রতিনিধি |

দুর্নীতির ছয় ছয়টি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে। স্থানীয়-জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ফেরারি ঘোষণা করা হয়েছে। তাঁকে ধরতে পুলিশ বাড়িতেও গেছে। অথচ তিনি জেলার শীর্ষ শিক্ষা কর্মকর্তা পদে বহাল তবিয়তে আছেন। মামলা, পরোয়ানা, ফেরারি ঘোষণা বা বাড়িতে পুলিশ গমনের খবর তিনি জানেনই না!

এই কর্মকর্তার নাম মো. ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ। তিনি বর্তমানে জয়পুরহাট জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। কিন্তু মামলাগুলো চলছে নাটোরের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে। নাটোরের জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা থাকাকালেই তাঁর বিরুদ্ধে মামলাগুলো হয়েছিল। ইব্রাহীম খলিলুল্লাহর অনুপস্থিতিতেই গতকাল বৃহস্পতিবার তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।

নাটোর জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) সিরাজুল ইসলাম  বলেন, ‘ছয়টি মামলায় জজ আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর কীভাবে একজন সরকারি কর্মকর্তা এত বড় পদে কর্মরত আছেন, তা আমার বোধগম্য নয়। তিনি আদালতকে অবজ্ঞা করে পুরো শিক্ষা বিভাগের ভাবমূর্তিই নষ্ট করছেন।’

আদালতের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নাটোরের লালপুর উপজেলার লালপুর থানা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে জালিয়াতি করে ছয়জন শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় ২০১৪ সালের ৩১ জানুয়ারি লালপুর থানায় সাতটি মামলা হয়। এর ছয়টিতেই এক নম্বর আসামি নাটোরের তৎকালীন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ। মামলাগুলো করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয় রাজশাহীর সহকারী পরিচালক ওয়াজেদ আলী গাজী। অনুসন্ধান শেষে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ইব্রাহীম খলিলুল্লাহসহ সাতজনের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলায় অভিযোগপত্র দাখিলের অনুমতি দেয় দুদক। ২২ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের সহকারী পরিচালক শহীদুল আলম সরকার।

নাটোর জেলা ও দায়রা জজ মো. রেজাউল করিম গত ২৫ মে অভিযোগপত্রটি আমলে নেন এবং ইব্রাহীম খলিলুল্লাহসহ আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। ছয়টি মামলার ছয়টি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইতিমধ্যে ওই শিক্ষা কর্মকর্তার বাড়ির ঠিকানা সিরাজগঞ্জ সদর থানায় চলে গেছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সিরাজগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হেলাল উদ্দিন গতকাল দুপুরে বলেন, ‘ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ সিরাজগঞ্জ সদরের রায়পুর গ্রামের। আমি আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পাওয়ার পর খলিলুল্লাহকে গ্রেপ্তারের জন্য তাঁর বাড়িতে গিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি বাড়িতে থাকেন না। পরোয়ানার ব্যাপারটি আমি তাঁর বাড়ির লোকজনকে জানিয়ে এসেছি। এ ব্যাপারে আদালতের কাছে প্রতিবেদন পাঠানো হবে।’

আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মামলার পরবর্তী তারিখ ২৫ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বাস্তবায়নের বিষয়ে শুনানি হয়। অন্যরা এদিন আদালতে হাজির হয়ে জামিন নেন। কিন্তু প্রধান আসামি ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ হাজির হননি। ফলে শুনানি শেষে তাঁকে ফেরারি ঘোষণা করা হয়। বিষয়টি গত ২৭ জুলাই নাটোরের একটি স্থানীয় দৈনিক এবং ৩১ জুলাই ঢাকার একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে ইব্রাহীম খলিলুল্লাহকে ১০ দিনের মধ্যে আদালতে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দেন আদালত। তবু তিনি আদালতে হাজির হননি। সর্বশেষ গতকাল মামলার দিন ধার্য থাকলেও আদালতে আসেননি। ফলে দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তাঁর অনুপস্থিতিতেই অভিযোগ গঠন করেন। পরবর্তী তারিখে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হবে।

ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ মুঠোফোনে এই প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন, তিনি এখন জয়পুরহাট জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি করছেন। তবে এসব মামলার বিষয়ে কিছুই জানেন বলে না দাবি করেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে ছয়টি মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তাঁর স্থায়ী বাড়ির ঠিকানায় পাঠানো হয়েছে। এমনকি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি হয়েছে, এসব বিষয় জানালে তিনি বলেন, ‘আমি এসবের কিছুই জানি না।’

তবে নাটোর আদালতে দায়িত্বরত দুদকের আইনজীবী খলিলুর রহমান বলেন, মামলার বিষয়ে ওই শিক্ষা কর্মকর্তার না জানার কথা নয়। কারণ, মামলার অন্য আসামিরা ইতিমধ্যে আদালতে হাজির হয়ে জামিনে মুক্ত আছেন। তাঁদের সঙ্গে অবশ্যই ইব্রাহীম খলিলুল্লাহর যোগাযোগ হয়।

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003856897354126