অধ্যক্ষের দায়িত্বভার বুঝিয়ে না দেওয়ায় অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্বের জের ধরে শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন ভাতা বন্ধ হয়ে গেছে। উপাধ্যক্ষ, অধ্যক্ষকে দায়িত্বভার বুঝিয়ে না দেওয়ায় স্বাক্ষরের অভাবে ব্যাংকে সরকারি অংশের বেতন ভাতার বিল জমা দিতে পারেনি কলেজ কর্তৃপক্ষ। ফলে কলেজের ৭২ জন শিক্ষক কর্মচারী ব্যাংক থেকে বেতন ভাতা উত্তোলন করতে না পেরে মানবেতর জীবন যাপন করছেন বলে অভিযোগ করেছেন।
দ্বন্দ্বের কারণে কলেজে অচলাবস্থা বিরাজ করায় শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। টাঙ্গাইলের মির্জাপুর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে এ ঘটনাটি ঘটেছে।
উপাধ্যক্ষ দায়িত্বভার বুঝিয়ে না দেওয়ায় অধ্যক্ষ মো. সালাউদ্দিন আহমেদ বাবর রোববার (২১ অক্টোবর) উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আব্দুল খালেকের বরাবর দায়িত্বভার বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য লিখিত ভাবে আবেদন করেছেন।
এ ব্যাপারে মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবদুল মালেক সাংবাদিকদের বলেন, মির্জাপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. সালাউদ্দিন আহমেদ বাবর আমার কাছে একটি আবদেনপত্র দিয়েছেন। অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সমস্যার সমাধান করা হবে।
জানা গেছে, ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত মির্জাপুর কলেজ একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ছিল। এইচএসসি শাখা, ডিগ্রি পাস কোর্স ও অনার্স কোর্স শাখায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার। স্থানীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. একাব্বর হোসেনের প্রচেষ্টায় কলেজটি অনার্স কোর্স চালু ও বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে রূপান্তর লাভ করে। সর্বশেষ গত ১২ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় কলেজটি সরকারিকরণের প্রজ্ঞাপন জারি হয়।
জানা যায়,বর্তমান অধ্যক্ষ মো. সালাউদ্দিন আহমেদ বাবরের চাকরির মেয়াদ শেষ হয় ২০১৭ খ্রিস্টাব্দের ১১ মার্চ। তার চাকরির মেয়াদ শেষ হলে কলেজ গভর্নিং বডির সিদ্ধান্ত ও সুপারিশ অনুযায়ী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশোধিত রেগুলেশন ২০১৫ এর ১৪(খ) ১ এর ধারা ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে অনুমোদন সাপেক্ষে তার চাকরির মেয়াদ ২০১৯ খ্রিস্টাব্দের ১১ মার্চ পর্যন্ত দুই বছরের জন্য পুনঃনিয়োগ দেওয়া হয়। বিধিমোতাবেক তিনি অতিরিক্ত দুই বছরের জন্য অধ্যক্ষর নিয়োগ পেয়ে দায়িত্বপালন করে আসছেন।
জানাগেছে, চলতি বছরের ২২ জুলাই থেকে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অধ্যক্ষ মো. সালাউদ্দিন আহমেদ বাবর পবিত্র হজ পালনরে জন্য স্বপরিবারে সৌদি আরব গেলে কলেজ গভর্নিং বডির সদস্যদের অবহিত করে কলেজের উপাধ্যক্ষ মিসেস খাদিজা ইয়াসমিনকে সাময়িক ভাবে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনের জন্য মৌখিক ভাবে নির্দেশ দিয়ে যান। পবিত্র হজ পালন শেষে তিনি গত ১৬ সেপ্টেম্বর কলেজে এসে ভাইস অধ্যক্ষ খাদিজা ইয়াসমিনকে দায়িত্ব ভার বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্ত ভাইস অধ্যক্ষ খাদিজা ইয়াসমিন বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে তাকে অধ্যক্ষের দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেওয়ায় কলেজে প্রশাসনিক কাজে জটিলতা দেখা দেয়। অধ্যক্ষ সমস্ত কাগজপত্র ও সিল আটকে রেখেছে। ফলে বন্ধ হয়ে যায় ৭২ জন শিক্ষক কর্মচারীর বেতন ভাতা। কলেজের নিরীহ শিক্ষক কর্মচারীরা সমস্যা সমাধানের জন্য শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষাসচিব, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে উপাধ্যক্ষ মিসেস খাদিজা ইয়াসমিন বলেন, কলেজ সরকারি হওয়ার প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ায় বর্তমান অধ্যক্ষ সালাউদ্দিন আহমেদ বাবর অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে পারেন না। কলেজে জটিলতা হতে পারে এ জন্য তাকে দায়িত্ব ভার বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে অধ্যক্ষ মো. সালাউদ্দিন আহমেদ বাবর বলেন, ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের ২৯ অক্টোবর কলেজ গভর্নিং বডির সভায় এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭ খ্রিস্টাব্দের ১ জানুয়ারি নির্দেশে আমার চাকরি ২০১৯ খ্রিস্টাব্দের ১১ মার্চ পর্যন্ত দুই বছরের জন্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। মির্জাপুর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মত সারাদেশে ২০টি কলেজের অধ্যক্ষ আমার মত দায়িত্ব পালন করে আসছেন। কলেজের দায়িত্ব পালন ও প্রশাসনিক কাজে কোন সমস্যা হচ্ছে না। উপাধ্যক্ষ নিজের ক্ষমতাবলে জটিলতা সৃষ্টি করেছেন বলে তিনি দাবি করেন।