অধ্যক্ষের পদ নিয়ে দ্বন্দ্বে যশোরের ঝিকরগাছার কায়েমকোলা কলেজের শিক্ষার পরিবেশ চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ আলী কদরকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিতে এক শিক্ষকের নেতৃত্বে কলেজে সন্ত্রাসী নিয়ে এসে শিক্ষকদের হুমকি-ধমকি, গালিগালাজ এমনকি মারপিট করার অভিযোগ উঠেছে।
এ প্রসঙ্গে কলেজটির প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ আলী কদর দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, ‘বহু কষ্টে কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেছি। কিন্তু প্রথম থেকেই অর্থনীতির শিক্ষক মাহবুবুর রহমান আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আসছেন। তিনি (মাহবুবুর রহমান) আমার বিরুদ্ধে ঝিকরগাছা থানায় প্রতারণার একটি মিথ্যা মামলাও করেছিলেন। যার ভিত্তিতে ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে ঝিকরগাছা উপজেলার তৎকালীন ইউএনওর নেতৃত্বাধীন অ্যাডহক কমিটি মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নুরুন্নাহার বেবিকে দায়িত্ব দেন।’
আলী কদর আরো বলেন, ‘আদালতে মামলাটি মিথ্যা ও আমি নির্দোষ প্রমাণিত হই। সে কারণে গত ২৯ জুন ম্যানেজিং কমিটির সভায় আমাকে স্বপদে পুনর্বহাল করা হয়।’
এ প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষের অভিযোগ, ৪ জুলাই তিনি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নুরুন্নাহার বেবির কাছ থেকে দায়িত্বভার বুঝে নেন। ৬ জুলাই কলেজে যোগদান করতে গেলে শিক্ষক মাহবুবুর রহমান স্থানীয় সন্ত্রাসীদের দিয়ে তার ওপর হামলা চালায়। এগিয়ে এলে কলেজশিক্ষক এসএম আজিজুর রহমানকে মারপিট ও তার জামা ছিঁড়ে ফেলা হয়।
বিষয়টি জানতে সরেজমিনে সোমবার (২২ জুলাই) কায়েমকোলা কলেজে গেলে সেখানে ঝিকরগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক ও মাগুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাককে পাওয়া যায়।
অধ্যক্ষ নিয়ে দ্বন্দ্বের বিষয় জানতে চাইলে শিক্ষক মাহবুবুর রহমান নিজেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দাবি করেন। তিনি দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, ‘আলী কদর একজন দুর্নীতিবাজ। তিনি আরেকটি মাদরাসায় সুপার হিসেবে চাকরি করেন। তার এখানে চাকরিই অবৈধ। সে কারণে এমপি সাহেব (যশোর-২ আসনের সাংসদ মেজর জেনারেল ডা. নাসির উদ্দিন) আমাকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছেন।’
জানা গেছে, অর্থনীতির শিক্ষক মাহবুবুর রহমান ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ১০ নভেম্বর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালনের অনুমতি চেয়ে যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে একটা আবেদন করেন। তার জবাবে বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অমল কুমার বিশ্বাস একই বছরের ১৫ নভেম্বর তাকে একটা পত্র [স্মারক নং-ক/অ৪৩২(০৩)] দিয়ে জানান, ‘আপনার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, অর্থ-আত্মসাৎ, অসদাচারণসহ অন্যান্য অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৩-০৪-২০১১ খ্রি. তারিখে প্রাক্তন গভর্নিংবডির সভাপতি আপনাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব হতে অব্যাহতি প্রদান করেন, বিধায় আপনার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন সংক্রান্ত আবেদন বিবেচনা করা গেল না।’
এ বিষয়ে মাহবুবুর রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি আর্বিটেশন করে ওই আদেশ বাতিল করিয়েছি।’
ডকুমেন্ট দেখতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দেখাতে পারবো; এখন কাছে নেই।’
কায়েমকোলা কলেজের ২১ শিক্ষকের মধ্যে ১৬ জন অভিযোগ করেন মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে ৫ শিক্ষক তাদের নানা হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন। এমনকি সন্ত্রাসীদের কলেজে এনে বসিয়ে রাখেন। কলেজে আসা যাওয়ার পথে অহরহ হুমকির শিকার হচ্ছেন তারা।
ঝিকরগাছা থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, ‘দলাদলির কারণে কলেজটির শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। যার শিকার শিক্ষার্থীরা।’
ওসি সবাইকে সহনশীল হওয়ার অনুরোধ জানান। একইসঙ্গে বহিরাগতরা যাতে ঝামেলা করতে না পারে সে বিষয়েও সাবধান করে দেন।
মাগুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, ‘আমরা চাই সামনে এগুতে। এখানে আমাদের সন্তানরাই পড়ে। স্থানীয় এমপিসহ সব পক্ষ মিলে বিষয়টি মিটিয়ে ফেলতে চাই।’
কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মুছা মাহমুদ দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, আলী কদরের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা আদালতে মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় তাকে স্বপদে বহাল করা হয়েছে। তিনিই বৈধ অধ্যক্ষ। অন্য কারও এ বিষয়ে কথা বলার সুযোগ নেই।’