গফরগাঁওয়ে একটি কলেজ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মোটা অঙ্কের নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কলেজের গভর্নিং বডির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ময়মনসিংহ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর এ অভিযোগ করা হয়। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতাও পাওয়া যায়।
গফরগাঁও হুরমত উল্লাহ কলেজের গভর্নিং বডির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ফজলুর রহমান অভিযোগ করে জানান, কলেজটির অধ্যক্ষ মানিক মিয়া মোটা অঙ্কের উৎকোচের বিনিময়ে গুরুতর অনিয়ম ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে চার বছর আগে অর্থাৎ ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে ৬ জন শিক্ষক নিয়োগ দেন। কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে যোগসাজশ করে নিয়ম-নীতির কোনো তোয়াক্কা না করে বিতর্কিত এ নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেন। এতে কলেজটিতে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ওই তারিখে মানবিক, বিজ্ঞান, বাণিজ্য এবং কারিগরি (বি-এম) শাখা চালু দেখিয়ে নিয়োগের নামে প্রায় ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়।
অভিযোগে ফজলুর রহমান জানান, মেধাহীন শিক্ষক লুলু আফরোজা হিসাববিজ্ঞান, মাসুদ আহমেদ কৃষি শিক্ষা, মাহিরুল ইসলাম পদার্থবিজ্ঞান, আতাউল্লাহ রসায়ন, শাহরিন মুস্তারি, রাফিয়াতুল রিফা গণিতসহ ৬ জন শিক্ষককে নিয়োগ দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণ অবৈধ। অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, কলেজের ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় হিসাববিজ্ঞান বিষয়ে উপজেলার জশরা গ্রামের রুবেল মিয়ার কাছ থেকে ৯০ হাজার টাকা ঘুষ নেন অধ্যক্ষ মানিক মিয়া। তাকে চাকরির আশ্বাস দিয়ে এক বছর বিনা বেতনে কলেজে ক্লাস করানো হয়। পরে তাকে নিয়োগ না দিয়ে পার্শ্ববর্তী ভালুকা উপজেলার এক মহিলার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ঘুষ নিয়ে নিয়োগ দেয়া হয়। শিক্ষক নিয়োগের এই কমিটির সদস্য হিসেবে দেখানো হয়েছে, গফরগাঁও সরকারি কলেজের অধ্যাপক মাইন উদ্দিন ও হাবিবুর রহমানকে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে কথিত নিয়োগ কমিটির এই দুই সদস্য জানান, হুরমত উল্লাহ কলেজের অধ্যক্ষ মানিক ও কলেজের শিক্ষক হারুন, নুরুল ইসলাম স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের মাধ্যমে সরকারি কলেজ হোস্টেল থেকে তাদের দু’জনকে ডেকে নিয়ে রাতের অন্ধকারে ভয়ভীতি দেখিয়ে শিডিউলবিহীন কাগজে স্বাক্ষর দিতে বাধ্য করেন।
এ ব্যাপারে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক শেখ মো. হাবিবুর রহমান বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিন তদন্ত করার জন্য গফরগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দীপক কুমার পাল জানান, ১২ মে নোটিশের মাধ্যমে উভয়পক্ষের বক্তব্য চাওয়া হয়। এতে কলেজের অধ্যক্ষ মানিক মিয়ার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ৬ জন শিক্ষক নিয়োগ ও তার ব্যাপক অনিয়ম, ঘুষ দুর্নীতির তথ্যপ্রমাণ তুলে ধরেন কলেজের গভর্নিং বডির সদস্য ফজলুর রহমান। অভিযোগের বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সত্যতা পাওয়া গেছে।
অভিযুক্ত অধ্যক্ষ মানিক মিয়া বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা মিথ্যা। সরকারি নিয়ম মেনে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আমি কাউকে হুমকি দিইনি। তিনি বলেন, শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান গফরগাঁও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার মাধ্যমে আমাকে নোটিশ দিয়েছেন। আমি তার জবাব দেব।