প্রাণঘাতী করোনার মারণ ছোবলে সারা বিশ্ব অস্থির হইয়া রহিয়াছে। বাংলাদেশেও ক্রমশ প্রকট হইয়া উঠিতেছে বিবিধ সমস্যা, ইহার মধ্যে অন্যতম বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রম! অবস্থার উন্নতি না ঘটিলে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা এবং বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকিবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে অনলাইনে ক্লাস, পরীক্ষা, মূল্যায়ন ও ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনার সিদ্ধান্ত লওয়া হইয়াছে। গুণমান বজায় রাখিয়া বেশকিছু শর্ত মানিয়া এই সকল কার্যক্রম পরিচালনা করিতে বলা হইয়াছে। শুক্রবার (৮ মে) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক সম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়।
সম্পাদকীয়তে আরও জানা যায়, তাহা ছাড়া চলমান সেমিস্টার শেষ করিতে অনলাইনের মাধ্যমে পরীক্ষা, খাতা মূল্যায়ন করিবার বিষয়টিও অনুমোদন করা হইয়াছে। করোনার কারণে সারা বিশ্ব অদ্ভুত এক ট্রান্সফরমেশনের মধ্য দিয়া চলিতেছে। বলা যায়, করোনার এক ধাক্কায় এই বিশ্বের অনেক কিছুই এখন ভার্চুয়াল হইয়া যাইতেছে। ইহার ভালোমন্দ উভয় দিকই রহিয়াছে। বিদ্যমান ভার্চুয়াল ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের কাছাকাছি বা সংস্পর্শে আসিতে পারেন না। শিক্ষকরা সরাসরি তাহার শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণও করিতে পারেন না। শিক্ষার্থীরা ভার্চুয়াল ক্লাসে সংযুক্ত হন ঠিকই; কিন্তু তিনি কম্পিউটার কিংবা ল্যাপটপের সামনে বসিয়া আছেন, নাকি বিছানায় শুইয়া রহিয়াছেন—শিক্ষক তাহাও নিয়ন্ত্রণ করিতে পারেন না। আবার শিক্ষক যেই সকল বিষয় আলোচনা করিতেছেন, তাহা যে শুধু শিক্ষার্থীই শুনিতেছেন, তাহা নহে। ভার্চুয়াল ক্লাসের ব্যাপারে কিছু গবেষণায় এই সকল চিত্র তুলিয়া ধরা হইয়াছে।
আসলে ক্লাসে পাঠদান হইতে সম্পূর্ণই আলাদা ভার্চুয়াল ক্লাস পদ্ধতি। এতদিন পড়ুয়াদের সহিত সরাসরি বা সামনাসামনি পড়াশোনায় শিক্ষকরা যতটা স্বাভাবিক ছিলেন, হঠাত্ অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষাদানে তাহারা প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হইয়াছেন। তাহা ছাড়া বহু শিক্ষকই পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনে ততটা পারদর্শী নহেন। স্কুলে পড়াইবার পূর্বে তাহারা বাড়িতে প্রস্তুতি লইয়া আসিতেন। এমনটাই তাহারা করিতেছেন দীর্ঘদিন ধরিয়া; কিন্তু অনলাইন ক্লাসের আগাম কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই আচমকাই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একটা বড়ো অংশ এই পদ্ধতিতে পড়াইতে যাইয়া অসুবিধার মুখে পড়িতেছেন। এই চিত্র বিশ্বের প্রায় সর্বত্র।
তবে আপাতত বসিয়া থাকিবার চাহিতে মন্দের ভালো হিসাবে ভার্চুয়াল ক্লাস চালাইয়া যাইতেই পারে। আর হঠাৎ সমস্যায় পড়িয়া জরুরি ভিত্তিতে প্রত্যেকেই বিদ্যমান সুবিধার দিকগুলি যতটুকু সম্ভব কাজে লাগাইবার চেষ্টা করিতেছেন। ঠেকিয়া শিখিতেছেন অনেক কিছু, যাহা করোনাকাল না আসিলে সহজে শিখা হইত না। যদিও ইউজিসি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় হইতে অনলাইনে কার্যক্রম চালানোর জন্য যেই নোটিশ দেওয়া হইয়াছে, তাহার প্রতিবাদ করিয়াছে কিছু ছাত্র সংগঠন।
তাহারা বলিতেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে অনলাইনে ক্লাসে অংশগ্রহণ করা এবং পরীক্ষা দেওয়া মোটেও সম্ভবপর নহে। কারণ অনেকেই করোনার ছুটির প্রথম দিকে গ্রামের বাড়িতে যাইয়া আটকা পড়িয়াছেন, যেইখানে উচ্চগতির ইন্টারনেট নাই। তাহা ছাড়া বিভিন্ন ইউনিভার্সিটি সেমিস্টার ফি জমা দেওয়ার যেই নির্দেশ দিয়াছে, তাহা এই করোনার দুর্যোগকালে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো। আমরা আশা করিব, ছাত্রদের এই সকল সমস্যাও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করিয়া দেখিবেন। তবে একটি সহজ ও সহজলভ্য আধুনিক ডিজিটাল পদ্ধতির সহিত খাপ খাওয়াইয়া নেওয়ার এখনই উত্তম সময়।