ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের বসুন্ধরা শাখার নবম-দশম ও একাদশ শ্রেণির অনুমোদন নেই। নিম্ন-মাধ্যমিক অর্থাৎ ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের অনুমোদন রয়েছে। অথচ চলতি বছর বোর্ডের অনুমোদন ছাড়াই বসুন্ধরা শাখায় একাদশ শ্রেণি চালু করেছে। আর কয়েকবছর যাবত শাখাটিতে চলছে নবম-দশম শ্রেণি। শিক্ষাবোর্ডের একাধিক সূত্র দৈনিক শিক্ষাডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
প্রতিষ্ঠানটির মূল ক্যাম্পাসের প্রতিটি শ্রেণিতে (প্রভাতী ও দিবায়) মোট ৯টি সেকশন রয়েছে। সে হিসাবে দশম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ৯০টি সেকশন। এছাড়া বসুন্ধরা ও আজিমপুরের প্রতি শ্রেণিতে ৬টি হিসাবে ৬০টি এবং ধানমন্ডিতে ৪টি করে মোট ৪০টি সেকশন রয়েছে। এছাড়া ইংরেজি ভার্সনে ৪টি সেকশন রয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণি তো আছেই। স্কুলের কোনো কোনো ক্লাসরুমে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৮০ জনেরও বেশি। ফলে এসব শ্রেণিতে পাঠদান হয় না বললেই চলে। শ্রেণিকক্ষে গাদাগাদি করে বসতে হয় ছাত্রীদের। পাঠদানের পরিবেশই থাকে না শ্রেণিকক্ষে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানিয়েছেন, এত সংখ্যক শিক্ষার্থীকে একসঙ্গে পাঠদান সম্ভব নয়। তিনি প্রতি সেকশনে নির্ধারিত সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তির পরামর্শ দেন। ভর্তিতে অভিভাবকদের চাপ এবং গভর্নিং বডির অতি আগ্রহের কারণেই শিক্ষার্থী সংখ্যা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা।
চলতি শিক্ষাবর্ষেও দুই শতাধিক অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে ভিকারুননিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজে এমন অভিযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে পরিচালনা কমিটির সভাপতিসহ একাধিক সদস্য মূল ভূমিকা রাখছেন। বিভিন্ন মহল থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা অধিদপ্তরে এমন একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছিল বছরের শুরুতেই।
প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে মূল ক্যাম্পাস ছাড়াও ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে বসুন্ধরায়, ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে ধানমন্ডিতে এবং ২০০৭ খ্রিস্টাব্দে আজিমপুরে শাখা চালু হয়। ২০০৮ খ্রিস্টাব্দে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শিক্ষা ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান ভিকারুননিসাকে আর কোনও শাখার অনুমোদন না দেয়ার নির্দেশ দেন।
স্কুল পরিচালনা নীতিমালায় কোনো শাখা ব্যবস্থা চালুর বিধান না থাকলেও ভালো স্কুল বিবেচনায় ‘স্কুলের শাখা’ অনুমোদন দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন ঢাকা বোর্ডের উপ-কলেজ পরিদর্শক রবিউল আলম।
এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির নিউ বেইলী রোডের মূল শাখা ও অন্যান্য তিন শাখার কোনটিতেই পর্যাপ্ত স্যানিটেশন সুবিধা নেই। ছাত্রীদের জন্য স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি। এমন তথ্য উঠে এসছে ঢাকা বোর্ডের তদন্তে।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের এবং তার শাখাসমূহে টয়লেট ও স্যনিটেশন ব্যবস্থা উন্নতকরণ ও শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিতকরণের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির সদস্য ড. মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন দাখিল করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ১৮ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে একটি চিঠি দিয়ে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। এ প্রেক্ষিতে গতমাসে প্রতিষ্ঠানটির মূল শাখাসহ সবগুলো শাখা পরিদর্শন করেন ঢাকা বোর্ডের উপ কলেজ পরিদর্শক রবিউল আলমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি। আজ রোববার (৯ ডিসেম্বর) ভিকারুননিসা নূন স্কুলের স্যানিটেশন ব্যবস্থার বেহাল দশার কথা দৈনিক শিক্ষাকে জানিয়েছেন একজন তদন্ত কর্মকর্তা। শিগগিরই তদন্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা হবে।
জানা যায়, স্বাস্থ্যকর পরিবেশ তো নেই। নেই পর্যাপ্ত টয়লেট। পরিদর্শনে গেলে তড়িঘড়ি করে টয়লেট পরিষ্কারের ব্যবস্থা করে কর্তৃপক্ষ। তিন শতাধিক ছাত্রীর জন্য মোটে তিনটি করে টয়লেট প্রতিটি ফ্লোরে।