শুরু হচ্ছে বাঙালির প্রাণের উৎসব অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২০। রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৩টায় মাসব্যাপী গ্রন্থমেলা উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মুজিববর্ষ উপলক্ষে এবারের বইমেলা উৎসর্গ করা হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।
বইমেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী মেলা পরিদর্শন করবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।
গ্রন্থমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ বঙ্গবন্ধু রচিত তৃতীয় বই ‘আমার দেখা নয়াচীন’-এর আনুষ্ঠানিক প্রকাশনা। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করবেন। বইটি প্রকাশ করেছে বাংলা একাডেমি।
এ বিষয়ে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলাজুড়ে উদ্ভাসিত হবেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালির চেতনা, স্বপ্ন ও আগামী দিনের কার্যক্রম প্রতিভাত করতে এবারের মেলা উৎসর্গ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধুকে। বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত বঙ্গবন্ধুর ওপর রচিত ২৬টি গ্রন্থ নিয়ে মাসজুড়ে আলোচনা হবে।
এবার সর্ববৃহৎ পরিসরে আয়োজিত হচ্ছে গ্রন্থমেলা। শুধু পরিসর নয়, এবার বেড়েছে প্রকাশনা সংস্থার সংখ্যাও। শনিবার গ্রন্থমেলার সর্বশেষ প্রস্তুতি ঘুরে দেখেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী।
গ্রন্থমেলা ঘুরে দেখা যায়, স্টল ও প্যাভিনিয়নের নির্মাণকাজে এবং মেলার বিন্যাসে নান্দনিকতার ছাপ রয়েছে। বৃহৎ পরিসর হওয়ায় বইপ্রেমীরা এবার স্বাচ্ছন্দ্যে মেলায় ঘুরতে এবং বই কিনতে পারবেন।
এবার একুশে গ্রন্থমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে প্রায় আট লাখ বর্গফুট জায়গায়। একাডেমি প্রাঙ্গণে ১২৬টি প্রতিষ্ঠানকে ১৭৯টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৩৪টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৯৪টি ইউনিটসহ মোট ৫৬০টি প্রতিষ্ঠানকে ৮৭৩টি ইউনিট এবং বাংলা একাডেমিসহ ৩৩টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ৩৪টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
এবার লিটল ম্যাগাজিন চত্বর স্থানান্তরিত হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে। ১৫২টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দ এবং ছয়টি উন্মুক্ত স্টল দেয়া হয়েছে। একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে বাংলা একাডেমির দুটি প্যাভিলিয়ন, চার ইউনিটের দুটি, একাডেমির শিশু-কিশোর উপযোগী বইয়ের জন্য একটি এবং একাডেমির সাহিত্য মাসিক ‘উত্তরাধিকার’-এর একটি স্টল থাকবে।
এবারও শিশুচত্বর মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে। এই কর্নারকে শিশু-কিশোরদের বিনোদন ও শিক্ষামূলক উপকরণে সজ্জিত করা হয়েছে। মাসব্যাপী গ্রন্থমেলায় এবারও ‘শিশুপ্রহর’ থাকছে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকছে। গ্রন্থমেলার প্রচার কার্যক্রমের জন্য তথ্যকেন্দ্র থাকবে বর্ধমান ভবনের পশ্চিম বেদিতে এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। এ ছাড়া মেলায় আসা মানুষের বসার স্থান তৈরি করা হয়েছে। থাকছে ফুড কোর্টসহ বইপ্রেমী ও দর্শনার্থীদের জন্য নানা আয়োজন।
গ্রন্থমেলায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে প্রবেশের জন্য তিনটি পথ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য ছয়টি পথ থাকবে। বিশেষ দিনগুলোতে লেখক, সাংবাদিক, প্রকাশক, বাংলা একাডেমির ফেলো এবং রাষ্ট্রীয় সম্মাননাপ্রাপ্ত নাগরিকদের জন্য প্রবেশের বিশেষ ব্যবস্থা করা হবে।
গ্রন্থমেলার প্রবেশ ও বের হওয়ার পথে পর্যাপ্তসংখ্যক আর্চওয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে বাংলাদেশ পুলিশ, র্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নিরাপত্তাকর্মীরা। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার জন্য মেলার এলাকাজুড়ে তিন শতাধিক ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। গ্রন্থমেলা সম্পূর্ণ পলিথিন ও ধূমপানমুক্ত। মেলা প্রাঙ্গণ ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় নিরাপত্তার স্বার্থে থাকছে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা।
আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে মেলা। তবে আজ সর্বসাধারণের জন্য মেলার দ্বার খুলবে বিকেল ৫টায়। ছুটির দিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা এবং ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মেলা চলবে।